ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

চলে গেলেন সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু

বিশিষ্ট সাংবাদিক পাক্ষিক অনন্যার সাবেক নির্বাহী সম্পাদক মানবাধিকার কর্মী দিল মনোয়ারা মনু আর নেই। রবিবার মাঝরাতে এই সাংবাদিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনি আর নেই বলে জানান। জানা যায় ৬৯ বছর বয়স্ক দিল মনোয়ারা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। এই প্রথিতযশা সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের নারী অধিকার আদায়ে তার দীপ্ত লেখনী সবাইকে সাহস আর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। সমকালীন বিধ্বংসী বিষয়, নারী নির্যাতন আর নিপীড়নের একজন সাহসী কণ্ঠ মনোয়ারাকে আমরা অসময়ে হারিয়ে ফেললাম। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রায়ই ২৫ বছর অনন্যা পাক্ষিক সাময়িকীটির নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা এই খ্যাতনামা সাংবাদিক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের গণমাধ্যম সম্পাদকের জায়গায় নিজের কর্তব্য পালনে সব সময় অকুণ্ঠিত ছিলেন। ১৯৫০ সালে ফরিদপুরে জন্ম নেন এই কৃতী সাংবাদিক। ১৯৭৪ সালে বেগম পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে উপমহাদেশের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমের একান্ত সান্নিধ্যে লেখালেখির জগতে নিজের মনন ও মেধাকে কাজে লাগান। লেখনী শক্তির অভাবনীয় ক্ষমতায় সাধারণ মানুষ-নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন সবার কাতারে দাঁড়াতে কখনও ভাবতেন না। নারী সাংবাদিকতার পথযাত্রায় উজ্জ্বল নক্ষত্র দিল মনোয়ারা বিভিন্ন নারী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে অসহায় ও দুস্থ মহিলাদের কল্যাণে তাদের জন্য গণমাধ্যমে সোচ্চার হতে কখনও দেরি করতেন না। সমকালীন ঘটনা বিশ্লেষণে পারদর্শী এই দক্ষ গণমাধ্যম কর্মী ঘটে যাওয়া তাৎক্ষণিক বিষয়ে তার উপস্থিত মতামত দিতেও পারতেন অবলীলায়। তাই বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার সক্রিয় অংশীদারিত্বের অন্য অনেক নারীর জন্য নজির হয়ে থাকবেন। এই পথিকৃৎ নারী সাংবাদিক বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, সাময়িকীতে তাঁর সারগর্ব বক্তব্য লেখনীর মাধ্যমে সুসংবদ্ধভাবে উপস্থাপনা করতে পারতেন। কোন ঘটনা বিশ্লেষণে বিষয়ের গভীরতা যেমন ছিল, পর্যালোচনার ক্ষমতাও প্রশংসনীয়। সুলেখক দিল মনোয়ারা তার অজস্র কথামালা আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। সেই সব যথার্থভাবে সংরক্ষণ করে আমাদের মাঝে তাকে বাঁচিয়ে রাখা সকলের কর্তব্য। বিশেষ বিশেষ দিন, অনাকাক্সিক্ষত সামাজিক দুর্যোগ, খ্যাতিমান যশস্বী মানুষদের প্রতি তার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর দায়বদ্ধতায় গণমাধ্যমের কলেবর প্রতিনিয়ত শাণিত হয়েছে। একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে তাঁর এই চলে যাওয়াকে আন্তরিক সমবেদনায় সশ্রদ্ধ সম্মান প্রদর্শন করছি। একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে এই সত্যকে ধারণ করেও অনেকের চির প্রস্থান মেনে নেয়া যায় না। তবে চলে যাওয়া মানুষটিকেও বাঁচিয়ে রাখা যায় তার তৈরি করা নিজস্ব আলোকিত জগতে। তার বিভিন্ন কর্ম ও সৃজন দ্যোতনাকে সযতেœ সবার মাঝে নিয়ে আসতে পারলে যথার্থভাবে তাকে চিরস্থায়ী মর্যাদা দেয়া সম্ভব। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা।
×