ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা শ্রমিক লীগের জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ;###;দাবি মেনে নেয়ার পরও বুয়েটে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

অপরাধী পার পাবে না ॥ অন্যায়-অবিচার সহ্য করিনি, ভবিষ্যতেও করব না

প্রকাশিত: ১১:১৮, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

অপরাধী পার পাবে না ॥ অন্যায়-অবিচার সহ্য করিনি, ভবিষ্যতেও করব না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের পর বুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ার পরও তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সাধারণ ছাত্রদের ১০ দফা দাবিই তো মেনে নিয়েছেন বুয়েট উপাচার্য। এরপরও তারা কেন আন্দোলন করবে, আন্দোলনের যৌক্তিকতা কি থাকতে পারে। কোন অন্যায়-অবিচার আমরা সহ্য করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। যারাই করুক, অপরাধী সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কোন দল করে সেটা না, খুনীকে খুনী হিসেবে দেখি। অন্যায়কারীকে অন্যায়কারী, অত্যাচারীকে অত্যাচারী হিসেবে দেখি। এ ধরনের অন্যায় করলে কখনও তা মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ রাখতে হবে। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক চুক্তি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের ‘জ্ঞানপাপী’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই চুক্তি নিয়ে কিছু জ্ঞানপাপী মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। লাভ-ক্ষতির হিসাব করলে এখানে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি। তবুও মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য জেনে-শুনে জ্ঞানপাপীরা কথা বলে যাচ্ছে। বাস্তবে ভারতের থেকে যদি কেউ ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারে তবে তা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। শনিবার খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী গত নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ করা বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে খালেদা জিয়া দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, জনগণের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। কাজেই বিগত নির্বাচনে তারা যে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন সেটা সত্য হলে তারাও তো (বিএনপি) আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিত। যেটা তারা পারেনি। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে একইস্থানে দ্বিতীয় অধিবেশনে মহিলা শ্রমিক লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে সংগঠনের নতুন সভাপতি মনোনীত হয়েছেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সুরাইয়া আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন কাজী রহিমা আক্তার সাথী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষাঙ্গনে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পাশাপাশি অন্যায়কারী যে কারও বিরুদ্ধেই কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কথা স্পষ্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ রাখতে হবে। কোন অন্যায় অবিচার আমরা সহ্য করব না। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা খুনীকে খুনী হিসেবেই দেখি। ঘটনা খবর শোনার পর তিনি এক মিনিটও দেরি করেননি। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এ ধরনের অন্যায় কখনই মেনে নেয়া যায় না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খবরটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি কারো আন্দোলন বা নির্দেশের অপেক্ষা করিনি। আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি- ওদের গ্রেফতার করো এবং ভিডিও ফুটেজ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করও।’ এই তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সাধারণ তদন্তে বিঘœ সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের সময় তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) কেন বাধা দিয়েছিল আমি জানি না। পুলিশের আইজিপি এসে তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী) বিষয়টি জানানোর পর ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী ভিডিও ফুটেজের কপি সরবরাহ এবং আসামিদের চিহ্নিত করার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশও তিনি দেন বলে জানান। তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ আনতে পুলিশকে বাধা প্রদান না করলে আরও আগেই অপরাধী চিহ্নিত করা যেত, অনেকেই পালাতে পারত না। পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে এখানে সন্দিহান হওয়ার কিছু ছিল না উল্লেখ করে তিনি যারা খুনের সঙ্গে জড়িত তারাই এই বাঁধার সৃষ্টি করেছে কিনা- সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অনেকক্ষণ তাদের (ফুটেজ সংগ্রহে আসা পুলিশ) আটকে রাখা হয়। আর এর মাধ্যমে আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগই করে দেয়া হয় কিনা- সেটা আন্দোলনকারীরা বলতে পারবে। