ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐক্যফ্রন্ট শীর্ষ নেতার সঙ্গে তারেকের টেলিফোনে আলাপ

প্রকাশিত: ১৩:২২, ২১ অক্টোবর ২০১৯

 ঐক্যফ্রন্ট শীর্ষ নেতার সঙ্গে তারেকের টেলিফোনে আলাপ

শংকর কুমার দে ॥ ঐক্যফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে টেলিফোনে কথোপকথন হয়েছে লন্ডনে অবস্থানকারী সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার। টেলিফোনে তারেক জিয়া ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ, সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলা, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত ও তার মুক্তি দাবি এবং জামায়াতের প্রসঙ্গ আলাপ-আলোচনা করেছেন। তারেক জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ-আলোচনার পর ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বৈঠকে মিলিত হয়ে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে সরকারের কাছে অনুমতির আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়। টেলি আলাপের মাধ্যমে লন্ডন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই সরকারের পতন ঘটাতে ছক কষা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ২২ অক্টোবর ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের আগে ঐক্যফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে টেলি আলাপ করেছেন লন্ডনে অবস্থানকারী তারেক জিয়া। লন্ডন থেকে তারেক জিয়া টেলি আলাপ করেন প্রায় ১৭ মিনিট। এই ১৭ মিনিটের টেলি আলাপে সরকারের পতন ঘটাতে ২২ অক্টোবরের জনসভার এজেন্ডাসহ ঐক্যফ্রন্টকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, ফ্রন্টের পরিধি বৃদ্ধি, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করা, জামায়াতের প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তারেক জিয়ার টেলি আলাপের প্রস্তাবের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা। তারেক জিয়া ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাকে বলেন, আপনি মুরুব্বি। আপনার নেতৃত্বের পেছনেই আমরা সব সময় আছি। তারেক জিয়া এটাও বলেছেন, বিএনপি সবসময় আপনার সঙ্গেই থাকবে। আপনি যেভাবে কর্মসূচী দিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে চান সেভাবে থাকবে। তারেক জিয়ার ২২ অক্টোবরের আগে টেলি আলাপটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। এরপরই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ার বিষয়ে বৈঠক করেন। রবিবার দুপুরে মতিঝিলে কামাল হোসেনের চেম্বারে তার সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি আলোচনা করে তার সাক্ষাত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকের পর ফ্রন্টের নেতা জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, আমাদের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। জাতি আজকে উৎকণ্ঠিত যে কোন সময়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। উনার একটা হাত অবশ হয়ে গেছে, উনি খেতে পারেন না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটা প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব- আমরা উনাকে দেখতে যেতে চাই, অবস্থাটা কী- এটা জানতে চাই। বৈঠকের ঘণ্টাখানেক পর বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের প্যাডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বরাবর চিঠি যাবে আ স ম আবদুর রবের স্বাক্ষরে।’ চিঠি লেখা হয়ে গেছে। আজকেই (রবিবার) তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। গত ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন আছেন বেগম খালেদা জিয়া। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, টেলি আলাপে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত পাওয়া গেলে সাক্ষাত শেষে তার মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছেন তারেক জিয়া। আর সাক্ষাত না পাওয়া গেলেও তার মুক্তির দাবিতে জোরালো বক্তব্য তুলে সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনের আহ্বান জানানোর প্রস্তাব করেছেন লন্ডন প্রবাসী তারেক জিয়া। তার অনুরোধ ছিল জামায়াতের বিষয়টি যেন ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে উত্থাপিত না হয়। ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতাই মনে করেন বিএনপির উচিত হবে, জামায়াত ছেড়ে দেয়া। জামায়াতের জোট থেকে বিএনপিকে বেরিয়ে আসার কথা বলছে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে তারেক জিয়া মনে করেন, জামায়াত সঙ্গে ছেড়ে দিলে এটাতে শুধু বিএনপি নয়, ঐক্যফ্রন্টও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জামায়াত যেহেতু ঐক্যফ্রন্টের সদস্য নয়। কাজেই ঐক্যফ্রন্টে এই বিষয়টি না তোলাই যৌক্তিক। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা টেলি আলাপে জামায়াতের প্রশ্নে তারেকের সঙ্গে একমত হননি। কিন্তু জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর তারেক জিয়া। কারণ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আবারও আগুন সন্ত্রাসের মতো ঘটনা ঘটাতে পারবে জামায়াত-শিবির, যা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে সম্ভবপর নয় বলে জানান তিনি। টেলি আলাপে তারেক জিয়া ঐক্যফ্রন্টের পরিধি বাড়ানো, সবাইকে নিয়ে সরকারবিরোধী ঐক্য করার মত দিয়েছেন। প্রকারান্তরে তারেক জিয়া জামায়াতসহ মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক দলগুলোকেও এর মধ্যে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। কারাবন্দী বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রকাশ্যে মুখ খোলার অনুরোধ করেছেন তারেক জিয়া। বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি গণফোরামের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উঠলে ভাল হয়। জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, গণফোরামের অনেক নেতাই বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সামনে এনে আন্দোলনকে বেগবান করে সরকারের পতন ঘটানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে টেলি আলাপে মতামত দিয়েছেন তারেক জিয়া। তিনি টেলি আলাপে বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম অগ্রাধিকার ইস্যুগুলোর মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি থাকা উচিত। ঐক্যফ্রন্টকে ঘিরেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার টেলি আলাপের পর আওয়ামী লীগের জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যকে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অভিযোগের পক্ষে বড় প্রমাণ হিসেবে দেখছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন। রবিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির এক বৈঠকের পর সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কামাল বলেন, দেরিতে হলেও উনি (রাশেদ খান মেনন) এটা করেছেন। আমি খুশি। এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আগের দিন শনিবার নিজের জেলা বরিশালে ওয়ার্কার্স পার্টির এক সভায় মেনন বলেন, আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ। ঐক্যফ্রন্ট ২২ অক্টোবর সমাবেশ করার আগেই ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার পেছনে লন্ডন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের কোন ছক কষা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা।
×