ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কলুষিত ছাত্র রাজনীতি;###;নাজিব আহমেদ ভূঁইয়া

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ছাত্র পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ছাত্র পিটিয়ে হত্যা

আবরার ভাইকে হত্যা করার পরদিন। দুপুরবেলা। মা-বাবা সবার সঙ্গে ভাত খাচ্ছি। বাবা ভাত খেতে খেতে একপর্যায় বললেন, ‘শুন, এই ফেসবুক-টেসবুকে উল্টাপাল্টা কিছু দয়া করে পোস্ট কর না।’ আমি ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়ে বাবার দিকে তাকালাম। অনেকগুলো কথা নিজের ভেতর থেকে ঠোঁটের কাছাকাছি চলে এসেছিল, কিন্তু ঠোঁট থেকে আর বের হতে পারেনি, ফিরে চলে গেল। বুঝতে পারলাম, আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যে দেশে দেশের কথা স্বাধীনভাবে বললে প্রাণ হারাতে হয়। বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনা শুনেননি এমন মানুষকে বাংলাদেশে হয়ত বা খুঁজে পাওয়া যাবে না। বলা হচ্ছে ফেসবুকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কিছু চুক্তির সমালোচনা করার জের ধরে আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়। সেই সঙ্গে বলা হচ্ছে আবরার ফাহাদ নাকি শিবির কর্মী। এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই এই হত্যাকা-টি ঘটেছে। আর হত্যাটি করেছে বুয়েট ছাত্রলীগের কতিপয় সদস্য। তাদের উদ্দেশ্য নাকি হত্যা করা ছিল না। তাদের ইচ্ছা ছিল বেদম প্রহারের পর ছেড়ে দেয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে মারা যায়। এখন অবাক করার বিষয় হলোÑ অনেকে বলছেন, ‘আরে, তারা তো আসলে মেরে ফেলতে চায়নি’ এ রকম মানুষের কথা শুনলে মনে হয় একটি অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছি। প্রায় সবাই এর পেছনের কারণগুলো খুঁজছেন। একেকজন একেক কথা বলছে। আসল কথা হলোÑ যখন একজন মানুষের মনের ভেতরে একটা ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব জন্মায় তখন সেই মানুষকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। ঠিক এই ব্যাপারটাই আবরার ফাহাদ হত্যার কারণ। ঠিক এই কারণেই সেইসব ছাত্রলীগ কর্মীদের এই কাজটি করতে একটুও হাত কাঁপেনি। প্রশ্ন হলো এই ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাবটি তাদের মধ্যে এলো কোথা থেকে? কারণ তারা জানে তাদের ‘কিস্সু’ হবে না। খুব বেশি হলে তাদের পুলিশ ধরবে, এবং দুই একদিনের মধ্যে তারা ছাড়া পেয়ে যাবে, এবং ছাড়া পেয়ে তারা আবার তাদের অপরাধ শুরু করবে। যারা মনে করেন যে এই ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তাদের বলি, ভালভাবে শুনে নেন, এটা কোন ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা নয়। এই ঘটনার আগেও বহু ছাত্র এই নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে এসেছে। দুর্ভাগা আবরার ফাহাদ, নির্যাতনের পর মৃত্যু তাকে আলিঙ্গন করেছে। আপনারা ছাত্রলীগ বলেন, ছাত্রদল বলেন, বা ছাত্রশিবিরই বলেন, তারা আজকের দিনে আসলে ভিন্ন নাম একগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কেবল নাম পাল্টায়, কাজ সেই আগের মতোই রয়ে যায়। যে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দেশপ্রেমিক নেতারা সেই লীগের সঙ্গে আজকের কোন মিল নেই। বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে থাকলে খুব কষ্ট পেতেন। তাঁর কন্যা পিতার কষ্ট বুঝেছেন। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কথায় অনড় থাকবেন, অর্থাৎ ‘কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’। মগবাজার, ঢাকা থেকে
×