স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্যের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামাপ্রসাদ রায় ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষের অর্থ অগ্রিম না দেয়ায় মৎস্যজীবী ও জেলেদের বনদস্যুদের মতো হত্যা করার হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মৎস্যজীবী ও জেলেরা।
সংবাদ সম্মেলনে ফুলতলা উপজেলা দামোদর গ্রামের মৎস্যজীবী সুপ্তি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও মৎস্যজীবী বাচ্চু আলী বেগ বলেন, গত জুন মাসে সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্যের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমাদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে নিয়ে যায় এবং সুন্দরবনের দুবলারচর থেকে পাস নিয়ে আমরা বঙ্গোপসাগরে ইলিশ আহরণ শুরু করি। তিনি মাসে আড়াই লাখ টাকা চুক্তিতে আমাদের ইলিশ আহরণের জন্য পাস দিতে সম্মত হন। আমরা তিন মাসের চুক্তির সাড়ে ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করি। ইতোমধ্যে মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর আমরা সাগর থেকে উঠে আসার জন্য প্রস্তুতি নেই। এ সময় তিনি তার কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের কাছে এসে মাসিক চুক্তির টাকা অগ্রিম দাবি করেন। আমরা তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে তিনি ফাঁকা ফায়ার করে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং জেলেদেও বেদম প্রহার করেন। এতে অনেক জেলে মারাত্মক আহত হন। যার মধ্যে হান্নান গাজী নামের একজন জেলে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নীলকমলের ওই ওসি এবং কর্মচারীরা দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রলারযোগে সাগরে গিয়ে জেলেদের মাছ ধরা ট্রলার তাড়া করেন। পাখি শিকারের মতো এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন। জেলেদের পাস পারমিট ট্রলার আটক করে জোরপূর্বক নীলকমল নিয়ে আসেন। সিওআর করার নামে প্রতি ট্রলার থেকে কমপক্ষে এক লাখ টাকা করে আদায় করেন সরকারী রসিদ ছাড়াই। পরে রাজস্ব রসিদ চাইলে ওসি জেলেদের পিটিয়ে পিঠের চামড়া তুলে ফেলার হুমকি দেয়। এছাড়া ৩২টি ট্রলারের প্রতিটি থেকে ১০ পিস করে ৩২০ পিস নেন এসিএফ এবং ডিএফও’দের দেয়ার কথা বলে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, নীলকমলের হাতিমঘানি, কলাতলা, সেচখালি ও বালির গাং এলাকায় শত শত জেলে প্রতি গোনে মাছ/ কাঁকড়া ধরে চুক্তির মাধ্যমে। এই জেলেদের বহদ্দার শংকর (ডুমুরিয়া), আশরাফুল (গড়ইখালী), মালেক গণির (গোবরা) মাধ্যমে যাবতীয় বাজার ঘাট, স্টাফরা পেয়ে থাকেন এবং মাসিক তিন লাখ টাকা ঘুষ নেন। আগে তাদের ঘুষ সংগ্রহ করতেন কয়রার মুসা মেম্বার ও মাজেদ। এর আগে, ২০১৮ সালে কালাবগি স্টেশনে কর্মরত থাকাকালে বন কর্মকর্তা শ্যামাপ্রসাদ রায়ের বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় চাঁদাবাজির মামলা হয়েছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস, মোঃ আলী হায়দার, মোঃ আসলাম হোসেন প্রমুখ। পরে এ বিষয়ে জানতে নীলকমল অভয়ারণ্যের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামাপ্রসাদ রায়ের মোবাইল ফোনে ফোন দিলে তিনি তার ফোন বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে সুন্দরবন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বসিরুল আল মামুন বলেন, জেলে ও মৎস্যজীবীদের অভিযোগের কথা আমি শুনেছি। অবিলম্বে তদন্ত করে নীলকমল অভয়ারণ্যের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামাপ্রসাদ রায়সহ অভিযুক্ত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: