ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এই সাফল্য পরবর্তী ম্যাচগুলোর অক্সিজেন

প্রকাশিত: ১২:১৭, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

এই সাফল্য পরবর্তী ম্যাচগুলোর অক্সিজেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জিততে জিততে ড্র করা ম্যাচটা নিয়ে আক্ষেপ সাদউদ্দিনের। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে অবধারিত জয়টা ফসকে গেল। আসলে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলটা যখন আদিল খানের মাথায় পৌছে যায় তখন দারুন হেডে গোল করে সে অক্সিজেন দিয়ে দেয় ভারত দলকে। সমতার এই গোলটা ঠেকানো যেত যদি আমরা মার্কিংয়ে একটু সতর্ক থাকতে পারতাম। সিরিয়ান রেফারির প্রসঙ্গ টানলে সাদউদ্দিন বলেন, দুটো পেনাল্টির অন্তত একটি দেয়া উচিত ছিল। আর ম্যাচের শেষ মুহুর্তে জীবনের শটের বলটা আদিল ভলিতে ফিরিয়ে দিলেও সেটা গোললাইন অতিক্রম করেছিল। ভিডিওতে আমরা তাই দেখেছি। সেটাও এড়িয়ে গেল রেফারি। তারপরও বলবো, জয় আমাদের ভাগ্যে ছিল না। কারন নিজেরাই মিস করেছি কমপক্ষে চারটি সহজ সুযোগ। গোল মিসই ড্র করার অন্যতম কারন। স্বাভাবতই খারাপ লাগছে। তবে ড্র করলেও ভারতকে ওদের মাঠে এভাবে অসহায় বানাতে পেরে আবার ভালও লাগছে। তবে ফিরে আসা বোধহয় একেই বলে। বছর খানেক আগে এক দুর্ঘটনায় মোহাম্মদ সাদউদ্দিনের ফুটবল জীবনে নেমে এসেছিল অন্ধকার। বল পায়ে আর মাঠে নামতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন সবাই। মঙ্গলবার তার বিষাক্ত ‘ছোবল’ ভারতের জালে আছড়ে পড়তেই যেন নিশ্চুপ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। বিশাল স্টেডিয়ামে পিন পড়লেও তখন যেন তার শব্দ পাওয়া যেত। পদ্মাপাড়ে তখন অন্য ছবি। সেখানে সাদউদ্দিনকে নিয়ে তখন আবেগের প্রবল সুনামি। দেশের সবুজ জার্সিতে প্রথম গোল করে যেন জাতীয় নায়ক বনে গেলেন আবাহনীর এই ফুটবলার। কলকাতার বারুদে ঠাসা ভারত-বাংলাদেশ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করার যন্ত্রণায় সুনীল ছেত্রীর ভক্তদের হৃদয় যখন ক্ষতবিক্ষত, সাদউদ্দিনের মনে তখন অদ্ভুত এক প্রশান্তি। মাঠে নেমে তিনি যে অনেককে জবাব দিতে পেরেছেন, এটা ভেবেই তৃপ্ত সলামান খানের ভক্ত। বুধবারও যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের গোলদাতা। স্থানীয় সাংবাদিকদের বলছিলেন, বছর খানেক আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আমার ফুটবল জীবনে নেমে এসেছিল প্রশ্নচিহ্ন। বাঁ পায়ে প্রচ- চোট লেগেছিল। মাঠের বাইরে বসে অনেকগুলো ম্যাচ আমাকে দেখতে হয়েছিল। একজন ফুটবলারের মাঠের বাইরে বসে থাকা যে কতটা যান্ত্রণার তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। চোট সারিয়ে ফেরার পরে কত মানুষ কত রকমের কথা বলেছে। কঠিন সময়ে দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আমাকে ফিরে আসতেই হবে। নিজেকে প্রমাণ করতেই হবে। কলকাতায় এসে এ রকম একটা ম্যাচে গোল করতে পেরে আমার খুব ভাল