ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঠিক দর নির্ধারণ করেনি যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

সঠিক দর নির্ধারণ করেনি যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন কোম্পানির টাকা উত্তোলনের (আইপিও অনুমোদন) ক্ষেত্রে সবসময়ই নানা আলোচনা-সমাালোচনা ছিল। অনেকেই প্রিমিয়াম বা নির্ধারিত মূল্যে আইপিওয়ের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এই বিতর্ক এড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নতুন পাবলিক ইস্যু রুলসে প্রিমিয়ামসহ আইপিও অনুমোদনের মূল্য নির্ধারণ যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু যাদের ওপর মূল্য নির্ধারণ নির্ভর করা হয়েছিল তারাও তা ঠিকমতো করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কথায় বলা যায়, শেয়ারবাজারে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানির শেয়ার দর নির্ধারণে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মেধাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হলেও তারা অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তাদের মূল্যায়িত কোম্পানিগুলোর গড় ৬১ টাকার শেয়ার দর এখন ৪৭ টাকা নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে গড়ে শেয়ার দর কমেছে ১৪ টাকা বা ২৩ শতাংশ। যা সার্বিক শেয়ারবাজারকে নিম্ন ধারায় নিয়ে গেছে। জানা গেছে, বাজার সংশ্লিষ্ট নানা মহল থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কোম্পানিগুলোর বেশি প্রিমিয়াম দেয় এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন ২০১৫ সালে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের মাধ্যমে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চালু করে। এই পদ্ধতিতে একটি কোম্পানির শেয়ার দর কত হওয়া উচিত, তা এককভাবে নির্ধারণ করে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। এই যোগ্য বিনিয়োগকারীদের তালিকায় রয়েছে- মার্চেন্ট ব্যাংকার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার, এ্যাসেট ম্যানেজার ও তাদের পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ড, স্টক ডিলার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও ফান্ডের ম্যানেজার, অনুমোদিত পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬ সালে চালু হওয়ার পরে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৬টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা গড়ে ৬০.৬৭ টাকা কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করে। তবে কোম্পানিগুলোর বর্তমানে গড় বাজার দর নেমে এসেছে ৪৬.৬৮ টাকায়। যা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত দরের তুলনায় ১৩.৯৯ টাকা বা ২৩ শতাংশ কম। সর্বশেষ কয়েকটি কোম্পানির মূল্য নির্ধারণে যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দর এবং বর্তমান বাজার দরের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বস্ত্রখাতের আমান কটন ফাইবার্সের কাট অব প্রাইস ছিল ৪০ টাকা। বর্তমান বাজার দর ২৩.১০ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির দর কমেছে ৪২ শতাংশ। এছাড়া কাগজ ও মুদ্রণ খাতের বসুন্ধরা পেপার মিলের কাট অব প্রাইস ছিল ৮০ টাকা। বর্তমান দর ৪৭.৮০ টাকা। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দর কমেছে ৪০ শতাংশ। এসকোয়্যার নিটওয়ারের কাট অব প্রাইস ৪৫ টাকা। বর্তমান দর ২৭.৭০ টাকা। কাট অব প্রাইসের তুলনায় কমেছে ৩৮ শতাংশ। একমি ল্যাবরেটরিজের কাট অব প্রাইস ৮৫ টাকা। বর্তমান দর ৭৩.৩০ টাকা। আগের চেয়ে দর কমেছে ১৪ শতাংশ। রানার অটোমোবাইলের কাট অব প্রাইস ৭৫ টাকা। বর্তমান দর ৬৭.১০ টাকা। কমেছে ১১ শতাংশ। শুধুমাত্র একটি কোম্পানির কাট অব প্রাইসের চেয়ে দর বেড়েছে আর সেটি হলো আমরা নেটওয়ার্ক। আমরা নেটওয়ার্কের কাট অব প্রাইস ৩৯ টাকা। বর্তমানে ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১.১০ টাকা। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত কাট অব প্রাইসের গড় মূল্য ৬০.৬৭ টাকা। বাজার মূল্য ৪৬.৬৮ টাকা। অর্থাৎ সার্বিকভাবে কোম্পানিটির কমেছে ২৩ শতাংশ দর। এই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত ৬টি কোম্পানির মধ্যে ৫টির বা ৮৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর এখন কাট-অব প্রাইসের নিচে লেনদেন হচ্ছে। মাত্র ১টি কোম্পানির শেয়ার দর কাট-অব প্রাইসের ওপরে রয়েছে। তবে সেটাও কাট-অব প্রাইসের কাছেই অবস্থান করছে। যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে আমান কটন ফাইবার্স। এ কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৪২ শতাংশ। এরপরে ৪০ শতাংশ কমে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বসুন্ধরা পেপার মিলস। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের শেয়ার দর কমেছে ৩৮ শতাংশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসি কখনোই শেয়ার দর নির্ধারণ করেনি। তারপরেও আগের প্রিমিয়াম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতো। অথচ এখন সেই সমালোচনাকারীরাই কোম্পানির শেয়ার দর অতিমূল্যায়ন করছে। যার ফলে ওইসব কোম্পানির শেয়ার দর তাদের মূল্যায়িত কাট-অব প্রাইসের নিচে চলে এসেছে। তবে কমিশন এই সমস্যাও দূর করতে এরইমধ্যে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির সংশোধন করেছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের যথাযথ ভূমিকা রাখা দরকার। এজন্য আগামীতে শেয়ারের কাট-অব প্রাইস নির্ধারণে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্যতা অনুযায়ী অনেক কোম্পানির যথার্থ দর নির্ধারণ হয় না। অনেকে এই পদ্ধতিটি অপব্যবহারের মাধ্যমে কাট-অব প্রাইস অতিমূল্যায়িত করছে। যে কারণে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার দর কাট-অব প্রাইসের নিচে নেমে যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যাদের ইলিজিবল বা যোগ্য বিনিয়োগকারী বলা হচ্ছে, এরা আসলে যোগ্য না। বিডিংয়ে এরা পাতানো ম্যাচ খেলে। তাই সবার আগে যোগ্য বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করতে হবে।
×