ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

ছাত্রলীগকে তার ঐতিহ্যের ধারায় থাকতে হবে

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

ছাত্রলীগকে তার ঐতিহ্যের ধারায় থাকতে হবে

কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আবরার হত্যা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে যে অনভিপ্রেত পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে তার সবটুকু দায় চাপানো হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ওপর। ছাত্রলীগ অনেক ক্ষেত্রে দায়ী সন্দেহ নেই, আরসব ধোয়া তুলসীপাতা, এটিও বলা যাবে না। রাজনীতিবিমুখ ভাল ছাত্র বলে যারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা হল, ক্যান্টিন, ডাইনিং, ক্লাস, লাইব্রেরিতে কাটিয়ে দিয়েছেন, টিএসসিতে যাননি, বড়জোর খেতে গেছেন, অপরাজেয় বাংলা বা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কবিতা পাঠের আসর বা সমাবেশে যাননি, বক্তৃতা শোনেননি, বক্তৃতা দেননি, বিশেষ বিশেষ দিবসে সংকলন বের করেননি, কবিতা-প্রবন্ধ রচনা করেননি, তারাই ভাল ছাত্র। পরীক্ষায় ভাল করেছেন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হচ্ছেন, একদিন উচ্চতর গবেষণা বা পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের লক্ষ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, কিন্তু আর দেশে ফিরে আসেননি, কর্মস্থলে যোগদান করেননি, যার সুবাদে তিনি বিদেশে পিএইচডি করার স্কলারশিপটি পেয়েছেন, তা ভুলে গিয়ে বিদেশেই জব নিয়ে দিব্যি সুখের জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন, তিনি ভাল ছাত্র নিঃসন্দেহে। তাকে সেলাম। কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে বিদেশে গেছেন, আর ফিরে আসেননি, কোন বিদেশিনীর পানি গ্রহণ করে জঞ্জালমুক্ত জীবনের স্বাদ নিচ্ছেন, পরিবেশ টেনশনমুক্ত, ঝুঁকিমুক্ত জীবন কাটাচ্ছেন, তিনিও ভাল ছাত্র নিঃসন্দেহে। তাকে সেলাম। জেএসসি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও দ্বিতীয় হননি, বিসিএস বা অন্য কোন কম্পিটিটিভ পরীক্ষায়ও নেভার স্টুড থার্ড-ফোর্থ, স্বাভাবিকভাবেই অফিসের বড় বস, সুখের জীবন, বড় বেতন, গাড়ি-বাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ, বেতনের ওপর উপরি আয়, তারা ভাল ছাত্র তো বটেই, দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকও, অফিস থেকে ফিরে ড্রইংরুমে বসে বলছেন ডার্লিং, এই কতগুলো লোক রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করে চলেছে, সিলেট-চট্টগ্রামের চায়ের কাপে ফুঁ দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে চুমু দিয়ে বলছেন-তোমার কথামতো ছেলেমেয়ে দুটোকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করালে তারাও উচ্ছন্নে যেত, কি বল? এরাও ভাল ছাত্র ছিল। এদেরও সেলাম। আমার কাছে ভাল ছাত্রের একটি সংজ্ঞা আছে- ‘বাবুর ঘরে পুত্র সন্তান আসিয়াছে, আযান দাও, উলু দাও...। সন্তান বড় হইতে লাগিল, স্কুলে পাঠানো হইল, প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হইতে হইতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকাইয়া বিলেত হইতে ব্যারিস্টার হইয়া বার-এ জয়েন করিলেন এবং একদিন জজকোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রীমকোর্টে জালিয়াতি করিয়া ৬০ বা ৬৫ বছরে রিটায়ার করলেন, এখন আরও রুটিন লাইফ, এভাবে বয়স কমাইতে কমাইতে একদিন রমনা কিংবা গুলশান পার্কে বুকে হাত দিয়া লুটাইয়া পড়িলেন, হাতের লাঠিটি অদূর পড়িয়া রহিল। তিনিও ভাল ছাত্র। তাকেও সেলাম। কিন্তু গুটিকতেক বাক্য আধা-বায়োগ্রাফি ফিনিশড। একটি আনফিনিশড অটোবায়োগ্রাফি লিখতে হলে এমন একজন ছাত্র হতে হবে যিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হতে পেরেছিলেন কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ল’-এর মাস্টার্স ডিগ্রীটি ফিনিশড করতে পারেননি। করবেন কী করে? সারা জীবন তো জেলে কাটালেন, তাতেও তৎকালীন প্রশাসনের স্বস্তি এলো না, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে তবেই শান্তিতে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। এ রকম ভাল ছাত্র চাই। যদিও এ রকম ভাল ছাত্র এসেছিলেন হাজার বছরের লড়াই-সংগ্রাম প্রক্রিয়ায়। এবং আগামী হাজার বছরেও আসবে বলে মনে হয় না। কারণ, বাংলাদেশ তো দু’বার স্বাধীন হবার সুযোগ নেই, ৩০ লাখ জীবন দান, ৫ লক্ষাধিক মা-বোনের ওপর নির্যাতনেরও সুযোগ নেই, এখন আর সেই ভিনদেশী শাসক নেই। আসবে না কোনদিন। বহুদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নির্বাচন হলো এবং নির্বাচনে সাধারণ ছাত্র ব্যানারে ঠচ (সহসভাপতি) নির্বাচিত হয়েছেন নুর, ভিপি নুর নামে একজন সাধারণ ছাত্র তিনি আজ পরিচিত। সম্প্রতি একটি অনলাইন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তার একটি বক্তৃতা শুনছিলাম- তিনি ছাত্রলীগের নাম নিয়ে বলছেন, এই সংগঠনটি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের লেজুড়বৃত্তি করছে। অপরাপর ছাত্র সংগঠনের নাম না নিয়ে বলছেন, তারাও। ভাল কথা। আবরার ফাহাদ (বুয়েট ছাত্র) হত্যায় যিনি সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছেন এবং প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হয়নি, পুলিশকে দিয়ে একে একে সকল দায়ী ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করিয়ে দ্রুত বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তো আমাদেরই প্রিয় মানুষ। আমার জানা মতে দায়ী সকলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অচিরেই পুলিশের চার্জশীটও আদালতে যাবে। ভিপি নুরের বক্তৃতায় কতগুলো কথা এসেছে... ১. ছাত্রলীগ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের লেজুড়বৃত্তি করছে। ২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আওয়ামী লীগ সরকারের লেজুড়বৃত্তি করছে। ৩. সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। ৪. সরকার তিস্তার পানি সঙ্কটের সুরাহা না করে ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিয়েছে। ৫. সরকার নির্বাচিত নয়। ৬. পুলিশ দিয়ে নির্বাচন করিয়েছে। ৭. সরকারের নৈতিক ভিত্তি নেই বলেই তারা বহির্বিশ্বের সাপোর্ট থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান করতে পারছে না। ৮. অথচ ১৯৭৮ সালে এবং ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান হয়েছিল? তখন ক্ষমতায় ছিল মিলিটারি জিয়া এবং মিলিটারি খালেদা। ৯. ছাত্রলীগ মাফিয়া। ১০. ছাত্রলীগ মনস্টার। ভিপি নুর নিজেকে লেজুড়বিহীন ছাত্রনেতা মনে করেন। স্বাধীন সার্বভৌম। ভাল কথা। সবাই তার বক্তৃতা সাপোর্ট করবে। কিন্তু তিনি ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে যেসব মন্তব্য করেছেন তাতে তার নিরপেক্ষ বা সাধারণ ছাত্র পরিচয় নিশ্চিত করে না। বরং বাংলাদেশের সকল সঙ্কটের হোতা মিলিটারি জিয়া এবং তার পত্নীর সরকারের (আমি লেজুড়বৃত্তি বলব না, এটি অভদ্র-অসভ্য শব্দ) আনাড়ি সমর্থক বলেই প্রমাণ দেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন হয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ল’-তে মাস্টার্স ডিগ্রীতে ভর্তি হন। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে তাকে গ্রেফতার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে বলা হয়, তিনি আর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিলে তাকে মুক্তি দেয়া হবে এবং ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু তিনি মুচলেকা দেননি, জরিমানাও (১৫ টাকা) দেননি, জেল খেটেছেন, ছাত্রত্বও চলে গেছে, ল-ডিগ্রী হয়নি। আন্দোলনের স্বার্থে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের জন্ম দেন। লক্ষ্য ৪৭-এ যে পাকিস্তান হয়েছে তা বাঙালীদের জন্য নয়। তার ভাষায়-মাউড়াদের সঙ্গে থাকা যাবে না; তাই আমাদের নিজস্ব রাষ্ট্র বানাতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় এক বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের জন্ম দেন। কোন বড় কাজ প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন ছাড়া হয় না। বড় কাজের জন্য ডেফিনিট টার্গেট, ডেফিনিট আইডিওলজি, ডেফিনিট রাজনীতি এবং সর্বোপরি ডেফিনিট সংগঠন অপরিহার্য। অবশ্য বঙ্গবন্ধু তো একজনই- হাজার বছরে এসেছেন, আর আসবেন না। ভিপি নুরের মেন্টাল ফ্যাকাল্টি তারই একটি বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি বলেছেন, সরকার যে কোন আন্দোলনে ১৪২ বার শিবির দেখেন। কোটাবিরোধী আন্দোলন উল্লেখ করে কথাটি বলেছেন। কিন্তু কোটাবিরোধী আন্দোলন একপর্যায়ে পরিষ্কার হয়ে যায়, আন্দোলনটি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটাবিরোধী ছিল অর্থাৎ পরোক্ষ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কথাটি বলেনি এজন্য যে, জনগণ মেনে নেবে না। কারণ, ১৯৭১ সালেও বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি এবং তার মধ্যে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে বা যুদ্ধে গেছে বড়জোর তিন লাখ। হ্যাঁ, সাধারণ জনগণ সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের শেল্টার দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, অর্থাৎ সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে। কিন্তু সাড়ে ৭ কোটির বাকি ৭ কোটি ৪৭ লাখ অস্ত্র হাতে নেননি। তাদেরই একটা অংশ রাজাকার-আলবদর-আলশামস হয়েছে এবং পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারির পদলেহন করেছে। পাকিস্তানীদের গণহত্যার সহযোগী ছিল, নারী নির্যাতনেও যোগ দিয়েছে। যে কারণে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু জামায়াত-মুসলিম লীগসহ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে দিয়েছিলেন, নিষিদ্ধ করেছিলেন মদ-জুয়া-হাউজিসহ সকল প্রকার জুয়া। