ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাটের সাবেক ছিটমহলে রাতারাতি উঠছে প্রাইমারী স্কুল

শিক্ষক নিয়োগের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

শিক্ষক নিয়োগের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১৭ অক্টোবর ॥ সরকারী চাকরি দেয়ার নামে বাণিজ্য চলছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মতো রাতারাতি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হয়েছে। সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো যে কোন সময় সরকারীর ঘোষণা হবে। এই বলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের নামে চলছে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার বাণিজ্য। এর মধ্যে চক্রটির জালে আটকা পড়েছেন শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত অনেক যুবক, যুব মহিলা ও নিরীহ মানুষ। দেখার যেন কেউ নেই। জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের খাসবাস দ্বারিকামারী বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় ২০১৮ সালের মে মাসে পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী পরিদর্শক মোসলেম উদ্দিন ‘কুমুর উদ্দিন মাছিরন বাড়ি নামে বেসরকারী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ স্থাপন করেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ওই এলাকার চার কন্যা সন্তানের জনক জবেদ আলীর একজন মেয়েকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৩৩ শতক জমি স্কুলের নামে স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করে নেন । বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ফাইল তৈরি বাবদ দুই লাখ টাকাও নগদ নেয় মোসলেম উদ্দিন। এর কিছুদিন পর অন্যপ্রার্থী ঠিক করে জবেদ আলীর মেয়ের নাম সহকারী শিক্ষকের তালিকা থেকে বাদ দেন। যার কারণে একপর্যায়ে বিদ্যালয় স্থাপনের জমি ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু নগদ নেয়া দুই লাখ টাকা ফেরত দেননি মোসলেম উদ্দিন। টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে জবেদ আলী ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন। উপজেলার বিভিন্ন বিলুপ্ত ছিটমহলসমূহ ঘুরে দেখা গেছে, ভোটবাড়ি আজিজুল নগর, মৌলবি খিদির বকস, লতামারী তরিমল পানিশালা ছলেমান কবিরন নগর, খাসবাস দ্বারিকামারী কুমুর উদ্দিন মছিরন বাড়ি, বাঁশকাটা, বাঁশকাটা তাতিপাড়া বঙ্গবন্ধু, ফুলজান রহিম উদ্দিন বাড়ি, আলিম জামুর বাড়ি ও বিমলা গোপালবাড়ি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে ২০১১ ও ২০১২ সালে সাইনবোর্ড টানিয়ে এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দেখানো হয়েছে। বিদ্যালয় সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয় ২/১ বছর আগে গড়ে তোলা হয়েছে। অথচ এসব বিদ্যালয়ের আশপাশে একাধিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পূর্ব হতেই আছে। বিলুপ্ত ছিটমহলে সরকারের ১৫০০ বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে স্কুল নির্মাণ প্রকল্পের নির্মিত চারটি স্কুল ভবন রয়েছে। এই চারটি স্কুলের আশপাশে কোন স্কুল নেই। এই ৪টি স্কুলে বেশকিছু ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা অন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নামমাত্র ছাত্রছাত্রী রয়েছে। জানা গেছে, পুরাতন ফাইল তৈরি করে, জাল কাগজপত্র তৈরি করে, ব্যাক ডেটে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে, মিথ্যা প্রতিষ্ঠার তারিখ দেখিয়ে বিলুপ্ত ছিটমহলে প্রাথমিক স্কুল সরকারীকরণে নানা তদবির চলছে। প্রচার করা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলো সরকারী হবে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোসলেম উদ্দিনকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ পাটগ্রাম ্উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, ‘বিলুপ্ত ছিটমহলে স্থাপিত বিদ্যালয়গুলোর কোন তথ্য তার কাছে নেই। এই বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) অফিস ও কর্মকর্তা ভাল বলতে পারবেন। লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) মোঃ গোলাম নবী জানান, এভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করলে সেটা সরকারী হবে না।
×