ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহামুদুল হাসান সৈকত

প্রযুক্তিবান্ধব গৃহস্থালি পণ্য

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 প্রযুক্তিবান্ধব গৃহস্থালি পণ্য

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন যতটা না বেড়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে ব্যবহারকারীর চাহিদা। এখন ঘরে ঘরে ফ্রিজ, এসি, পানির পাম্প, রঙিন টেলিভিশন, কম্পিউটার, স্বচ্ছ আলো পেতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক বাতি, রাইস কুকার, ওয়াটার হিটারসহ নানাবিধ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। বাসা বাড়ির বাইরে, শিল্প কারখানা, অফিস আদালতেও বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর এই চাহিদা মেটাতে বাড়াতে হচ্ছে বিদ্যুত উৎপাদন। কোন কোন ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুতও আমদানি করা হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সময় এসেছে বিদ্যুতের অপচয় কমানোর। শুধু বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে সাশ্রয় করা যায় অনেক বিদ্যুত। বিদ্যুত সাশ্রয়ের চিন্তা থেকেই বেশ কিছু প্রযুক্তিবান্ধব পণ্য তৈরি করেছি। বিদ্যুত ব্যবহারে সচেতনতা বিদ্যুতের অপচয় কমাতে পারে। ফলে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি কিছুটা হলেও পরিবেশ বিপর্যয় কমানো যাবে। বিদ্যুত সাশ্রয়ের উপায় নিয়ে কাজ শুরু করলে প্রথমেই বিদ্যুতের অপচয়ের ব্যাপার মাথায় আসে। অবচেতন মনে সুইচ অফ করতে ভুলে যাওয়া বিদ্যুত অপচয়ের অন্যতম কারণ। ২০১২ সালে এক বন্ধুর সহায়তায় পুরনো ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের সাহায্যে একটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত সুইচ বানালাম, যার মাধ্যমে দূর থেকে লাইট, ফ্যান অন-অফ করা যায়। পরিচিত মহলে অল্প কিছু ব্যবহারকারী তৈরি হয়েছিল কিন্তু পদ্ধতিটি খুব বেশি সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনি। সীমিত সম্ভাবনা আর অসীম ইচ্ছে নিয়ে ২০১৫ সালের শেষ দিকে ইন্টারনেট প্রযুক্তির সমন্বয়ে স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রিক সুইচ ডেভেলপ করার কাজ শুরু করি। এরপর মোবাইল এ্যাপ ব্যবহার করে বাড়ির সকল বৈদ্যুতিক লোড নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে সাইটেক নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। প্রায় ২ বছর পর সার্বজনীন ব্যবহার উপযোগী স্মার্ট হোম সিস্টেম ডেভেলপ করতে সমর্থ হই। যদিও এই পদ্ধতি পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রচলিত কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে লোড কেপাসিটি, ভোল্টেজ আপ ডাউন এবং ইন্টারনেটের পর্যাপ্ততা বিবেচনায় কাজটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সাইটেক উদ্ভাবিত স্মার্ট হোম সিস্টেমে আলাদা কোন ইন্টারনেট হাব-এর প্রয়োজন নেই। সাধারণ ওয়ায়-ফাই রাউটার এর সঙ্গে স্মার্ট হোম ডিভাইসসমূহ সংযুক্ত করা যায়। বাসায় ওয়াই ফাই সংযোগ থাকলে প্রচলিত গ্যাং সুইচ বদলে সাইটেক ওয়াই ফাই স্মার্ট সুইচ ইন্সটল করে খুব সহজেই প্রয়োজন অনুযায়ী বৈদ্যুতিক লোড নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্য হলো, পূর্বনির্ধারিত সময়ে স্বয়ংক্রিয় সুইচ অন অফ। যেমন: একটি অফিসে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২০টি বাতির প্রয়োজন হয়। অফিসের আগে কিংবা পরে হয়তো অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক বাতি জ্বলে থাকে, নিঃসন্দেহে এটা অপচয়। যদি ওই অফিসে ওয়াইফাই স্মার্ট সুইচ ইন্সটল করা যায় সেখত্রে অফিস শেষে সব বাতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিভে যাবে এবং অফিস শুরুর নির্ধারিত সময়ে সব বাতি জ্বলে উঠবে। এতে বিদ্যুতের অপচয় কমবে। এই পদ্ধতিতে দূর থেকে লোড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রয়েছে নিরাপদ ম্যনুয়াল টাচ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। একটি বাড়ির আলোকব্যবস্থা, তাপমাত্রা ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে সাইটেক স্মার্ট হোম সিস্টেম ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য ডিভাইস সমূহ হল-স্মার্ট ফ্যান সুইচ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডোর লক, ইনডোর/আউটডোর ক্যমেরা, গ্যাস ডিটেক্টর, মোশন সেন্সর ইত্যাদি। আমার প্রতিষ্ঠানের ট্যাগ লাইন হল, কন্সট্রাকশন এ্যান্ড অটোমেশন। ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যপ্তি যত বাড়ছে অটোমেশনের প্রয়োজনীয়তা তত বাড়ছে। আগে একটা কাজ হতো ১০ জন লোকে মিলে করতো কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে সেই কাজের জন্য এখন ১ জন লোক যথেষ্ট, এমন অনেক উদাহরণ অহরহ। অটোমেশনের প্রভাবে কাজ কমে যাচ্ছে মানুষ বেকার হয়ে যাচ্ছে, এমন ভাবে অনেকে। কিন্তু বিকল্প পেশাও তো তৈরি হচ্ছে। দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যত বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহ শনাক্ত করে অটোমেশন প্রযুক্তির (ইন্টারনেট অব থিংস) প্রয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় রোধ সম্ভব। কেমন হতো যদি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়, তাহলে কি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, লঞ্চ ঘাট, পার্ক বাজারসহ পাবলিক প্লেসগুলো কি আরও দৃষ্টিনন্দন হতো? দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে ব্যক্তি উদ্যোগে সোলার ট্রাশবিন প্রকল্পের একটি মডেল উদ্ভাবন করি ২০১৭ সালে। একার পক্ষ্যে প্রকল্পটি এগিয়ে নেয়া সম্ভব ছিল না বিধায় গত বছর আইসিটি ডিভিশনের সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের জন্য আবেদন করি। কয়েকমাস পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প উপস্থাপনের ডাক পাই, তখন ফাইল ফেরত পাঠানো হলেও ইনোভেশন ফান্ড কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক আশ্বাস পেলেও বাস্তবায়নের সময় কাউকে এখন পর্যন্ত পাইনি। তবে আমি আশাবাদী খুব দ্রুত প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে। ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকায় স্মার্টবিন চুরি প্রতিরোধ করা যাবে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা মোবাইল এ্যাপ ব্যবহার করে স্মার্টবিন পূর্ণ হওয়ার তত্থ্য পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে। সৌরচালিত স্বয়ংক্রিয় চাপ প্রয়োগ পদ্ধতি ডাস্টবিনের ধারণ ক্ষমতা ৫ থেকে ৮ গুণ বৃদ্ধি করবে, এতে বর্জ্য সংগ্রহ ব্যয় কমবে। [email protected]
×