ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ সামনে রেখে বললেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে

আমার তরুণ ‘ব্রিগেড’ লড়াই করতে জানে

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

আমার তরুণ ‘ব্রিগেড’ লড়াই করতে জানে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১৫ অক্টোবর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইগর স্তিমাচের ভারতের সামনে জেমি ডের বাংলাদেশ। শক্তিশালী কাতারকে রুখে দেয়ার পর সুনীল ছেত্রীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন দেশের সমর্থকরা। অন্যদিকে, এই কাতারের কাছেই ঘরের মাঠে বাংলাদেশ হার মেনেছে বৃহস্পতিবার। ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচে দুই প্রতিবেশী দেশের লড়াইয়ের আগে সুনীল-গুরপ্রীতদের নিয়ে চিন্তার কথা জানালেন বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ-ফুটবলের উন্নতির রোডম্যাপও জানালেন। ভারতের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? শক্তির দিক থেকে প্রায় সমান সমান দুটো দল একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে, না কি ভারত এগিয়ে থেকে শুরু করছে? জেমি ॥ কাতারের বিরুদ্ধে ভারত দুর্দান্ত খেললেও ওমানের কাছে কিন্তু ওরা হেরেছে। আফগানিস্তান, কাতারের কাছে আমরা হেরে গেলেও সেই ম্যাচগুলোই আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। পয়েন্টের দিক থেকে বিচার করলে আমরা ভারতের থেকে মাত্র এক পয়েন্টে পিছিয়ে। ১৫ তারিখ আমার ছেলেরা কিন্তু ভারতকে সহজে ছেড়ে দেবে না। তবে এটা ঠিক, ম্যাচে ফেবারিট হিসেবেই নামছে ভারত। আপনার দলের ক্যাপ্টেন জামাল ভূঁইয়ার ফুটবল হাতেখড়ি ডেনমার্কে। সেখানকার ক্লাব ফুটবলেও খেলেছেন। ইউরোপে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে জামালের। এশিয়ার কঠিন কোন লীগে যদি আপনার ছেলেরা খেলেন, তা হলে তো সার্বিকভাবে দলটাও শক্তিশালী হয়। জেমি ॥ আমার দলের সব ফুটবলারই বাংলাদেশের ভূমিপুত্র। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবেই তারা ফুটবল খেলে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ইউরোপ বা এশিয়ার বড় বড় লীগে খেললে, কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে, ফুটবলাররা সবদিক থেকেই লাভবান হয়। ওদের খেলাতেও উন্নতি ঘটে। বিদেশের লীগে খেলার অভিজ্ঞতা অবশ্য রয়েছে জামালের। তার প্রতিফলন ঘটে ওর খেলায়। অনেকেই বলছেন, ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির পেছনে রয়েছে আইএসএল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফুটবলাররা এই লীগে খেলেন। কিন্তু, আইএসএলে বাংলাদেশের কোন ফুটবলারকে খেলতে দেখা যাচ্ছে না। অনেক দিন আগে মামুনুল খেলেছিলেন। এখন আর কেউ নেই। আপনার দলের ছেলেরা যদি আইএসএলে খেলতেন, তা হলে তো তারাও লাভবান হতেন। জেমি বললেন, গত কয়েক বছরে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিতে আইএসএল বড় ভূমিকা নিয়েছে। সেটা ওদের খেলা দেখলেই বোঝা যায়। অভিজ্ঞ বিদেশী ফুটবলারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করলে, ওদের থেকে অনেক কিছু শেখার, জানার সুযোগ পাওয়া যায়। আমার দলেও অনেক প্রতিভাবান প্লেয়ার রয়েছে। ওরা যদি ইউরোপ বা এশিয়ার বিভিন্ন লীগে খেলার সুযোগ পায়, তা হলে তা বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নতিতেই সাহায্য করবে বলে আমার মনে হয়। ওরা নিজেদের প্রতিভাও সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের ফুটবল মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতের ফুটবল মৌসুম সবে শুরু হয়েছে। এটা কি কোনভাবে প্রভাব ফেলতে পারে ১৫ তারিখ? জেমির জবাব, আমার মনে হয় না। সুনীলরা (ছেত্রী) কিন্তু এখনও একটাও লীগের ম্যাচ খেলেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশে ফুটবল মৌসুম মাত্র কয়েক দিন আগে শেষ হয়েছে। লীগ শেষের পর থেকেই আমরা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের কোন সমস্যা হবে না। তার উপরে কাতারের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে খেলে এখন ভারতের বিরুদ্ধে আমরা নামছি। আমার ছেলেরা খেলার মধ্যেই রয়েছে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বাঙালী দর্শকদের সামনে খেলতে হবে আপনাদের। কিন্তু সেদিন কেউ আপনাদের সমর্থন করবেন না। সুনীলদের জন্য সবাই সেদিন গলা ফাটাবেন। কলকাতার দর্শকদের সামনে খেলতে নামার আগে কি নার্ভাস লাগছে? জেমির উত্তর, কলকাতায় দারুণ একটা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চলেছি আমরা। এ রকম একটা ম্যাচের দিকেই তো তাকিয়ে থাকে ফুটবলাররা। আমার দলের বেশিরভাগ ফুটবলারই অল্প বয়সী। এই ধরনের ম্যাচ ওদের উন্নতিতে সাহায্য করবে বলেই আমার ধারণা। আমরা একেবারেই নার্ভাস নই। সুনীলের জন্য নিশ্চয়ই বিশেষ কোন পরিকল্পনা রয়েছে আপনার। সুনীলকে থামানোর জন্য কি জামাল ভূঁইয়াকে ব্যবহার করবেন? জেমি বললেন, সুনীল বড় ফুটবলার। ওর উপরে অবশ্যই বিশেষ নজর থাকবে। জামাল আমার দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে জামাল দারুণ পারফর্ম করছে। তবে সুনীল, উদান্তাদের থামাতে শুধুমাত্র জামাল নয়, গোটা দলটাকেই একত্রিত হয়ে লড়তে হবে। ভারতীয় ফুটবলারদের বেশি সময় পায়ে বল রাখতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের জাতীয় দলকে কোচিং করানোর দায়িত্ব নিলেন কেন? জেমির কথায়, যে কোন দেশের ফুটবল দলকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ সব সময়ে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ দলে প্রচুর প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে। তবু দলটা ভাল ফল করতে পারছিল না। দলের ভাগ্য ফেরানোর এই কঠিন চ্যালেঞ্জটাই আমাকে কোচের দায়িত্ব নিতে উৎসাহিত করেছে। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট দারুণভাবে এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্ব ক্রিকেটের হেভিওয়েট শক্তিদের নিয়মিত হারাচ্ছে তারা। তুলনায় বাংলাদেশের ফুটবল সেভাবে এগোতে পারেনি। বাংলাদেশ ফুটবলের সমস্যাটা ঠিক কোন জায়গায়? জেমি জানালে, বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ফুটবলের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো অর্থে। ক্রিকেটের সঙ্গে বড় বড় স্পন্সর যুক্ত থাকায় পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য সমস্যা হয় না। দুর্ভাগ্যবশত ফুটবলে ক্রিকেটের মতো স্পন্সর নেই। অর্থের অভাবে আমরা চাইলেও সময় মতো কোন পরিবর্তন ফুটবলে আনতে পারি না। এই কারণেই বাংলাদেশের ফুটবল ক্রিকেটের থেকে পিছিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ফুটবল মানের উন্নয়নের জন্য কী দরকার? জেমির জবাব, বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নতির জন্য দেশের ক্লাবগুলোকে আরও পেশাদার হতে হবে। ক্লাবগুলোর পরিকাঠামো উন্নত করার পাশাপাশি জুনিয়র ফুটবলের উন্নতির দিকেও নজর দিতে হবে। জুনিয়র ফুটবলারদের টেকনিকের পাশাপাশি ফুটবল ইনটেলিজেন্স-এরও যাতে উন্নতি হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। ফুটবলাররা ভাল ট্রেনিংয়ের সুযোগ পেলে, আরও বেশি ম্যাচ খেললে, তাতে জাতীয় দলেরই সুবিধা হবে।
×