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করে মিলিটারি জিয়া ক্ষমতায় এসে আবার জামায়াত-শিবির-মুসলিম লীগসহ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নামে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালু করেন, আবার মদের লাইসেন্স দেন। সেই ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং মদ-জুয়ার বংশধর আজও আছে বিএনপির সঙ্গে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করছে। প্রথমে লেজুড়বৃত্তি, মাফিয়া, মনস্টার শব্দগুলো অগণতান্ত্রিক-একনায়কত্ব-স্বৈরাচারের সমর্থক শব্দ। আজও সে অবস্থা বিরাজ করছে কি? রাজাকার, জামায়াত-শিবির বা বিএনপির ভাষায় কথা বললে তো চলবে না। বললে কোন্ দলের সিল কপালে পড়ে তাও পরিষ্কার হয়ে যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। সেই রাজনীতিই হলো ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের আদর্শ। ছাত্রলীগ সেই আদর্শ অনুসরণ করলে লেজুড়বৃত্তি হয় না; হয় বাংলাদেশের মূল ধারার সহযাত্রী। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ’৫৪-র ২১ দফার নির্বাচন, ’৫৮-র সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২-র কুখ্যাত হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-র ঐতিহাসিক ৬ দফার আন্দোলন, ৬ দফা দেয়ায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের, প্রতিবাদে ঊনসত্তরের ছাত্র গণঅভ্যুত্থান, জাতির পিতার মুক্তি ও তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা, ’৭১-এর মার্চে দুনিয়া কাঁপানো অসহযোগ আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার আহ্বান বা প্রথম ঘোষণা, ২৬ মার্চ (’৭১) স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা- আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন যে যেখানে আছেন, যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে হানাদার পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং হানাদার শেষ সেনাটিকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন হওয়া পর্যন্ত সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান, একই সঙ্গে ’৭১-এর ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা, যাতে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সুপ্রীম কমান্ডার অব আর্মড ফোর্সেস বা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ায় মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মুজিবনগর সরকারের শপথ গঠন, ’৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তানী জাতীয় পরিষদ এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বিজয়- জাতীয় পরিষদে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসন লাভ, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতির কারণে উপকূলীয় এলাকা ১২ আসনে নির্বাচন হয়নি, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের বিজয় এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র এক বছরের মধ্যে গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান রচনা এবং ’৭৩-এর নির্বাচন একইভাবে বিজয় জাতীয় সংসদ কর্তৃক রেটিফাইড বা অনুমোদিত, যাতে ৪ মূলনীতি... ১. গণতন্ত্র। ২. বাঙালী জাতীয়তাবাদ। ৩. সমাজতন্ত্র, যা এখন সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা। এই হচ্ছে আমাদের মূল ধারা যা আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য অর্জনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই মূল ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতির পিতার কন্যা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনেতা দার্শনিক শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ তার সহযোদ্ধা। ভুলে গেলে চলবে না তিনি এই মূল ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করে বাংলাদেশকে আজ অনন্য উচ্চতায় তুলে এনেছেন, যা বড় ধনী দেশগুলোরও রোল মডেল। এর ভিত্তিতে আগামী ২০২০-এর ১৭ মার্চ থেকে ২০২১-এর ১৭ মার্চ মুজিববর্ষ এবং ২০২১-র ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে, প্রস্তুতি চলছে। এটাই বাংলাদেশের মূল ধারা। ছাত্রলীগকে সেই ঐতিহ্যের ধারায় চলতে হবে। এর বাইরে যে ধারা তা নীতি-আদর্শ, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিরোধী, পচা-পরিত্যক্ত, মূল ধারা বিচ্যুত ধারা। শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের ধারা। কোন সংগঠন বা নেতাকর্মী কী তা সমর্থন করতে পারে? ঢাকা- ১৮ অক্টো. ২০১৯ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও জাতীয় সংসদ সদস্য ইমেইল : [email protected]
×