ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ এশিয়ায় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র

হালদার পোনা হালদাতেই

প্রকাশিত: ০৮:১২, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 হালদার পোনা হালদাতেই

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। চট্টগ্রামে একটি নদীর নাম হালদা। একশ’ বছরের ইতিহাসে নেই হালদার পোনা হালদাতে অবমুক্ত করার ঘটনা। তবে নদীতে মাছ ছাড়ছে উপজেলা প্রশাসন। এই উপজেলা প্রশাসনের নাম চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। দেশের কোন নদীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এই উপজেলা প্রশাসনে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন। এই হালদা নদীর কার্প মাছের রেণু থেকে মাটির কুয়ায় মাছের পোনা উৎপাদন করেই তা মডেল পুকুরে ছেড়ে বড় করা হচ্ছে। ৫/৬ ইঞ্চি পরিমাপের হলেই তা আবারও ছাড়া হচ্ছে হালদা নদীতেই। জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। এবারই প্রথম বারের মতো এই নদীর কার্প মাছের ডিম থেকে রেণু, আর রেণু থেকে এক লাখ পোনা উৎপাদন করেই আবারও হালদায় ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। একটি দুটি বা এক হাজার পোনা নয়, একলাখ মাছের পোনা ছাড়া হবে এই নদীতে। তবে এই মাছের পোনা অন্য কোন নদীর বা পুকুরের মাছের পোনা নয়। হালদা নদীর মাছের ডিম থেকেই এই পোনা উৎপাদন করে ছাড়া হচ্ছে। গত ৮ অক্টোবর প্রথম ধাপে ১৭/১৮ হাজার মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে। এরমধ্যে গড়দুয়াড়া এলাকায় প্রায় ৯ হাজার পোনা আর প্রায় ৮ হাজার পোনা ছাড়া হয়েছে সাত্তারঘাট এলাকায়। ক্রমান্বয়ে কার্প মাছের রেণু থেকে পোনা উৎপাদন করেই এক লাখ পোনা হালদা নদীতে ছাড়া হবে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে। এসব রেণু সংগ্রহ করা হয়েছিল গত ২৫ মে যখন হালদা নদীতে মা মাছেরা ডিম ছেড়েছে। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবারই প্রথম বারের মতো হালাদার রেণু থেকে পোনা উৎপাদন করেই হালদায় ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বা স্থানীয় হ্যাচারি থেকে কার্প মাছের পোনা কিনে এনে হালদায় ছাড়া হতো। এতে উৎপাদান ক্রমশ কমেই যাচ্ছিল। হালদা থেকে রেণু নিয়ে তা আবার প্রক্রিয়াজাত করেই পোনা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে উপজেলা প্রশাসন একটি গবেষণাও শেষ করেছে। গত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এ গবেষণা করা হয়। এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন জনকণ্ঠকে জানান, হালদার এক শ’ বছরের ইতিহাসে হালদার পোনা হালদায় ছাড়ার রেকর্ড নেই। এ বছরের ২৫ মে হালদা নদীকে কার্প জাতীয় মা মাছেরা ডিম ছেড়েছে। এরমধ্যে রয়েছে রুই, কাতল, মৃগেল ও কালা বাউশ। ৬৫ হাজার টাকায় সাড়ে সাতশ’ গ্রাম ডিম কেনা হয়েছিল হালদার। মাটির কুয়ায় ৪দিনে স্থানীয় প্রযুক্তিতে ডিম থেকে রেণু উৎপাদন করেছি। সেই রেণু থেকে গড়দুয়াড়া ইউনিয়নের একটি মডেল পুকুরে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা হয়। এইসব মাছের পোনা মডেল পুকুরেই গত ১ জুন থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৬ ইঞ্চি পরিমাপের হয়েছে। গত ৮ অক্টোবর দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত স্থানীয়দের নিয়ে অর্থাৎ যারা হালদা নদীকে ভালবাসেন তাদের নিয়ে নদীর গড়দুয়াড়া ও সাত্তারঘাট এলাকায় ১৭/১৮ হাজার পোনা ছাড়া হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোট একলাখ পোনা ছাড়া হবে হালদায়। এ বিষয়ে কার্প মাছের পোনা ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন জানান, হালদার পোনা ফেনীর মোটবী ইউনিয়নের বাঘাইয়া গ্রামে একটি বড় পুকুরে ছেড়েছেন তিনি। মাত্র ২৫ হাজার টাকার ডিম কিনে তা থেকে তিনি পোনা উৎপাদন করেছেন। গত তিন মাসে এ পর্যন্ত তিনি ১২ লাখ টাকার বিভিন্ন সাইজের পোনা বিক্রি করেছেন। শুক্রবার সকালে ওই পুকুরে গিয়ে দেখা গেছে কিছু পোনা মারা যাচ্ছে। পানি রিসাইক্লিং করাসহ পানি নষ্ট না হতে মেডিসিনের ব্যবহারও করছেন তিনি। তবে পোনা মরে যাওয়ার কারণ হিসেবে এই মৎস্যচাষী পানির তুলনায় পোনার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তবে আরও বিশ লাখ টাকার পোনা বিক্রির টার্গেট রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও কিছু পোনা এই পুকুরে রেখেই মাছের ব্যবসা করবেন এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন। শুধু এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগই নয় মোহাম্মদ রুহুল আমীন, বর্তমানে তিনি হাটহাজারীতে উপজেলার বিভিন্ন সমস্যা ছাড়াও ত্রিপুরা পল্লীর ত্রিপুরা শিশুদের স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা ছাড়াও বিভিন্ন স্কুলের দীর্ঘদিনের সমস্যাও দূর করেছেন তিনি। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভেতর পাখিদের জন্য এভ্যিয়ারি পার্ক করেছেন। তেমনি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভেতরে কিডস জোন গড়ে তুলেছেন শিশুপার্কের ন্যায়। একের ভেতরে তিন উপভোগ করছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা দেখতে আসা অতিথিরা। তবে এই চিড়িয়াখানা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিন আগতদের প্রবেশ ফি এর আয় দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।
×