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও এইচএম এরশাদ আমলে একের পর এক ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটলেও একটিরও বিচার হয়নি, কেবল আওয়ামী লীগই বিচার করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বুয়েটে ছাত্রদলের টগর ও মুকী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে সাবেকুন্নাহর সনি নিহত হলো, তখন কে প্রতিবাদ করেছে? তখন বুয়েটের এ্যালামনাই এসোসিয়েশন তারাও নামে নাই, তাদেরও তো কথা বলতে বা কোন প্রতিবাদ করতে দেখিনি। তিনি বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সবার কথা বলার অধিকার থাকে, বলতে পারে। অন্তত সেই সুযোগটা আছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যখন জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জাতির পিতার খুনীদের পুরস্কৃত করেছে, যুদ্ধাপরাধী এবং সাত খুনের আসামিকে ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছে- তখন কে প্রতিবাদ করেছে? তখন মানবাধিকারের চিন্তা কোথায় ছিল, তখন এত ন্যায়-নীতিবোধ কোথায় ছিল? তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্র ঢোকানোর জন্য সামরিক শাসকদের দায়ী করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার আমল থেকে শুরু করে এরশাদের আমলে, সব সময় শিক্ষাঙ্গনে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছিল। হিজবুল বাহার নামে যে জাহাজ জাতির পিতা বাংলাদেশের জনগণকে হজ করতে পাঠাতেন, হজ বন্ধ করে দিয়ে সেটা হয়ে গেল প্রমোদতরী। ও প্রমোদতরীতে করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে অস্ত্র, অর্থ তুলে দিয়ে বিপথে চালুও করা হয়েছিল। শিক্ষাঙ্গনে পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এ সময় সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে লেখাপড়া শিক্ষা হবে, পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই দেশকে জাতির পিতা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমরা একে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে চাই। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা পেয়েছিল, এটুকু বলতে পারি গত ১০ বছরের শাসনে সে সম্মান আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। তাঁর সরকারের সময়ে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, আমরা চাই ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা গড়ে তোলায় নারীরা চলমান বিশ্বের প্রতিযোগিতায় নিজেদের যেন মেলে ধরতে পারে- বর্তমান সরকার তার সুযোগ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিকাশ আজ বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলাধুলায়ও আমাদের মেয়েরা কম যাচ্ছে না। ১৫ বছর বয়সীদের আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় তারা ভাল করছে। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যাচ্ছে খেলাধুলা ও লেখাপড়ায় ছেলেদের থেকে আমাদের মেয়েরাই এগিয়ে রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সমাজকে পাল্টে ফেলে নারী-পুরুষের সমান অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আর সুযোগ পেলে আমাদের নারীরাও যে তাদের দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারে সেটা আজ প্রমাণিত সত্য। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনসহ পেশাগত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর সাফল্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থানটা যে জায়গায় জাতির পিতা নিতে চেয়েছিলেন সেটা আমরা করতে পেরেছি। আজ সবক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কর্মক্ষেত্রে সম-অধিকার নিয়ে কাজ করছে। প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী রাসুল মুহাম্মদ (সা:) স্ত্রী বিবি খাদিজার (রা:) প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বিবি খাদিজা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন এবং এজন্য উঠের পিঠে চড়ে বিভিন্ন দেশে যেতেন। কাজেই নারীদের ধর্মের নামে ঘরে আটকে রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, আমরা চাই ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা গড়ে তোলায় নারীরা চলমান বিশ্বের প্রতিযোগিতায় নিজেদের যেন মেলে ধরতে পারে- বর্তমান সরকার সে সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার সময় নারীরা যাতে প্রতারকদের কবলে পড়তে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নারীদের বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার আগে আমরা স্মার্ট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন এবং মোবাইল নম্বর দিচ্ছি। ইচ্ছা করলেই তারা বিদেশে যেতে প্রবাসী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সরকারকে না জানিয়ে অনেকেই লোভে দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদেরও কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে এবং সমাজের অন্ধকার দিকগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি অঞ্চলের পানীয় জলের অভাব পূরণে সীমান্তবর্তী ফেনী নদী থেকে সামান্য পরিমাণ ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ভারতকে প্রদানের এবং আমদানি করা এলপিজি থেকে বাল্ক এলপিজি ত্রিপুরায় রফতানি করা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে এর অহেতুক সমালোচকদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, অতীতের জিয়া, খালেদা জিয়া এবং এরশাদ সরকার মুখে সমালোচনা আর তলে তলে অতি ভারত তোষণ নীতি চালিয়ে গেছে। ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কথা বলারই সাহস দেখাতে পারেনি। ভারত থেকে যদি কেউ ন্যায্য হিস্যা আদায় আদায় করতে পারে তবে তা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। এ বিষয়ে তিনি গঙ্গার পানি চুক্তি, স্থলসীমানা চুক্তি করে উৎসবমুখর পরিবেশে এবং শান্তিপূর্ণ ছিটমহল বিনিময় ও সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যকার চুক্তি সম্পর্কে বলেন, লাভ-ক্ষতির হিসাব করলে এখানে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি। কাজেই মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য জেনে শুনেই জ্ঞানপাপীরা কথা বলে যাচ্ছেন। বিগত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালেও বিএনপি মাত্র ২৯ আসন পেয়েছিল। আর ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল বলে খালেদা জিয়া দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। কাজেই বিগত নির্বাচনে তারা যে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন সেটা সত্য হলে তারাওতো আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিত। যেটা তারা পারেননি। বিগত নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) পারবে কিভাবে? তারা তো নির্বাচনটাকে একটা বাণিজ্য হিসেবে নিয়ে প্রতিটি আসন তিনজনের কাছে মনোনয়ন বিক্রি করেছে। কেউ লন্ডন থেকে টাকা খেয়েছে, কেউ গুলশান অফিস আবার কেউ পল্টন অফিস থেকে টাকা খেয়েছে। কারও নাম উল্লেখ না করে সরকারপ্রধান বলেন, যারা অবৈধ সামরিক সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, সব সময় অনির্বাচিত সরকারের তাবেদার এবং তাদের দয়ায় সরকারে ছিলেন, দুর্নীতির দায়ে সাজা ভোগ করেছেন, তারা আবার নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন কিভাবে? নারী অধিকার রক্ষা করা এবং সমাজে নারীদের আপনস্থান তৈরি করে নেয়া, সেটা নারীদেরই করতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ যে বলে গিয়েছিলেন-নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দেবে অধিকার, হে বিধাতা। সে কথা আমরা আর বলতে চাই না।’ তাই নারীদের নিজেদের স্থান নিজেদেরই করে নিতে হবে। আজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে বিমান, নৌ, সেনা বাহিনী, জজ, পাইলটসহ সর্বক্ষেত্রে নারীরা নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবোই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশান জাহান সাথী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার ভূইয়া এমপি সংগঠনের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। দলের কার্যকরী সভাপতি এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সুরাইয়া আক্তার স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং দলের সহ-সভাপতি সুলতানা আনোয়ার শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মহিলা শ্রমিক লীগের কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মহিলা শ্রমিক লীগের কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সভাপতি রওশান জাহান সাথী দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সকল শহীদ এবং বিভিন্ন গণআন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী আওয়ামী লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশ মহিলা শ্রমিক লীগ আত্মপ্রকাশ করে এবং এবার সংগঠনটির দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। সভাপতি সুরাইয়া, সম্পাদক কাজী রহিমা ॥ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। এতে মহিলা শ্রমিক লীগের নতুন সভাপতি মনোনীত হয়েছেন সুরাইয়া আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন কাজী রহিমা আক্তার সাথী। শনিবার সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের সর্বসম্মতিক্রমে তাদের সংগঠনের শীর্ষ দুই পদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একযুগেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হয়েছে মহিলা শ্রমিক লীগের এই জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সারাদেশের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের সর্বসম্মতিক্রমে মহিলা লীগের নতুন কমিটি করা হয়েছে। মহিলা শ্রমিক লীগের সাবেক কার্যকরী সভাপতি সুরাইয়া আক্তারকে সভাপতি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুন্নাহার ভূইয়াকে কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই কমিটির নেতারা ৪৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×