ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ১২ অক্টোবর ২০১৯

 গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব

সংস্কৃতি কোন জাতির সমৃদ্ধ চেতনার মননও সৃজন শিল্প। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনের প্রতিদিনের সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনা। এ ছাড়াও মানুষের যৌক্তিক অধিকার, স্বাধীন মনোবৃত্তির এবং দাবি অর্জনেরও এক শৈল্পিক মাধ্যম। নিয়ত গতিশীল সাংস্কৃতিক বোধ ও যুগ আর সময়ের বাস্তব প্রতিবেদন। হাজার বছর ধরে সংস্কৃতির বহমান ধারায় মানুষে মানুষে যে মিলন স্রোত তাও অঙ্গনটির অপার সুষমা। কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডে সংস্কৃতি যেমন আপন ঐতিহ্যে বহমানকাল ও সময়কে অতিক্রম করে একইভাবে অন্য দেশেও তার সীমানা সম্প্রসারিত হতে সময় লাগে না। ভাষা আর চেতনাগত ঐক্যে সংস্কৃতি সংহত হয়, আদর্শিক বোধও এর সর্ব মিলনের অন্যতম দ্যোতনা। এক সময় অবিভক্ত বাংলা তথা ভারতের সম্মিলিত ভাব সম্পদের মিলনযজ্ঞে যে সংস্কৃতি তার ঐতিহাসিক যাত্রা অবারিত করেছে ’৪৭-এর দেশ বিভাগে তেমন মিলনগ্রন্থিতে সাময়িক চ্যুতি ঘটালেও সর্বাত্মক চৈতন্যে এক হয়ে যেতেও সময় লাগেনি। আর স্বাধীন বাংলাদেশে তেমন সাংস্কৃতিক মন্ডলকে সম্প্রসারিত করে ভারত-বাংলাদেশ যে ঐতিহ্যিক বলয় তৈরি করে সেটা আজ দিবালোকের মতোই স্পষ্ট। তারই ধারাবাহিকতায় অভিন্ন সাংস্কৃতিক চেতনা আর অভিজ্ঞতার আলোকে শুক্রবার ১১ সেপ্টেম্বর এক বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে দুই দেশের বিশিষ্ট নাট্যজনেরা। ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৯’-এর এক মহতী আনন্দযজ্ঞে উদ্বোধন করা হয় সম্মিলিত এই বিরাট আয়োজনের। ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সাংস্কৃতিক মিলন উৎসবে ভারতের চারটি, ঢাকা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৩৬ নাট্যদল এই উৎসবে নাটক, আবৃত্তি, সঙ্গীতসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মযোগ উপস্থাপনা এই মহতী আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এই আনন্দ উৎসবটির উদ্বোধন করেন খ্যাতিমান নাট্য ও আবৃত্তিশিল্পী সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। অভিন্ন সাংস্কৃতিক চেতনায় উদ্বোধক হিসেবে ভারত থেকে আগত নাট্যজন মেঘনাদ ভট্টাচার্যও এতবড় অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানের মূল পর্বে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালেদের উপস্থিতি মিলনায়তনের অন্যতম আকর্ষণ। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী গুরুত্বপূর্ণ এক বক্তব্যে এই মিলনযজ্ঞের তাৎপর্যকে তুলে ধরেন। ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. নিপা চৌধুরীও তার আলোচনায় দু’দেশের এক ও অভিন্ন ঐতিহ্যিক ধারাকে সামনে নিয়ে এসে এর যথার্থতায় ঐক্যের নিবিড়তম সংযোগকেও বিধৃত করেন। গঙ্গা-যমুনা দু’দেশের প্রবহমান নদীর যে মিলন স্রোত তারই অকৃত্রিম বাধনে আমাদের সাংস্কৃতিক ভাব সম্পদের গ্রন্থি অত্যন্ত জোরালো ও সম্প্রসারিত। বাংলাদেশ-ভারতের এই নিরবচ্ছিন্ন সাংস্কৃতিক গতিপ্রবাহ তার ঐতিহাসিক পর্ব অতিক্রান্ত করে বর্তমান ও ভবিষ্যত গন্তব্য নির্ধারণেও নিয়ামক শক্তি। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর উৎসব উদযাপন পরিষদের এক সভায় ১০ দিনব্যাপী এত বড় আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য দর্শকের সামনে তুলে ধরে অনুষ্ঠান সফলতায় সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করা হয়। উৎসব পরিচালনা পরিষদের সভায় সম্প্রতি বুয়েটের মেধাবী ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যার মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দাবি করা হয়। সুস্থ সাংস্কৃতিক চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসুস্থ প্রতিবেশকে কঠোরভাবে প্রতিহত করারও আহ্বান জানানো হয়। মানুষের মানবিক বোধ, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা সময়ের গতিধারাকে যে মাত্রায় পরিশীলিত ও মার্জিত করে তেমন নির্মল প্রতিবেশ নিরাপদ জীবন গড়ারও অকৃত্রিম হাতিয়ার। সংস্কৃতি শুধু জীবন ধারণের বাহনই নয়, নিরন্তর গতিও। কোন নির্দিষ্ট জায়গায় তাকে আটকেও রাখা যায় না। একইভাবে যুগ ও কালকে নিরবচ্ছিন্ন গতিতে এগিয়ে নেয়। সর্বমানুষের এমন মিলন দ্যোতনায় সংস্কৃতির যে সম্প্রসারিত বিশ ¦ তারই সুদৃঢ় একাত্মতায় দেশ ও জাতির মঙ্গল নিহিত। সংস্কৃতির ঐতিহ্যিক বুনিয়াদের আলোর বার্তা সর্বমানুষের জীবন ও মননে ছড়িয়ে পড়ুক- চলমান উৎসব হোক তেমন প্রত্যয়ের অঙ্গীকার।
×