ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর আকুতি

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর আকুতি

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ অবসর গ্রহণের চার বছর পেরিয়ে গেলেও সৈয়দপুর পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী মোসলেমা সামাদ আজও তার পাওয়া টাকা বুঝিয়ে পাননি। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি সৈয়দপুর শহরের সাহেবপাড়ায় তার বাসায় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চাকরি শেষে তার পাওয়া প্রায় ১৯ লাখ টাকা। মোসলেমা সামাদ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক মরহুম মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদের স্ত্রী। তিনি জানান, ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তার পিআরএল (অবসরকালীন প্রস্তুতি ছুটি) শুরু হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে। চাকরি বিধি মতে এই সময়ে কাজ না করেই পুরো এক বছর চাকরিকালীন সময়ের মতো প্রতি মাসে বেতন পাবেন। কিন্তু পৌর কর্মচারী মোসলেমা সামাদের ওই সুযোগটিও পাননি। তাকে পিআরএলের সময়ে এক বছর পৌরসভায় গিয়ে চাকরি করতে বাধ্য করা হয়। তিনি বলেন, চাকরি থেকে অবসরের টাকা পেতে পৌর মেয়রের কাছে ধর্ণা দিতে দিতে তিনি হাফিয়ে উঠেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অবসরে যাওয়ার পর পাওনা টাকা দ্রুত পেতে পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সরকারের পাটোয়ারী পাড়ার বাড়িতে গিয়ে আমি আমার অবসরের যাবতীয় পাওনা দ্রুত পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করি। তিনি (মেয়র) আমার কথা শুনে বললেন, আপনি পাওনা টাকার জন্য আবেদন করেন আমি দ্রুত টাকা দিয়ে দেব। আমি মেয়রের কথামতো আবেদন করি। কিন্তু টাকা দেয়া হয়নি আমাকে। আবার দেখা করি, আবার আবেদন করতে বলেন, এভাবে ১০ থেকে ১২ বার পাওনা টাকা পেতে আবেদন করি। কিন্তু বারবার আবেদন করেও কোন সুফল মিলেনি। মোসলেমা সামাদ আরও বলেন, আমার স্বামী জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তিনি তার মরদেহ মেডিক্যাল কলেজে দান করে গিয়েছেন। তিনি সোনার বাংলার স্বপ্ন বুকে লালন করতেন। আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল স্বাধীন দেশের কোন মানুষ যেন অকারণে কোন দুঃখ-কষ্ট না পায়। স্বামীর স্বপ্নের উল্টোটা নিজের জীবনেই দেখছি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমরা আজও পরাধীন। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদের স্ত্রী হওয়ার কারণেই বোধ হয় আমি আমার সারা জীবনের রক্ত নিংড়ানো অর্থ পৌরসভা থেকে পাচ্ছি না। আমার মতো অনেকে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য টাকা না পেয়ে ইতোমধ্যে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। হয়তো আমাকেও একদিন পাওয়া টাকার আশা ছেড়ে দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মোসলেমা সামাদ আরও বলেন, মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার বিএনপির রাজনীতি করেন। তিনি সৈয়দপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে মুক্তিযোদ্ধার অসহায় পরিবারকে হয়রানি করছেন। এদিকে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর সৈয়দপুর পৌরসভা কর্তৃক পাওয়া টাকা না পাওয়ার বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একরামুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী চাকরি থেকে অবসর নেয়ার চার বছর পরও সৈয়দপুর পৌরসভা থেকে তার পাওনা টাকা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন পৌরসভার একজন কর্মচারী চাকরি শেষে শুধু গ্রাচুইটি, প্রফিডেন্ট ফান্ড ও লামগ্রান্টের টাকা পান। এসব টাকা কর্মচারীদের তহবিলে জমা থাকার কথা। চাকরি শেষে তারা তাদের পাওনা টাকা নিয়ে ঘরে ফিরবে, এটি সোজা হিসাব। সেক্ষেত্রে বকেয়া রাখা মানেই হিসাবে গলদ আছে বলে মনে হয়। তিনি দ্রুত মোসলেমা সামাদের চাকরিকালীন অবসরের টাকা তাকে বুঝিয়ে দেয়ার দাবি করেন।
×