ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত কেন্দ্র ভাড়া বাবদই গুনতে হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

বিদ্যুত কেন্দ্র ভাড়া বাবদই গুনতে হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শুধুমাত্র কেন্দ্রভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ খরচ ৯ হাজার কোটি টাকা। সবশেষ অর্থবছরে যা গুনতে হয়েছে বেসরকারী ৮৬টি বিদ্যুতকেন্দ্রের বিপরীতে। আর এক বছরের ব্যবধানে এই খরচ বেড়েছে, ৪০ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাড়া নিয়েছে ৩শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডিজেল চালিত কেন্দ্র এপিআর এনার্জি; পৌনে পাঁচ শ’ কোটি। এছাড়া, শীর্ষ তালিকায় সামিটের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, এটি ৩শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্র। ঢাকার কেরানীগঞ্জে, এপিআর এনার্জির মালিকানাধীন এই কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসে মাস ছয়েক আগে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ ক্ষমতা। অর্থাৎ প্রায় সারাবছরই একরকম অলস বসে ছিল কেন্দ্রটি। কিন্তু তার বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে শুধু ভাড়া বাবদ নিয়েছে প্রায় পৌনে ৫শ’ কোটি। সাড়ে তিন শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার দ্বৈত জ্বালানির সামিট মেঘনাঘাটও এই সময়ে নিয়েছে ৩৯০ কোটি টাকা। অথচ সেখান থেকেও সরকার বিদ্যুত কিনতে পেরেছে সক্ষমতার মাত্র ৯ শতাংশ। অলস বসিয়ে রেখে ভাড়া পরিশোধের এই তালিকায় সামিটের আরও কয়েক প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে, ৮৬টি বেসরকারী ভাড়াভিত্তিক এবং স্বাধীন কেন্দ্রের বিপরীতে কেবল ভাড়া হিসেবে দিতে হয়েছে ৮ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সরকার যখন টাকা দেয় তখন সেখানে অপচয় বলতে কিছু নেই। বিদ্যুতের দামকে সুবিধাজনক করার জন্যই বিদ্যুত বিভাগকে ৬ হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুত ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলছেন, বেশি দামে বিদ্যুত উৎপাদন করে সেই বিদ্যুত সরবরাহ করতে যে ভর্তুকিটা আছে, বিদ্যুত কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি খরচ দেয়াতেও কিন্তু ব্যয় কম হয়। তো বেশি ক্যাপাসিটি রাখাটা জরুরী। তবে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা পরিকল্পনা করে হয়নি। বর্তমানে দেশে কেন্দ্র দেড়শর বেশি। যেখান থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুত কেনা বাবদ খরচ হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে, কেবল ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দেয়া হয়েছে নয় হাজার কোটি। আর অলস বসিয়ে টাকা গোনার এই হার এক বছরে বেড়েছে ৪০ শতাংশ বা পৌনে তিন হাজার কোটি। অথচ, একই সময়ে সেই সব কেন্দ্রগুলোর প্লান্ট ফ্যাক্টর বা ক্ষমতার ব্যবহার কমেছে ৮ শতাংশ। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলছেন, শীতকালে আমাদের চাহিদা নেমে যাচ্ছে ৫ হাজার মেগাওয়াটেরও নিচে। আর সেটাই গরমকালে হয় ১৩ হাজার। এই যে তিনগুণের যে তফাৎ, আমাদের কিন্তু ১৩ হাজার টার্গেট করেই বানাতে হচ্ছে। যার কারণে গড়ে প্লান্ট ফ্যাক্টর কমে আসছে। বিদ্যুত ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলছেন, যখন বিদ্যুত উদপাদন করার আর প্রয়োজন নেই, তারপরেও অব্যাহতভাবে তেল বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছি। সেই বিদ্যুত উৎপাদন না করলেও তাদের ক্যাপাসিটি খরচ দিয়ে বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৯ হাজার মেগাওয়াটের মতো। বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা গেছে পৌনে ১৩ হাজার। প্রত্যাশা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারায় এবং বিদ্যুত বিক্রি করতে না পারার কারণে প্রতিবছরই গুণতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের লোকসান। যা সঙ্কটে ফেলছে সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বাস্তবায়নকে।
×