ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কোহলির রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১২ অক্টোবর ২০১৯

 কোহলির রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কিছুটা ক্ষুব্ধ বিরাট কোহলি একবার বলেছিলেন, ‘দশ ইনিংসের দুটিতে খারাপ করলেই লোকে আমার ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলে, আর যদু-মধু দুটি ভাল ইনিংস খেললেই বলে খুব ফর্মে আছে, এখানেই অন্যদের সঙ্গে আমার পার্থক্য।’ ২০১৮’র অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত একটি টেস্ট সেঞ্চুরি, সেটি গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সফরে। বরাবরের মতো সেঞ্চুরি খরা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ডন’ স্বরূপে ফিরলেন ঠিক নিজের স্টাইলে। পুনেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলমান সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে খেললেন অপরাজিত ২৫৪ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। সুযোগ ছিল ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকানোর। কিন্তু ওই যে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, তাই রবীন্দ্র জাদেজা ৯১ রানে আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৫ উইকেটে ৬০১ রানে ইনিংস ঘোষণা দেন টিম-ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন। অনবদ্য এই ডাবল সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে টেস্ট ইতিহাসের অনেক পরিসংখ্যানই এলোমেলো করে দিয়েছেন ক্রেজি কোহলি। টেস্টে ভারত অধিনায়ক হিসেবে সবেচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি, সর্বোপরি দেড় শতাধিক রানের ইনিংসে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকেই কেবল ছাড়িয়ে যাননি, বিস্ময়ের ঘোর লাগানো আরও অনেক কীর্তি গড়েছেন সুপার উইলোবাজ। ৩৩৬ বলে ৩৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৫৪ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন কোহলি। টেস্টে এটি তার ক্যারিয়ারসেরা এবং প্রথম আড়াই শ’ রানের ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২৪৩ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৭ সালে। ৮১ টেস্টে কোহলির এটি ২৬তম সেঞ্চুরি এবং ৭ম ডাবল সেঞ্চুরি। এই ৭ ডাবল সেঞ্চুরির সবকটিই তিনি পেয়েছেন ২০১৬ সালে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর। সর্বোপরি টেস্ট ইতিহাসে এমন অতিমানবীয় রেকর্ড আর কোন অধিনায়কের নেই। টেস্টে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির মালিকও তিনিই। সমান ৬টি করে ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন শচীন টেন্ডুলকর ও বীরেন্দ্র শেবাগ। ১২টি করে ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে তালিকায় সবার ওপরে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, কুমার সাঙ্গাকারা (১১টি) ও ব্রায়ান লারা (৯টি) আছেন পরের দুটি স্থানে। পুনেতে ১৫০ রান করার পরই কোহলি ছাড়িয়ে গেছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে। অধিনায়ক হিসেবে তার দেড় শ’র ওপরে স্কোর ৯টি, ব্র্যাডম্যানের ৮। তবে ব্র্যাডম্যানের এই রেকর্ড গড়তে সময় লেগেছিল ২৪ টেস্ট। কোহলির লেগেছে ৫০ টেস্ট। এ জন্যই ব্যাটিং সাম্রাজ্যে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান অনন্য। অধিনায়ক হিসেবে ৩০ বছর বয়সী কোহলির এটা ১৯তম টেস্ট সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের রেকর্ডও স্পর্শ করেছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে পন্টিংও ১৯ সেঞ্চুরি করেছিলেন। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। অধিনায়ক হিসেবে স্মিথের টেস্টে ২৫টি সেঞ্চুরি রয়েছে। কোহলি এই সেঞ্চুরির সঙ্গে সঙ্গে আট টেস্ট খেলিয়ে দেশের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ও বাইরে সেঞ্চুরি করে ফেললেন। এর আগে ঘরের মাঠে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি ছিল না তার। একই সঙ্গে ভারতীয়দের মধ্যে পঞ্চাশকে এক শ’ রানে পরিণত করার কনভার্সন রেটের বিচারে শীর্ষে চলে এলেন তিনি। কোহলির কনভার্সন রেট ৫৩.১ শতাংশ। সাবেক ভারত অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের কনভার্সন রেট ছিল ৫২.১ শতাংশ। বিশ্বক্রিকেটে ব্র্যাডম্যানের কনভার্সন রেট সবচেয়ে বেশি- ৬৯ শতাংশ। এই ডাবল সেঞ্চুরির মাধ্যমে বিশ্বের ৪৯তম ক্রিকেটার হিসেবে প্রবেশ করেছেন ৭ হাজার রানের ক্লাবে, পেছনে ফেলেছেন ডন ব্র্যাডম্যানকে। ৫২ টেস্টের ৮০ ইনিংস ব্যাট করে ৬৯৯৬ রান করেছিলেন ব্র্যাডম্যান। তাকে পেছনে ফেলতে কোহলির খেলতে হয়েছে ৮১ ম্যাচের ১৩৮টি ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটে সাত হাজারি ক্লাবে যা যৌথভাবে চতুর্থ দ্রুততম। সবচেয়ে কম ১৩১ ইনিংসে ৭০০০ রান করেছিলেন স্যার ওয়ালি হ্যামন্ড। এরপর রয়েছেন ভারতেরই দুই ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেবাগ (১৩৪ ইনিংস) ও শচীন টেন্ডুলকর (১৩৬ ইনিংস)। কোহলির সমান ১৩৮ ইনিংসে ৭ হাজারি ক্লাবে নাম লিখিয়েছিলেন স্যার গ্যারি সোবার্স ও কুমার সাঙ্গাকারা। তিন ভার্সন মিলিয়ে দ্রুত ২১ হাজার রানের পথে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন সুপার কোহলি। এছাড়াও টেস্ট ক্রিকেটে ২৬তম সেঞ্চুরিতে চতুর্থ দ্রুততম ক্রিকেটার তিনি। সবচেয়ে কম ৬৯ ইনিংসে ২৬তম সেঞ্চুরির রেকর্ড ব্র্যাডম্যানের। কোহলির লেগেছে ১৩৮ ইনিংস। মাঝে রয়েছেন স্টিভেন স্মিথ (১২১ ইনিংস) ও শচীন (১৩৬ ইনিংস)। টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে কোহলির আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি মোট ৬৯টি। ১০০ সেঞ্চুরিতে সবার ওপরে শচীন। ৭১টি সেঞ্চুরি নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রিকি পন্টিং। কোহলি যেভাবে এগোচ্ছেন তাতে পন্টিংকে যে সহসা ছাড়িয়ে যাবেন সেটি অনুমেয়।
×