ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শর্ত দিলেন এরদোগান

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

শর্ত দিলেন এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান বলেছেন, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিরাপদ জোন না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান চলবে। সিরিয়ার কুর্দী গেরিলাদের সঙ্গে তার দেশ কখনও আলোচনার টেবিলে বসবে না। নিরাপদ জোন প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল আঙ্কারা সেখানে সামরিক অভিযান বন্ধ করবে। এরদোগান আঙ্কারায় বুধবার ক্ষমতাসীন জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) এক বৈঠকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কয়েকজন নেতা মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছেন কিন্তু তুরস্কের ইতিহাসে এটি কখনই ঘটেনি যে, তুর্কী প্রজাতন্ত্র কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসেছে। বুধবার থেকে তুরস্ক সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দী গেরিলাদের বিরুদ্ধ অভিযান শুরু করেছে। এতে দু’পক্ষের অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটলেও তুরস্ক অভিযান বন্ধ করতে চাইছে না। তুর্কী অভিযানের বিষয়ে বহির্বিশ্বে সমালোচনা হচ্ছে। এরদোগান বলেন, সিরিয়ার কুর্দী গেরিলারা যদি তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে এবং তারা নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় যার মাধ্যমে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব- তাহলেই কেবল তুরস্ক সামরিক অভিযান বন্ধ করবে। সিরিযার মানবিজ শহর থেকে ইরাক সীমান্ত পর্যন্ত এই নিরাপদ অঞ্চল বিস্তৃত হবে। তার মতে কুর্দীরা অস্ত্র ত্যাগ এবং পরিকল্পিত নিরাপদ অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেই কেবল তুর্কী বাহিনীর অভিযান বন্ধ করবে। এছাড়া কোন শক্তি এ অভিযান বন্ধ করতে পারবে না। সবচেয়ে দ্রুত সমাধান হচ্ছে, জঙ্গীরা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবেন এবং বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে ওই এলাকা থেকে সরে যাবেন। নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরেই অভিযান স্থগিত করা হবে। এ নিয়ে আলোচনা উন্মুক্ত নয় বলেও তিনি জানিয়েছেন। এদিকে সিরিয়ায় কুর্দীবিরোধী অভিযানের কারণে পাকিস্তান সফর স্থগিত করেন এরদোগান। ২৩ ও ২৪ অক্টোবর এ সফর করার কথা ছিল। এতে দুই দেশের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক অবকাঠামো চুক্তি সই হতে পারত। কুর্দীবিরোধী অভিযানে সমর্থন করে পাকিস্তান বলছে, এতে সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফিরবে। অভিযান বন্ধ করে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি সইয়ে রাজি করাতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইতোমধ্যে তুরস্কের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। উত্তর সিরিয়ায় তুর্কীদের ওই অভিযান এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিযান বন্ধ করে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি সইয়ে রাজি করাতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইতোমধ্যে তুরস্কের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। ৬ অক্টোবর এরদোগানের সঙ্গে কথা বলে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। ওই অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার মধ্য দিয়ে তুরস্ককে হামলার ‘সবুজ সঙ্কেত’ দিয়েছে। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাদের সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। কেউ যদি চিঠিটা পড়ে থাকেন তবে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। তার সঙ্গে আলোচনার পরই আমি এই চিঠিটি লিখি। ৮ অক্টোবর কুর্দী নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সকে (এসডিএফ) লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে তুর্কী সেনারা। ওই অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে এসডিএফ। তবে তুরস্ক উল্টো এসডিএফকে জঙ্গী সংগঠন বলে মনে করে। সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ‘নিরাপদ এলাকা’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়ে সেখানে তুরস্কে অবস্থান নেয়া সিরিয়ার শরণার্থীদের বড় একটি অংশকে পুনর্বাসনের কথা বলছে। তবে শরণার্থীদের অনেকেই কুর্দী না হওয়ায় তুরস্কের এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে কুর্দীরা জাতিগত নিধনের শিকার হতে পারে বলে সতর্ক করছেন সমালোচকেরা। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, তুরস্ক হামলা চালানোর পর সেখানে ডজন ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। কমপক্ষে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। -বিবিসি ও আলজাজিরা
×