ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্টরা আবাসন সঙ্কটে ক্যাম্পাসে থাকেন না!

প্রকাশিত: ০৮:১২, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্টরা আবাসন সঙ্কটে ক্যাম্পাসে থাকেন না!

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ আবাসন ব্যবস্থা না থাকার অযুহাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) হোস্টেলগুলোতে থাকছেন না প্রভোস্টরা। তারা ক্যাম্পাস থেকে দূরে নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করছেন। শুধু প্রভোস্টই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাস দুটিতে নির্ধারিত আবাসিক শিক্ষক মাঝে মধ্যে থাকলেও ছাত্রী হোস্টেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী ছাড়া আর কেউই থাকেন না। ফলে যে কোন জরুরী প্রয়োজনে মোবাইল ফোনেই যোগাযোগ রাখতে হয় প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। তবে প্রভোস্টরা বলছেন, যেখানেই থাকেন না কেন, নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা শতভাগ দায়িত্ব পালন করছেন। আর যা কিছুই হোক না কেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ক্যাম্পাসে চলে আসেন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়িও প্রস্তুত রাখা হয় তাদের জন্য। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য একমাত্র হোস্টেল শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রী হোস্টেলে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বর্তমান সময়ে প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের কেউই থাকেন না। কিন্তু তাদের থাকার জন্য ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। আর শিক্ষকরা না থাকায় মধ্যরাতে বা যে কোন সময় যদি হোস্টেলে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে তাকে নিয়ে সহপাঠীদেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে যেতে হয়। তখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলেও কিছু করার থাকে না। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একজন নারী চিকিৎসক রয়েছেন তাকেও নিয়মিত পাওয়া যায় না। এ হলের শিক্ষার্থীরা আরও জানান, পাঁচতলা হোস্টেলের চারদিকে সীমানা প্রাচীর যথেষ্ট নয়, ফলে দিনের বেলাতেই চুরির ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগে হোস্টেলের তৃতীয় তলা থেকে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনসহ গুরুত্বপূর্ণ মাল চুরি হয়েছে। পুরো হলের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। যে কারণে এতবড় হোস্টেল পরিষ্কার রাখাই দায় হয়ে পড়েছে। আবার যেখানে রাতেরবেলা হোস্টেলের ভেতরে নারী নিরাপত্তাকর্মী থাকার কথা, সেখানে ভেতরের গেটে থাকছেন পুরুষ আর বাইরের গেটের দায়িত্বে নারী দিয়ে রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের দুটি হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, এ হলে শুরু থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আবাসিকের শিক্ষার্থী নন, এমন ছাত্ররাও এসে মারামারিতে অংশ নিয়েছে। সবশেষ এক মাস পূর্বে এ হলের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র রাজু গাজীকে মারধর করা হয়। এর আগে হলের ভেতরেই মারধরের শিকার হন শিক্ষার্থী রাজীব মন্ডলসহ আরও একজন। শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের এ হলেই কয়েক মাস আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন লোকমান হোসেন নামের এক ছাত্র। এছাড়া শেরেবাংলা হলে না থাকলেও ওই হলের নিচতলার ১০০১ নম্বর কক্ষটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে কয়েক শিক্ষার্থী। মূলত কক্ষটি নাট্যকলার শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া হয়েছিল। এছাড়া উভয় হোস্টেলেই বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে বলেও ছাত্ররা অভিযোগ করেন, আবাসিক শিক্ষকদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে বঙ্গবন্ধু হলে তাদের কেউই নেই। শেরে-বাংলা হলে আবাসিক শিক্ষক ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইয়াসিফ আহমদ ফয়সল থাকছেন নিয়মিত। যদিও তিনি বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। এ হলে কাগজেকলমে সহকারী আবাসিক শিক্ষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের থাকার কথা থাকলে তার বাবা অসুস্থ থাকায় তিনি থাকছেন না। তবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেকটাই ভাল রয়েছে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে থাকা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন বলেন, প্রতিটি হলের নিচতলায় প্রভোস্টের অফিস কক্ষে আবাসিক শিক্ষকরা জায়গা ভাগাভাগি করে থাকছেন। সব শিক্ষার্থী হয়ত বিষয়টি খেয়াল করতে পারেনি। বর্তমানে সহকারী আবাসিক শিক্ষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বঙ্গবন্ধু হলে থাকছেন। তিনি আরও বলেন, কোন হলের জন্যই প্রভোস্ট বা আবাসিক শিক্ষকদের আলাদা আবাসন ব্যবস্থা ক্যাম্পাসের ভেতরে নেই। তাই বাধ্য হয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের বাইরে থাকতে হচ্ছে। আবাসন ব্যবস্থা হলে এ সমস্যা থাকবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মাদক ও চুরির দুটি বিষয়ে জানার পরপরই সমাধানে নেমে পড়ার কথা জানিয়ে রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, হোস্টেলে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই অল্প সময়ের মধ্যে চলে আসি ও সমস্যা সমাধানে কাজ করি। এর জন্য রাত বা দিনের হিসাব করা হয় না। অপরদিকে শেখ হাসিনা আবাসিক হলে কাগজে-কলমে প্রভোস্ট চিন্ময়ী পোদ্দার বলেন, আবাসন সঙ্কটের কারণে প্রভোস্টরা হোস্টেলে থাকতে পারছেন না। আর আবাসিক শিক্ষকদের জন্য হলের ভেতর সামান্য ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকা যায় না। কারণ এটি ছাত্রী হোস্টেল। তবে ছাত্রীদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে আবাসিক শিক্ষকরা সচেষ্ট রয়েছেন। এ বিষয়ে প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করেছে অল্প কিছুদিন হয়েছে। এখনও অনেক প্রকল্প চলমান। উপাচার্য, প্রক্টর ও প্রভোস্টদের থাকার জন্য আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। আর যা-ও বা তৈরি হয়েছে সেখানে এখনও এ্যালোটমেন্ট (বরাদ্দ) দেয়া হয়নি। তবে আবাসন ব্যবস্থা হলে অবশ্যই প্রক্টর ও প্রভোস্টরা ক্যাম্পাসে থাকবেন। এর আগ পর্যন্ত তারা আবাসিক হোস্টেলগুলোতে প্রতিমুহূর্তের খোঁজখবর রাখছেন। যে কোন সমস্যা সমাধান অল্প সময়েই করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন, শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নয়, হোস্টেলে আবাসিক শিক্ষকরা নিয়মিত থাকলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনাতেও আগ্রহী হবেন। পড়াশোনাসংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়েও তারা সহায়তা পাবেন। তাই আবাসিক শিক্ষকদের হোস্টলে থাকা অত্যন্ত জরুরী।
×