ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে একাধিক প্রার্থী

শীর্ষ নেতৃত্বে দ্বন্দ্বের মধ্যেই ২৮ ডিসেম্বর জাপা সম্মেলন

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

শীর্ষ নেতৃত্বে দ্বন্দ্বের মধ্যেই ২৮ ডিসেম্বর জাপা সম্মেলন

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যেই জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। আগামী ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ২৮ ডিসেম্বর জাপার তবে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। তবে সম্মেলন কেন্দ্র করে রওশন এরশাদ ও দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়ছে। উভয়পক্ষই পার্টির প্রভাবশালী নেতাদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। অবশ্য নির্বাচিত এমপিদের বেশিরভাগই আছেন বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ চান দলের পুরো নেতৃত্ব নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এতে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন জিএম কাদেরবিরোধী দলের অন্তত আট কেন্দ্রীয় নেতা। বর্তমান জাপা চেয়ারম্যান চান গঠনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার। জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদ নিজ হাতে তাকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনীতিতে দলের অবস্থান বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। জাতীয় পার্টির অন্তত পাঁচ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, এই মুহূর্তে জাপার দৃশ্যমান তেমন কোন দ্বন্দ্ব দেখা না গেলেও যে কোন সময় তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। জাতীয় সম্মেলন নিয়ে আগামী মাস নবেম্বর থেকেই উভয়পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেবে। এমনকি চেয়ারম্যান পদ কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের জের শেষ পর্যন্ত দলকে আবারও ভাঙ্গনের দিকে ঠেলে দেয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। দলের নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমৃত্যু চেয়ারম্যান ছিলেন এইচএম এরশাদ। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন আপন ইচ্ছায় মহাসচিব নির্বাচন ও দল পরিচালনা করেছেন। যখন খুশি মহাসচিব পরিবর্তন করেছেন, যাকে ইচ্ছে বহিষ্কার করেছেন, আবার ঘরেও তুলেছেন। তবে এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। সম্মেলনে একাধিক চেয়ারম্যান ও মহাসচিব প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। ভোটের মধ্য দিয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনের কথাও বলছেন অনেকে। বরাবরের মতো এবারও রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের বাইরে জাপার কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হবে। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত এরশাদের অবর্তমানে দলকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রয়াসে সম্মেলন ঘিরে কিছুটা ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতাকর্মীরা। এদিকে কাউন্সিলে শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য শুধু চেয়ারম্যান ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদ ঘোষণা দিতে চায় দলটির একাংশের নেতারা। চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদই থাকছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে মহাসচিবসহ অন্যান্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে কাউন্সিলের পর। কাউন্সিলে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে এসব প্রস্তাব অনুমোদন করিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে এ বিষয়ে বলেন, সম্মেলন বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বাস করি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পার্টি নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় পার্টি সংসদে ও রাজপথে জনগণের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকবে। জানা গেছে, মহাসচিব পদ নিয়ে যদি কাউন্সিলে কোন ঘোষণা আসে তাহলে পেশিশক্তির মহড়া হতে পারে। এরশাদের মৃত্যুর পর প্রথম কাউন্সিলে এই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না সিনিয়র নেতারা। তারা চাইছেন শান্তিপূর্ণ কাউন্সিল শেষ করতে। পরে দেবর-ভাবি বসে চূড়ান্ত করুক সবকিছু। মহাসচিব পদে বর্তমান মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের নাম আলোচনায় রয়েছে। পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য নেতাকর্মীরা আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনার জন্য জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের বাসায় যোগাযোগ করছেন। এদিকে কয়েক দফা তারিখ বদলের পর ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত করা হলেও ৩৫ জেলা কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করা কঠিন হবে। তবে কাউন্সিল নিয়ে খুব একটা তোড়জোড়ও দেখা যাচ্ছে না পার্টির অভ্যন্তরে। হাওলাদার এ বিষয়ে বলেন, আমার হাতে যতদিন দলের মহাসচিবের দায়িত্ব ছিল ততদিন নিবেদিতপ্রাণ হয়েই কাজ করেছি। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছু ভুল ত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু কখনই দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিইনি। ভবিষ্যতেও যদি আমাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে জাপাকে প্রতিষ্ঠিত করার আরও চেষ্টা চালিয়ে যাব। কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার মাসখানেক পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়নি। জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘এবার সম্মেলন হবে বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য। সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেবেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি ইউ তাজ রহমান বলেন, এইচ এম এরশাদের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তার অপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংগঠনকে ঢেলে সাজার সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি সফল সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব জাতীয় পার্টিকে আরও এগিয়ে নেবে।
×