ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাফরুলের মর্মান্তিক ঘটনা

স্ত্রী ও ছেলের পেটে, ব্যবসায়ীর মুখে বিষের আলামত মিলেছে

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ১২ অক্টোবর ২০১৯

 স্ত্রী ও ছেলের পেটে, ব্যবসায়ীর মুখে  বিষের আলামত মিলেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার মিরপুরের কাফরুলের একই বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া একমাত্র পুত্রসহ পিতা-মাতার শরীরে বিষের অস্তিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে মা ও ছেলের পেটে আর পিতার মুখে মিলেছে বিষের আলামত। ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা এমনটাই জানিয়েছেন। উদ্ধারকালে মা ও ছেলের লাশ ছিল বিছানায়। আর পিতার লাশ ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলছিল। বাসা থেকে বায়েজীদের লেখা ৫০/৬০টি চিরকুট উদ্ধার হয়েছে। তাতে তার ঋণ পরিশোধ না করার বিষয়ে হতাশার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। হতাশা থেকেই স্ত্রী সন্তানকে ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি দিতে বিষ খাইয়ে হত্যার পর নিজেও বিষ পান করে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ ধারণা করছে। শুক্রবার দুপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডাঃ একেএম মঈন উদ্দীন নিহত তিনজনের লাশের ময়নাতদন্ত করেন। সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় তিনজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন চিকিৎসক। পরে চিকিৎসক মঈন উদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, তিনটি লাশ থেকেই ভিসেরার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিডনি, লিভার, পাকস্থলী থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষার জন্য মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। বায়েজীদের গলায় একটি দাগ দেখা গেছে। বায়েজীদের মুখে আর তার স্ত্রী ও ছেলের পাকস্থলীতেও বিষের গন্ধ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাফরুল থানাধীন ১৩ নম্বর সেকশনের ৫ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর ছয়তলা বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে এসএম বায়েজীদ (৪৪), তার স্ত্রী কহিনুর পারভীন অঞ্জনা (৩২) ও তাদের একমাত্র সন্তান ফারহানের (১৭) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফারহান মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত মিরপুর কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। যে বাড়িতে তাদের মৃত্যু হয়েছে, সেই বাড়িটি অঞ্জনার ফ্রান্স প্রবাসী বোন রিনার। বড় বোনের বাড়িতে নামকাওয়াস্তে ভাড়া দিয়ে তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকত। বায়েজীদের বাল্যবন্ধু সাহিদুজ্জামান জানান, ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে বায়েজীদ গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরের ফুলবাড়ী এলাকায় একটি গার্মেন্টস দেয়। গার্মেন্টসটিতে শুধু পর্দার কাপড় তৈরি হতো। অনেক দিন চালানোর পর সেটিতে বড় অঙ্কের টাকা লোকসান করে। এরপর কিছু দিন বিরতি দিয়ে আবার মিরপুরের পর্বতায় গার্মেন্টসের ব্যবসা শুরু করে। এটিতে তার ভাই সহযোগিতা করে। তার ভাইয়েরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। এই সময় একটি ভবনের মাত্র দুটি ফ্লোর নিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে। সেটিতেও লোকসান করে। এরপর সে আশুলিয়া কাজী এসপেরাগাজ নামের একটি হোটেল খোলে। লোকসানের মুখে সেটিও বিক্রি করে দেয়। সর্বশেষ বেকার ছিল। কোন কাজকর্ম করত না। তার অর্থঋণ সংক্রান্ত কাফরুল থানায় একটি ব্যাংক মামলাও করেছে বলে শুনেছি। ঋণের ভার সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করতে পারে।
×