ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বর্ষায় দর্শনার্থীদের প্রিয় গন্তব্য

মিঠামইনে দিল্লীর আখড়া

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ১২ অক্টোবর ২০১৯

মিঠামইনে দিল্লীর আখড়া

কিশোরগঞ্জের হাওড় অধ্যুষিত মিঠামইন উপজেলার কাটখাল হিজল বনে ঘেরা এক মনোরম স্থান ‘দিল্লীর আখড়া’। বর্ষায় দর্শনার্থীদের এক প্রিয় গন্তব্য এই ‘দিল্লীর আখড়া’। হাওড়ের পানিতে জেগে থাকা শত শত হিজল গাছ এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। চারশ’ বছরের পুরনো এই আখড়া সম্পর্কে সুন্দর একটি গল্প আছে। এক সাধক নাকি এখানে এসেছিলেন ধ্যান করতে। তার ধ্যান ভাঙার জন্য কিছু দৈত্য তাকে নানাভাবে বিরক্ত করত। একদিন এই সাধক মহাবিরক্ত হয়ে তার দিক্ষাগুরুর মন্ত্রবলে এই দৈত্যগুলোকে হিজল গাছ বানিয়ে রাখেন। সাধুর বানিয়ে রাখা সেই হিজল গাছগুলো এখনও দাঁড়িয়ে আছে। হিজল গাছের সারি তিনশ’ একরের পুরো আখড়া এলাকা জুড়েই! শত শত হিজলগাছ! দেখলে ধারণা হতেই পারে, একসময় এগুলো সত্যি সত্যিই দৈত্য ছিল! সারা বর্ষায় এগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। জায়গাটির নাম দিল্লীর আখড়া কিভাবে হলো? সে আরেক গল্প। দিল্লীর স¤্রাট জাহাঙ্গীরের লোকজন নাকি একদিন ওই ধ্যানমগ্ন সাধকের পাশ দিয়ে নৌকার বহর নিয়ে নদীপথে যাচ্ছিলেন। এ সময় সোনার মোহর ভর্তি একটি নৌকা পানিতে ডুবে যায়। নৌকার যাত্রীরা মোহর তোলার জন্য নদীপাড়ে আসে। ডুব দিয়ে তারা দু-একটি মোহর তুলেও আনে। কিন্তু সেই মোহরগুলোও চোখের ইশারায় পানিতে ফেলে দেন ওই সাধক। পরে নৌকার যাত্রীদের অনুরোধে তিনি সোনার মোহরগুলো মাছের ঝাঁকের মতো পানির ওপর ভাসাতে থাকেন। মোহরগুলো তুলে নেন যাত্রীরা। এই ঘটনা শুনে স¤্রাট জাহাঙ্গীর অভিভূত হন। পরে তিনশ’ একর জমি তা¤্রলিপির মাধ্যমে সেই সাধুর আখড়ার নামে দান করে দেন। সেই থেকে এটি দিল্লীর আখড়া। হিজলের বন ভেদ করে একবার আখড়ায় পৌঁছতে পারলেই দেখা যাবে সেই সাধুর স্মৃতি। আখড়ার নির্জনতায় আপনারও মনে হবে, সত্যি এটি ধ্যান করার মতো চমৎকার একটি স্থান বটে। আখড়ায় রয়েছে ধর্মশালা, নাটমন্দির, অতিথিশালা, পাকশালা ও বৈষ্ণবদেব থাকার ঘর। বর্তমানে আখড়ায় মোহন্ত নারায়ণ দাসসহ তিনজন বৈষ্ণব আছেন। এখানে আশ্রিত হয়ে আছে ৪০-৫০ জন শ্রমজীবী মানুষ। সবাই নিরামিষভোজি। থাকে একটি যৌথ পরিবারের মতো। রাতে এখানে দর্শনার্থীদের থাকারও ব্যবস্থা আছে। আখড়ার পাশে রয়েছে ঘের দেয়া দুটি পুকুর। ইচ্ছে করলে পুকুরের ঘাটলায় বসে কাটিয়ে দেয়া যাবে চমৎকার একটা বিকেল। দিল্লীর আখড়ায় যেতে কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রথমে সড়কপথে চামটা নৌ-বন্দর। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে মিঠামইনের কাটখাল হয়ে ‘দিল্লীর আখড়া’ এ যাওয়া যায়। -মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে
×