ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বড় পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলায় সাসপেন্ড হচ্ছেন অভিযুক্তরা

প্রকাশিত: ১১:৫১, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

বড় পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলায় সাসপেন্ড হচ্ছেন অভিযুক্তরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে বড় পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলার অভিযুক্তদের। পেট্রোবাংলা বলছে আদালতে চার্জশীট গ্রহণের শুনানির জন্য তারা অপেক্ষা করছিলেন। এখন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। আদালত যে দিন চার্জশীট গ্রহণ করেছে ওই দিন থেকেই সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ কার্যকর হবে। পেট্রোবাংলার সদস্য প্রশাসন মোস্তফা কামাল বুধবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা অপেক্ষা করছিলাম আদালতের চার্জশীট গ্রহণ করা পর্যন্ত। আদালত চার্জশীট গ্রহণ করেছে। তিনজন অভিযুক্তকে কারাগারে প্রেরণ করেছে। অন্যদের জামিন দিয়েছে। এখন তাদের সকলের বিষয়ে চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আদালত কোন মামলার চার্জশীট গ্রহণ করলে ওই মামলার অভিযুক্তরা সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকবেন। মামলা শেষ না হাওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। এক্ষেত্রে বড়পুকুরিয়া মামলার আসামিদেরও সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষকে চার্জশীটের কপি পাঠাতে বলেছি। চার্জশীট হাতে পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আদালতের চার্জশীট গ্রহণের তারিখ থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে। বড়পুকুরিয়ায় অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন এখন সরকারী বড় পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন। এরা হলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ খান এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান। এদের মধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য নিয়োগ হন রাষ্ট্রপতির আদেশে। অন্যদিকে আরপিজিসিএল এ কামরুজ্জামান রয়েছেন চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে। দুজনই একসময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এরমধ্যে কামরুজ্জামানের চুক্তির মেয়াদ চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে। খনি দুর্নীতি মামলায় চার্জশীট হলেও জ্বালানি মন্ত্রণালয় নীরব থাকায় সমালোচনা হচ্ছিল। সাধারণত মামলা হলেই অন্য মন্ত্রণালয় অভিযুক্তদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে থাকে। কিন্তু বড়পুকুরিয়া মামলার বিষয়ে ব্যতিক্রম দেখা যায়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের এমনকি চার্জশীট প্রদানের পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়নি জ্বালানি বিভাগ। মঙ্গলবার আদালত চার্জশীট গ্রহণের শুনানিতে আসামিদের সকলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে বুধবারও আদালতে শুনানি হয়। এসময় অভিযুক্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমেদ, ঘটনা উদ্ঘাটনের সময়ের মাইন অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু তাহের পমা, নূরুজ্জামান চৌধুরী ও স্টোর বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম খালেদুল ইসলামকে কারাগারে প্রেরণ করেছে। আদালতে উপস্থিত বাকি ২০ আসামিকে জামিন দেয়া হয়েছে। কারাগারে পাঠানো তিন কর্মকর্তাকে আগেই সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর বাইরে অভিযুক্তদের মধ্যে প্রকৌশলী এস এম নুরুল আওরঙ্গজেবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া মোঃ মাহবুবুর রহমান, প্রকৌশলী খুরশীদুল হাসান, মোঃ আমিনুজ্জামান রয়েছেন অবসরে। এছাড়াও চার্জশীটে নাম আসা সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোঃ শরিফুল আলম অবসরে রয়েছেন। এর বাইরে আসামিদের মধ্যে দুজন অন্য কোম্পানিতে বদলি হয়ে গেছেন। এরমধ্যে সব থেকে আলোচিত ছিলেন আবুল কাশেম প্রধানিয়া। খনি দুর্নীতির অভিযুক্ত হিসেবে তার নাম আসে। ওই সময় যাদেরই নাম আসে তাদের বেশিরভাগকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু বড়পুকুরিয়াতে কোম্পানি সচিবের দায়িত্বে থাকা কাসেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে বদলি করা হয়। এছাড়া ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে বদলি হয়ে গেছেন। এছাড়া উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ জোবায়ের আলী, ব্যবস্থাপক মোঃ আরিফুর রহমান, সৈয়দ ইমান হাসান, উপ ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, মোঃ মোর্শেদুজ্জামান, মোঃ হাবিবুর রহমান, মোঃ জাহেদুর রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বর্মন, মোঃ শোয়েবুর রহমান, অশোক কুমার হালদার, সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ মনিরুজ্জামান বড়পুকুরিয়াতে কর্মরত রয়েছেন। দুদক অভিযোগপত্রে জানায়, ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা ৮৪ পয়সা। এ ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ২৪ জুলাই পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন।
×