ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গঙ্গা-যমুনা উৎসবে চন্দ্রকলা থিয়েটারের নাটক ‘শেখ সাদী’

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ১২ অক্টোবর ২০১৯

গঙ্গা-যমুনা  উৎসবে চন্দ্রকলা থিয়েটারের  নাটক  ‘শেখ সাদী’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার তিনটি মঞ্চে শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে ‘গঙ্গা যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’। ১০ দিন ব্যাপী এ উৎসবে আগামী ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘শেখ সাদী’। তারুণ্যনির্ভর নাট্যদল চন্দ্রকলা থিয়েটারের ১৮তম মঞ্চনাটক ‘শেখ সাদী’। পারস্যের মহাকবি শেখ সাদীর জীবন ও কর্ম আশ্রিত নাটকটি রচনা করেছেন অপূর্ব কুমার কুন্ডু। নাটকটি নির্দেশনা ও নাম ভূমিকায় একক অভিনয় করেন এইচ আর অনিক। নাটকের প্রযোজনা অধিকর্তা- মামুনুর রশীদ, সঙ্গীত- হামিদুর রহমান পাপ্পু, মঞ্চ-ফজলে রাব্বি সুকর্ণ, মঞ্চ সহযোগী- মাহমুদুল হাসান মাসুম, আলো- এসএম অঙ্গন, কাজী নজরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা-সৈকত, নিশি, পপি, গোলাম সারোয়ার, আনিস, অবনী, মেহেদী, রিজু, নাহিয়ান, মেকাপ- জনি সেন, শিল্প নির্দেশনা-সুজন মাহাবুব। নাটকটির কাহিনী এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ঘিরে। দিল্লীর যুবরাজ মুহম্মদ বুলবনে তার সময়কালে এক বিশ্ব কবি সম্মেলনের আয়োজন করেন যেখানে মুখ্য কবি হিসেবে আমন্ত্রণ পান শেখ সাদী। শেখ সাদীর প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধু দিল্লীর কবি আমীর খসরু আমন্ত্রণ পত্র রচনা করেন এবং শেখ সাদীর আগমন নিশ্চিত করতে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে আহ্বান জানান। রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং বন্ধুর আহ্বানে উৎফুল্ল শেখ সাদী সম্মানিত এবং আনন্দে আপ্লুত হলেও বার্ধক্যজনিত কারণে বিগত সময়ে একাধিকবার দিল্লী ভ্রমণ করলেও সেবার সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দিল্লী আসতে পারেনি। সশরীরে না যাবার ক্ষেত্রে অপরাপর আরেকটি কারণ ছিল, শেখ সাদী চেয়েছিলেন তার অন্তিম বেলা কাটুক শিরাজী নগরীতে যেখানে তার জন্ম-শৈশব-কৈশোর ও যৌবনে বেড়ে ওঠা। ফলে সিরাজ ত্যাগ করে দিল্লীর সে যাত্রায় শেখ সাদী না গেলেও শেখ সাদী তার রচিত গুলিস্তা, বুলিস্তাসহ অন্যান্য রচিত গ্রন্থ তুলে দিয়েছিলেন শিরাজীতে অভ্যাগত দিল্লীর রাষ্ট্রীয় অতিথিদের হাতে যুবরাজ ও কবিবন্ধুর প্রতি সম্মানার্থে। ইতিহাসের এই সত্যকে ঘিরেই নাটকটি শুরু হয়। মহাকবি শেখ সাদী তার সৃজন সাহিত্যের সম্ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে শিরাজীর নিজ গৃহে, পারস্য থেকে দিল্লীগামী মুসাফিরদের আসার অপেক্ষায়। দিল্লীর যুবরাজ মুহম্মদ বুলবন, কবি বন্ধুবর আমীর খসরুর আমন্ত্রণে শেখ সাদী আপেক্ষমাণ তার রচিত সাহিত্যসমগ্র আমন্ত্রণের প্রতিদান হিসেবে মুসাফিরদের হাতে তুলে দিতে। ফজরের আজান শেষে ভোরের আলো ফোটবার মাহেন্দ্রক্ষণের মধ্যবর্তী অপেক্ষমাণ শেখ সাদীর সময়টুকু নিয়েই নাটক শেখ সাদী। পোশাকের পকেটে খাবার পুরার বহুল প্রচলিত কাহিনীর পাশাপাশি পারস্যের কবি রুদাকী, ফেরদৌসী, জালালউদ্দীন রুমি, ওমর খৈয়ামসহ পূর্বসূরি ও সমসাময়িক সাহিত্যিকদের সমান্তরাল পথচলা, যাপিত জীবনকে তুলে ধরা এবং নিজ সাহিত্য সৃজনের প্রেক্ষাপটকে মনোজগতে পুনরায় ফিরে দেখার এবং অপেক্ষার অবসানে শেখ সাদীর আত্মোপলব্ধি ‘শেখ সাদী’ নাটকটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নাট্যকার অপূর্ব কুমার কু-ু শেখ সাদী নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়নের আলোকে তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, নাটককে কেন্দ্র করে সেদিন যে বিপুল দর্শকের উপস্থিতি, সেটা প্রমাণ করে যে দল, নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা সবকিছুর উর্ধে শেখ সাদী তার নিজস্ব শক্তিতে বিকশিত এবং প্রকাশিত। বিশ্বের মানুষ শেখ সাদীর অংশীদার এবং বাংলাদেশের মানুষও ঠিক সেভাবেই ভালবাসেন। ফলে বৃহস্পতিবার হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় নাট্যশালায় পুরো হলে দর্শকের উপস্থিতি এটাই বুঝিয়ে দেয় শেখ সাদীকে দেখার ব্যাকুলতা কত। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই গঙ্গা যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবে ‘শেখ সাদী’ নাটকটি। আবার সেই ১৭ তারিখ বৃহস্পতিবারই সন্ধ্যাকালীন মঞ্চায়নে দর্শক যে ‘শেখ সাদী’কে দেখতে আসবে সেটা শেখ সাদীকে দেখা বোঝার এবং জানার জন্য। এক্ষেত্রে নির্দেশক এইচ আর অনিক বলেন, নাট্যকারের চিন্তার সঙ্গে সহমত থাকা সত্ত্বেও আরও কিছু নতুন ভাবনার সুযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে নাট্যাঙ্গনে নাট্যকর্মীদের মাঝে ছড়িয়েছে যে এই নাটকের ধারাভাষ্যে শুরুতে এবং শেষে রয়েছেন আইটিআইএ’র সাম্মানিক সভাপতি শ্রদ্ধেয় রামেন্দু মজুমদার। ফলে তার কণ্ঠস্বরের ব্যবহারটি নাটকে যে অর্থে সে অর্থ অনুধাবনের জন্য বিপুলসংখ্যক নাট্যকর্মী ১৭ তারিখের নাটক শেখ সাদী দেখবে বলে আমার বিশ্বাস। উপরন্তু আমরা জেনেছি যে ইরানেও শেখ সাদীকে নিয়ে কোন নাটক মঞ্চায়িত হয়নি। ফলে বাংলাদেশে ‘শেখ সাদী’ নাটকটি মঞ্চে আনা যে গর্বের গর্বিত অংশিদার সে জায়গা থেকে অজানা শেখ সাদীকে জানার অন্যতম প্রধান সুযোগ ‘শেখ সাদী’ নাটক মঞ্চায়নে।
×