লাগছে। সাদউদ্দিনের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে বলেছেন, দুর্ঘটনায় চোট পেয়ে বেশ কয়েক মাস সাদউদ্দিন খেলতেই পারেনি। কিন্তু ওর প্রচ- জেদ। মাঠে ফেরার জন্য প্রচুর খেটেছে। দারুণভাবে ফিরে এসেছে সাদউদ্দিন। ভাল খেলার তীব্র ইচ্ছা রয়েছে ওর। ওর খেলায় আমি সন্তুষ্ট। শুধু সাদউদ্দিন নন, বাংলাদেশের ফুটবল কলকাতার ফুটবলভক্তদেরও হৃদয় জিতে নিয়েছে। মঙ্গলবার সব অর্থেই যেন ফুটছিল যুবভারতী। শহরের সব রাজপথ এসে মিশেছিল বাঙালীর বড় আপন এই স্টেডিয়ামে। সুনীলদের জন্য গলা ফাটাচ্ছে যুবভারতী। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্বে রয়েছেন গুরপ্রিত সিং সান্ধু। কাতারের বিরুদ্ধে যিনি দেশের পরিত্রাতা হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। সবমিলিয়ে নিজেদের সেরাটা বের করে আনার মতোই পরিস্থিতি ছিল সাদউদ্দিনদের। জামালের বাঁক খাওয়ানো ফ্রি কিকের ফ্লাইটটাই বুঝতে পারেননি ভারতের শেষ প্রহরী। ডেড বল সিচ্যুয়েশন থেকে ফুল ফোটানোর পরিকল্পনা করেই কি নেমেছিল বাংলাদেশ? সাদউদ্দিন বললেন, প্রতিটি ম্যাচেই আমাদের কিছু পরিকল্পনা থাকে। ভারতের বিরুদ্ধেও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই আমরা খেলতে নেমেছিলাম। তবে খারাপ লাগছে শেষ মুহূর্তে আমরা গোল হজম করে বসায়। না হলে ম্যাচটা জিতেই আমরা কলকাতা ছাড়তাম। তবে আমরা হোমওয়ার্ক করেই খেলতে নেমেছিলাম। ভারত-কাতার ম্যাচ আমি দেখেছি। গুরপ্রিত ভাই ওদের ২৮টা শট বাঁচিয়েছিল। ওই রকম একজন গোলকিপারকে গোল করার অনুভূতিটাই অন্যরকম। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি বল ফলো করেছিলাম। যুবভারতীতে ম্যাচের বল গড়ানোর আগে অতি বড় বাংলাদেশ ফুটবলভক্তও সম্ভবত আশা করেননি ভারতকে এভাবে নাজেহাল করবে বাংলাদেশ। তাও সুনীলদের মাটিতে। সন্দেহ নেই যে খেলা জামালরা সল্টলেকের লক্ষ সমর্থকের বিরুদ্ধে খেলেছে, তা অবাক করার মতোই। ভারতের কোটি ফুটবলভক্তও কল্পনা করেননি এ রকম উজ্জীবিত ফুটবল খেলে ইগর স্তিমাচের ভারতকে থামিয়ে দেবেন জামাল-সাদউদ্দিনরা। র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারতের থেকে ৮৩ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ। নব্বই মিনিটের শেষে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে দেয়ার পর বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে’র মুখে আলোর পাশাপাশি হতাশাও। কারণ জেতা ম্যাচটা অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছে। সাদউদ্দিন বলছিলেন, দুর্ভাগ্যের ড্র সত্ত্বেও এই ম্যাচটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের পরবর্তী ম্যাচগুলোয় আমরা আরও ভাল খেলব। প্রতিবেশী দেশের মাঠে দুরন্ত পারফর্মেন্স আরও ভাল খেলার অক্সিজেন জোগাচ্ছে সাদউদ্দিনকে। অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে গোটা বাংলাদেশ শিবিরকেই। কলকাতা দর্শক প্রত্যাশার বাইরে অন্য এক বাংলাদেশকে দেখলো এদিন। যা তারা মনে রাখবেন অনেকদিন।
×