ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গঙ্গা-যমুনা উৎসবে অংশ নেয়া আমার জন্য গৌরবের ॥ এইচ আর অনিক

প্রকাশিত: ১২:৩৫, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

গঙ্গা-যমুনা উৎসবে অংশ নেয়া আমার জন্য গৌরবের ॥ এইচ আর অনিক

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন, সঙ্গীত মিলনায়তন এবং মহিলা সমিতি মিলনায়তনে একযোগে চলছে ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’। এই উৎসবে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে চন্দ্রকলা থিয়েটারের ১৫তম প্রযোজনা নাটক ‘শেখ সাদী’। নাটকে একক অভিনয় করবেন সময়ের মেধাবী মঞ্চশিল্পী, নাট্যকার, নির্দেশক এইচ আর অনিক। বাংলাদেশের তরুণ মঞ্চশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম অনিক চন্দ্রকলা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরের নির্বাহী সদস্য। আদ্যোপান্ত মঞ্চশিল্পী হলেও টিভি নাটক রচনা-নির্দেশনার পাশাপাশি অভিনয়ও করে থাকেন। তার রচিত এবং নির্মিত অসংখ্য টিভি নাটক বিটিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারের পর প্রশংসিত হয়েছে। অনিক নির্দেশিত এবং অভিনীত মনোড্রামা ‘শেখ সাদী’ নাটক এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবে আজ ‘শেখ সাদী’ নাটক মঞ্চায়নের হবে অনুভূতি কেমন? এইচ আর অনিক : খুবই ভাল অনুভূতি। আপনি জানেন দেশি-বিদেশী জনপ্রিয় নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যে এই উৎসবটি জমে উঠেছে। দিন দিন এই উৎসবের জৌলুস বাড়ছে। এতবড় একটি উৎসবে অংশ নিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। একজন মঞ্চশিল্পী হিসেবে এই উৎসবে যোগ দিতে পারা অনেকটা গৌরবেরও বটে। আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’ আয়োজন পর্ষদকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি দর্শকরা নাটকটি উপভোগ করতে আসবেন। কি আছে ‘শেখ সাদী’ নাটকে? এইচ আর অনিক : দেখুন শেখ সাদীর পোশাককে খাবার খাওয়ানোর গল্প আমরা সবাই জানি। বর্তমান সময়েও গুণীজনদের কদর ক্রমশ কমে যাচ্ছে। আমি মনে করি একেকজন গুণী হচ্ছেনÑ একেকটি লাইব্রেরি। তাই তাদের জীবদ্দশায় মূল্যায়ন করা উচিত। আমি মনে করি মানুষ ক্রমশ বই পড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই সময়ের প্রেক্ষাপট শেখ সাদী নাটকের সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে।অপূর্ব কুমার কু-ুর রচনায় ফজরের আজান থেকে শুরু করে ভোরের আলো ফোটবার মধ্যবর্র্তী সময়ে শেখ সাদী অপেক্ষা করছে দিল্লী থেকে আগত মুসাফিরদের জন্য। এই স্বল্প সময়ের অপেক্ষা যে কি দীর্ঘ সময় এর অনুভূতি তার রূপ তুলে ধরা হয়েছে নাটকটিতে। নাটকটি মূলত শেখ সাদীর জীবন আশ্রিত। যাপিতজীবন, কর্মের মূল্যায়ন এবং তার বিশ্বভ্রমণ মূলত শেখ সাদী নাটকে নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন ইতিহাসের আলোকে শেখ সাদীকে দেখার। মঞ্চে একক অভিনয় অনেকটাই চ্যালেজিং, আপনি কী মনে করেন? এইচ আর অনিক : আমিও তাই মনে করি। তবে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দও করি। ‘শেখ সাদী’ নাটকটি আমার জন্য অবশ্যই চালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ আমি অনেকটাই উৎরে যেতে পেরেছি বলে মনে করি। আমাকে এই চ্যালেঞ্জ নিতে সাহস জুগিয়েছেন আইটিআইএর সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, উপমহাদেশের বিখ্যাত নাট্যকার মনোজ মিত্র, একক নাটকের বরপুত্র গৌতম হালদার। তারা আমাকে অভিনয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। ‘শেখ সাদী’ সম্পর্কে অনেকের অনেক কিছু জানা অনেকের অনেক অজানা সবটাই দেখা মিলবে এই নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে। এটা আমাদের জন্য অনেকটাই আনন্দের। আর সব দর্শক আসবেন আমাদের এই আনন্দকে অর্থপূর্ণতা পাইয়ে দিতে এবং প্রেরণা দিতে। আমি নাটকটিতে প্রায় ১০টি চরিত্রে অভিনয় করেছি। বর্ণনা রীতির মাধ্যমে এ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রের রূপদান করেছি। কিভাবে মুহূর্তেই একটি চরিত্র থেকে আরেকটি চরিত্রে ট্রান্সফার হওয়া যায় সেই দিকটিও নাটকটিতে আছে। মঞ্চনাটকের দর্শক বাড়াতে ফেডারেশন কি ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে? এইচ আর অনিক : দর্শক বাড়াতে ফেডারেশন নতুন নতুন অনেক দলকে নিয়মিত হল বরাদ্দ দিচ্ছে যাতে করে নতুন নাটক নিয়মিত মঞ্চায়ন হতে পারে। নিয়মিত ভাল নাটক কিভাবে মঞ্চায়ন করতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। আর আমি মানতে নারাজ যে আমাদের মঞ্চে ভাল নাটক হচ্ছে না। আসলে দর্শক কম হওয়ার একটা প্রধান কারণ হচ্ছেÑ চারদিকের যানজট। আগে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যানজট কম থাকাতে দর্শক বেশি হতো আর এখন শুক্রবারেও যানজট বেশি থাকে। আর নাটকের মান নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। আমার মতামত হচ্ছে নাটক ভাল কি খারাপ সেটা সম্পূর্ণ দর্শক ঠিক করবে। নাটক ভাল হলে দর্শক হবে আর খারাপ হলে দর্শক কম হবে। থিয়েটারগুলোর আন্দোলন কতটা সচল বলে আপনি মনে করেন? এইচ আর অনিক : আমি মনে করি থিয়েটার আন্দোলনের গতি আগের তুলনায় আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সমাজে চলমান নানা অসঙ্গতি, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিবাদ করে এবং করবে। সমাজের নানা অন্যায়ের চিত্র নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরার তাগিদ দেয় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। চন্দ্রকলা থিয়েটারের অন্য নাটকগুলোর খবর কি? এইচ আর অনিক : চন্দ্রকলা থিয়েটার এই বছর ‘দ্বৈত মানব’ নামে আরও একটি নতুন নাটক মঞ্চে এনেছে। নাটকটি বাংলাদেশসহ ভারতের দিল্লীতে মোট ৪ বার মঞ্চায়িত হয়েছে। নিয়মিত মঞ্চায়িত হচ্ছে ‘তামাশা’, ‘তন্ত্রমন্ত্র’। পথনাটক ‘আজব বাক্স’, ‘যদি কিছু না মনে করেন’, ‘আত্মপরিচয়ের সন্ধানে’ নিয়মিত প্রদর্শিত হচ্ছে। ‘শেখ সাদী’ নাটকটি মঞ্চে আসার পর আমরা আরও একটি নতুন নাটকে হাত দেব। তারপর সব নাটক নিয়ে একটি নাট্যোৎসব করব আশা করছি। থিয়েটার নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? এইচ আর অনিক : চন্দ্রকলা থিয়েটার নাটককে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। মঞ্চ নাটককে পেশাদারিত্বের রূপ দেয়া। চন্দ্রকলা থিয়েটারের নাটক নিয়ে বিশ্বভ্রমণ করা আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম। থিয়েটার চর্চার মধ্যে দিয়ে বর্তমান এবং ভবিষ্যত যাতে অর্থপূর্ণতা পায় সেটা আমার ভাবনা এবং পরিকল্পনা। -সাজু আহমেদ
×