ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে ফ্ল্যাট কিনে বিপাকে ৩৮ ক্রেতা

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ২০ অক্টোবর ২০১৯

কক্সবাজারে ফ্ল্যাট কিনে বিপাকে ৩৮ ক্রেতা

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটন এলাকায় লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রি দিচ্ছে না প্রতারক চক্র। জায়গার মালিক ও ডেভেলপার কোম্পানি গোপন আঁতাত করে ৩৮টি ফ্ল্যাটের মালিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে হয়রানির শিকার ৩৮ ফ্ল্যাট মালিক প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। জানা যায়, শহরের কলাতলী সড়ক লাগোয়া হোটেল লংবীচের সম্মুখে ১৩ নম্বর প্লটের মালিক দেলোয়ার হোসেন চট্টগ্রামের কনফিগার ডেভেলপার্স লিমিটেডের মালিক খোরশেদ আলম অপুর সঙ্গে দালান নির্মাণের চুক্তিবদ্ধ হয়। ডেভেলপার কোম্পানি লোভনীয় অফার দিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রয় করার বিজ্ঞাপন প্রচার করলে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ী ও অবসরে যাওয়া ৩৮ চাকরিজীবী এক বা একাধিক ফ্ল্যাট নগদমূল্যে ক্রয় করেন। প্রতিজন ফ্ল্যাটের মালিক ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকা হারে বিনিয়োগ তথা ফ্ল্যাটের ধার্যকৃত সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করে প্রায় ৪ বছর পূর্বে থেকে ফ্ল্যাট বুঝে নেন। তবে জায়গার মালিক ও ডেভেলপার কোম্পানি ছলচাতুরি করে ফ্ল্যাট ক্রয়কারী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রি দেয়নি। গত চার বছর ধরে ফ্ল্যাট ক্রয়কারীগণ নিজেদের নামে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি নিতে জায়গার মালিক দেলোয়ার হোসেন ও কনফিগার ডেভেলপার কোম্পানির মালিক খোরশেদ আলম অপুর নিকট ধর্ণা দিয়ে আসছেন। প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে গত চার বছরেও জমি (ফ্ল্যাট) রেজিস্ট্রি নিতে না পেরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ফ্ল্যাট মালিকরা নিরুপায় হয়ে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি পেতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েও আবেদন দাখিল করেছেন। এদিকে জমির মালিক দেলোয়ার হোসেন ওই দালানে (দেলোয়ার প্যারাডাইস) তার মালিকানাধীন ফ্ল্যাটগুলোতে (৩৮টি) বিদ্যুত লাইন চালু রেখে গত ১ অক্টোবর ৩৮টি ফ্ল্যাটের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। অমানবিকভাবে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ওসব ফ্ল্যাটে গরমে অতিকষ্টে দিন যাপন করছে ফ্ল্যাট মালিকদের কেউ কেউ। অথচ তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে বিদ্যুত বিল আদায় করে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফ্ল্যাট মালিকরা। অভিযোগ রয়েছে, দেলোয়ার প্যারাডাইসের মালিক দেলোয়ার হোসেনের ওই দালানে বিদ্যুত বিল বাবদ অন্তত ৬ লক্ষাধিক টাকা বকেয়া পড়ে আছে। বিদ্যুত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানকে বশে রাখায় ওই দালানে কোন ধরনের অভিযান চালানো হয় না। সরকারের মোটা দাগের বিদ্যুত বিল বকেয়া পড়ে থাকলেও কক্সবাজার বিদ্যুত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে জানা গেছে। ফ্ল্যাট মালিকরা বলেন, জমি মালিক দেলোয়ার হোসেন বিভিন্ন স্থানে বলে বেড়াচ্ছেন যে, একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা তার আপনজন। এ কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও ভাল রেজাল্ট পাবে না। সচেতন মহল বলেন, সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কমতি নেই মোটেও। শহরে কতিপয় চিহ্নিত প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ব্যবসায়ীরা সর্বশান্ত হয়ে পড়লে বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। বিনিয়োগকারী অর্থাৎ দেলোয়ার প্যারাডাইসের ফ্ল্যাট মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, জমি মালিক দেলোয়ার দাপট দেখিয়ে তাদের বলেছেন, সমস্ত ফ্ল্যাট তার কাছে মাসিক ভাড়ায় দিতে হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের নামমাত্র ভাড়া প্রদানে কোন ধরনের প্রতিবাদ বা দ্বিমত পোষণ চলবে না। মালিকগণ তাকে (দেলোয়ার) ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া না দেয়ায় কেয়ারটেকারসহ কয়েকটি ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে মালিক পক্ষের প্রতিনিধিদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
×