ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হস্তান্তরিত ভবন আড়াই বছর তালাবদ্ধ ॥ ইউপি কার্যক্রম চলছে স্কুলে

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

হস্তান্তরিত ভবন আড়াই বছর তালাবদ্ধ ॥ ইউপি কার্যক্রম চলছে স্কুলে

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ নির্মাণ কাজ শেষ ও ভবন হস্তান্তরের আড়াই বছর অতিক্রম হলেও মোরেলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের কার্যক্রম শুরু হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের স্বেচ্ছাচারিতায় চেয়ারম্যানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিনশেড একটি কক্ষে কোনমতে চলছে পরিষদের দাফতরিক কার্যক্রম। মূল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপিত হওয়ায় সেবা বঞ্চিত জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তবে চেয়ারম্যানের দাবি নিজের শারীরিক অসুস্থতা ও পরিষদের সব সদস্যের সম্মতিতে তার বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে পরিষদের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পরিষদের ভবন নির্মাণকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ জুলাই মাসে চিংড়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ শুরু হয়। তিন তলা ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় এলজিইডি ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। কাজ সম্পন্ন করে ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহাদাত এন্টারপ্রাইজ পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ভবন হস্তান্তর করে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নারকেলবাড়িয়া বাজারের সংলগ্ন চারটি গ্রামীণ রাস্তার মিলনস্থলে একটি তিনতলা বিশিষ্ট সুউচ্চ একটি ভবন। ভবনের উপরে চিলেকোঠায় লেখা চিংড়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। নিচতলা ফাঁকা। দোতলা ও তিনতলার কক্ষগুলো তালাবদ্ধ। স্থানীয় কিছু লোকের সঙ্গে কথা হয় আমাদের। তারা জানান, পরিষদের চেয়ারম্যান আক্কাস আলী বুলু ধরাধোয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যার ফলে নিজস্ব সুবিধার জন্য তিনি তার বিদ্যালয়ের পাশে ধরাধোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষে পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করেছেন। যেখানে তিনি পরিষদের সব ধরনের কাজ করে থাকেন। যার ফলে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাছির হাওলাদার বলেন, চেয়ারম্যান তার স্কুলে পরিষদ নিয়ে গেছে। হেঁটে দুই আড়াই কিলো রাস্তা আমাদের যেতে কষ্ট হয়। হোসেন শেখ, মনির হোসেন, মাহমুদ মৃধা, রাসেল সরদার, ইয়াছিন কবিরসহ কয়েক জন বলেন, পরিষদে আমাদের অনেক কাজ থাকে। আমরা কাজের জন্য আসি, কিন্তু এখানে কখনও চেয়ারম্যান বা কোন মেম্বর আসেন না। মূল পরিষদ রেখে তাদের পছন্দমতো জায়গায় তারা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় স্থাপন করেছেন। সেখানেও কোনমতে কাজকর্ম করেন। যার ফলে আমরা সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছি পরিষদের সেবা থেকে। চিংড়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলায়েত হাওলাদার বলেন, নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরে আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পরিষদে আসবেন। আমাদের প্রয়োজন দেখবেন, সুবিধা অসুবিধায় পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু পরিষদের এত বড় ভবন থাকা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান পরিষদের সদস্যদের নিয়ে তার স্কুলে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে অস্থায়ী কার্যালয় করেছেন। এটা আমাদের হতাশ করেছে। প্রশাসনের কাছে দাবি অতিদ্রুত আমাদের এই মূল ইউনিয়ন পরিষদ চালু হোক। ইউপি চেয়ারম্যান আলী আক্কাস বুলু বলেন, ২০১৬ সালে আমি নির্বাচিত হওয়ার পরে দুর্বৃত্তরা আমার ওপর হামলা করে। এরপর থেকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। দীর্ঘদিন ঢাকায় চিকিৎসা গ্রহণ শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরি। আমার শারীরিক অক্ষমতা ও নিরাপত্তার অভাবে পরে পরিষদের সব সদস্যের সম্মতিতে আমার বিদ্যালয়ের পাশের একটি ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় করি। সেভাবেই চলছে। বাগেরহাটের স্থানীয় সরকার বিভাগ উপ-পরিচালক দেবপ্রসাদ পাল বলেন, চিংড়াখালী ইউয়িন পরিষদে স্থায়ী পূর্ণাঙ্গ ভবন রয়েছে। এরপরেও পরিষদ থেকে দূরে সদস্যরা একটি অস্থায়ী কার্যালয় ব্যবহার করেন। ওই পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে সব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×