ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিঠামইন কলেজে সুধী সমাবেশে রাষ্ট্রপতি

জনপ্রতিনিধিদের কারও ক্ষমতা দেখানো উচিত নয়

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১২ অক্টোবর ২০১৯

 জনপ্রতিনিধিদের কারও ক্ষমতা দেখানো উচিত নয়

মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ, ১১ অক্টোবর ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ রাজনৈতিক নেতাদের দলমত নির্বিশেষে সৎ থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের কারও ক্ষমতা দেখানো উচিত নয়। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের আচরণ ভাল থাকলেও পরবর্তীতে তাদের চরিত্র পাল্টে যায়। নির্বাচিত হয়ে অনেকে নিজেকে ‘মুই কি হনুরে’ ভাবসাব ধরেন। যেটি কারও কাম্য নয়। তিনি শুক্রবার বিকেলে নিজ জন্মভূমি হাওড় উপজেলা মিঠামইনে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি হাওড়ের ভৌগলিক অবস্থানের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আপনারা আমাকে বারবার ভোটে নির্বাচিত করেছেন। আমিও এ সময়ের মধ্যে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নীতকরণসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছি। এখনো এ অঞ্চলের জীবনমান উন্নয়ন বাস্তবায়নের অনেক কাজ চলছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, কখনও হাওড়ের শিকড়ের কথা ভুলেনি বরং জীবনভর এ হাওড় ও এলাকার মানুষদের নিয়ে চিন্তা করেছি। এ জন্য হাওড়ের প্রতিটি উপজেলার ইউনিয়নের সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগ ফ্লাইওভারের মাধ্যমে করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি হাওড়েই কৃষকের সুবিধার জন্য সাবমার্সেবল রাস্তা করা হচ্ছে। মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পিপি শাহ আজিজুল হক প্রমুখ। এ সময় রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন, জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএমসহ বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি বক্তব্যে হাওড়ের কোন কৃষি জমিতে বসতি নির্মাণে পরিবেশ অধিদফতরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, অনেকে আইন না মেনে হাওড়ের কৃষি জমির যেখানে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এটি করবেন না। আইনটি মানতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মিঠামইনে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে, তিনি এসবের স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় শিক্ষা জীবন ও রাজনীতিসহ নানা বিষয়ের স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একসময় এ অঞ্চলের মেয়েরা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করত। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থার কারণে এখানের কেউ মারা গেলে জানাযা শেষে তার লাশ হাওড়ের পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। এর আগে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইন উপজেলায় পৌঁছলে সেখানে তাকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তিনি গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে কামালপুর বাড়ির পাশের জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বাবা হাজী মোঃ তায়েব উদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুনের কবর জিয়ারত করেন। বিকেলে রাষ্ট্রপতি উপজেলাস্থ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারী ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন মাঠে সুধী সমাবেশে ভাষণ শেষে সন্ধ্যায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ওইদিন রাষ্ট্রপতি কামালপুরে নিজবাড়িতে যাতযাপন করেন। প্রসঙ্গত রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ গত ৯ অক্টোবর ৭ দিনের সফরে কিশোরগঞ্জ আসেন। তার এ সফরে ইতোমধ্যে তাড়াইল উপজেলায় সুধী সমাবেশ ও জেলা সদরে আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনাসহ বেশকিছু অনুষ্ঠানে যোগদান এবং নিজ জন্মভূমি হাওড় উপজেলা মিঠামইনে সুধী সমাবেশে যোগদান করেন। সফরের শেষদিন আগামী ১৫ অক্টোবর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন শেষে ওইদিন বেলা দুইটায় রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে হাওড় উপজেলা অষ্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
×