ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাতাসে ছাতিম ফুলের সুবাস

মায়াবী ঘ্রাণ, সাদা ফুলে ঢাকা গাছ- শীতের আগমনী বার্তা

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২২ অক্টোবর ২০১৯

মায়াবী ঘ্রাণ, সাদা ফুলে ঢাকা গাছ- শীতের আগমনী বার্তা

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ সময় এখন ছাতিম ফুলের। বাতাসে ছাতিমের মৌ মৌ সুবাস। সেই ফুলের সুবাসে মুগ্ধ পথচারী। গাছভরা ছাতিম ফুল দেখে চোখ জুড়ায় পথচারীরা। তবে এমন ফুলের মেলা শহরের খুব কম এলাকাতেই দেখা যায়। ‘শ্যামলী নিসর্গ’ নামক গ্রন্থে লেখক দ্বিজেন শর্মা লিখেছেন, ‘ছাতিমই বোধহয় একমাত্র বৃক্ষ যে হেমন্তের অঙ্গনে দাঁড়িয়ে প্রস্ফূটন আর সুগন্ধের পল্গাবনে এই দূরন্ত শীতকে অভ্যর্থনা জানায়। প্রস্ফূটনের এমন অবারিত উচ্ছ্বাস, ফুলের অক্লান্ত নির্ঝর এবং দূরবাহী প্রবল উগ্র গন্ধের ঐশ্বর্য আর কোন হৈমন্তী তরুরই নেই।’ হেমন্তে শুভ্র-সফেদ ফুলে ঢাকা এমন মোহনীয় অবস্থা বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য। একসময় গ্রামের রাস্তার পাশে, বনে-জঙ্গলে অহরহ এই গাছ থাকলেও বর্তমানে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। দূর থেকে ভেসে আসা সুগন্ধ শুঁকে গাছটি খুঁজে নিতে হয়। নির্বিচারে গাছ কেটে বিক্রি করা বা বসতবাড়ি নির্মাণের ফলে অন্যান্য গাছের সঙ্গে উজাড় হতে হতে এখন ছাতিম গাছ খুব একটা চোখে পড়ে না। গ্রামের মানুষের কাছে ছাতিম গাছ ‘ছাইতান’ নামে পরিচিত। পূর্ণ বয়স্ক একটি ছাতিম গাছ বেশ বড় হয়। ছাতিম গাছের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে বেশ কয়েকবছর আগে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ডিগ্রী কলেজের প্রবেশমুখে ব্রিজের পাশে একটি ছাতিম গাছ রোপণ করা হয়। এটি রোপণ করেন বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। বৃক্ষপ্রেমী ওই চেয়ারম্যান জানান, তার রোপিত ছাতিম গাছে এ বছর প্রচুর ফুল ধরেছে। বিকেলের সূর্য যখন গোধূলিতে তখন থেকেই একটু একটু করে ছড়াতে থাকে ছাতিম ফুলের মায়াবী ঘ্রাণ। সাদা ফুলে পুরো গাছ ঢেকে গেছে। ছাতিম ফুলের সুগন্ধি বয়ে আনছে শীতের আগমনী বার্তা। এই গাছের কা-গুলো ছাতার মতো বেষ্টিত হয়ে থাকে। হয়ত এ কারণেও গাছটির নাম ছাতিম হয়ে থাকতে পারে। সাতটি পাতা একসঙ্গে যুক্ত থাকে, যা দেখতে অনেক দৃষ্টিনন্দন। এজন্য ছাতিমের সংস্কৃত নাম ‘সপ্তপর্ণী’ বা ‘সপ্তপর্ণা’। গাছটি ৪০ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। এর বাকল দিয়ে দুধের মতো সাদা কষ বের হয়। যা অত্যন্ত তেঁতো। ছাতিমের নরম কাঠ ব্লাকবোর্ড, পেনসিলসহ নানা রকম আসবাব তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। দিয়াশলাইয়ের কাঠি তৈরিতেও ছাতিম গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। এজন্য শিমুলের মতো এ গাছটিও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ছাতিমের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। ছাতিমের ছাল জ্বরের উপশম করে ও রক্তচাপ কমায়। এছাড়া পেটের পীড়ার জন্যও ছাতিম গাছের ছাল উপকারী। এই গাছের ছাল ও আঠা জ্বর, হৃদরোগ, হাঁপানি, আমাশয় প্রভৃতি রোগে বিশেষভাবে কার্যকর। ভেষজশাস্ত্রে ছাতিম গাছের বেশ কদর রয়েছে।
×