ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে রেলভূমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে ॥ আতঙ্কে দখলদাররা

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 চট্টগ্রামে রেলভূমির অবৈধ  স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে ॥  আতঙ্কে দখলদাররা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে রেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা লাখেরও বেশি। রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই মূলত রেলের জায়গা দখলে নিয়ে ভাড়া বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। এদিকে পুলিশ বরাদ্দ না পাওয়ায় অভিযান ভ-ুল হয়ে যায় বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে রেলের অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার দফতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণেও উচ্ছেদের বাজেট বরাদ্দ হচ্ছে না। কারণ উচ্ছেদ সরঞ্জাম ও মেশিনারিজ বরাদ্দ নিতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের চাহিদাপত্র পাঠানো হয় তাও এক তৃতীয়াংশ কর্তন করে বরাদ্দ নিশ্চিত করে হিসাব বিভাগ এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ উঠেছে, রেল কর্মকর্তা কর্মচারীদের কালো থাবায় গড়ে উঠা সেমিপাকা ঘরে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগের কারণে বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ গ্যাসের স্বল্পতাও দেখা দিয়েছে। পাহাড়তলীর মাস্টার লেন, পাঞ্জাবী লেন, শহীদ লেন, নিউ শহীদ লেন, আমবাগান, টাইগারপাস, গলাচিপা পাহাড়, পাহাড়তলী ও সিআরবি হাসপাতাল কলোনি, ওয়্যারলেস, ঝাউতলা, সেগুনবাগান, টিকেট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি, সিগন্যাল কলোনি, লোকো কলোনি এলাকায় শুধু বস্তিই নয় রেলের জায়গায় একাধিক স্কুল ও মাদ্রাসা নির্মাণ হয়েছে। প্রত্যেকটি স্থাপনায় রেলের বিদ্যুত ও পানির সংযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের অবৈধ সংযোগও দেয়া হয়েছে। সরকার রাজস্ব হারালেও ফায়দা লুটছে রেল, পিডিবি ও কেজিডিসিএল-এর অসাধুরা। এ বিষয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ইসরাত রেজা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, রাতের আঁধারে আবারও গড়ে উঠছে। রেলের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে সচেষ্ট কর্তৃপক্ষ। রেলের জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ সকল স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের সিডিউল দেয়া হয়েছে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তাকে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন হলে অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাহাড়তলীর বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ অক্টোবর সেগুন বাগান রেলওয়ে কলোনিতে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা, কাঠামো ও ৩০টি দোকানঘর ভেঙ্গে প্রায় দশমিক ২৬ একর জায়গা উদ্ধার করেছে। ওই সময় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে বাধা দিয়েছে প্রায় ৪/৫ হাজার লোক। পরদিন ১০ অক্টোবরও ওই এলাকায় আবারও অভিযান পরিচালনার সিডিউল থাকলেও পুলিশের অভাবে হয়নি। সিডিউল অনুযায়ী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর কদমতলীর বয়লিউ এভিনিউ কলোনিতে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ২৩ ও ২৪ অক্টোবর ওয়্যারলেস রেলওয়ে কলোনিতে, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর, ঝাউতলা রেলওয়ে কলোনিতে রেলের জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার কথা রয়েছে। এছাড়াও আগামী ৬ ও ৭ নবেম্বর আমবাগান রেলওয়ে কলোনিতে, ১৩ ও ১৪ নবেম্বর পাহাড়তলীর এক্স ই এন কলোনিতে, ২০ ও ২১ নবেম্বর পাহাড়তলীর ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যাল কলোনিতে এবং ২৭ ও ২৮ নবেম্বর পাঞ্জাবী লেন ও মাস্টার লেন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত টিম। আরও অভিযোগ রয়েছে, সিআরবি এলাকা থেকে ইস্পাহানি রেলগেট পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনার পরিমাণ লক্ষাধিক। আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে খেলার মাঠ এমনকি রেল লাইনের দু’ধারেও বস্তি গড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। রেল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও সংগঠন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে জড়িত রয়েছে। শুধু তাই নয়, রেলের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও কোয়ার্টার সংলগ্ন খালি জায়গায় এক সময় নিজেদের ব্যবহারের রেল কর্মকর্তা কর্মচারীরা গৃহনির্মাণ করলেও বর্তমানে ভাড়া বাণিজ্যের উদ্দেশ্যেই ঘর তোলার হিড়িক পড়ছে। এমনকি খালি জায়গা মোটা অর্থের বিনিময়ে দখল হস্তান্তরের ঘটনাও ঘটছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে এসব সিন্ডিকেট ফায়দা লুটতে মরিয়া।
×