ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই আবরার হত্যার পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত চার্জশীট ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১১ অক্টোবর ২০১৯

শীঘ্রই আবরার হত্যার পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত চার্জশীট ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত চার্জশীট (অভিযোগপত্র) শীঘ্রই দাখিল করা হবে। তিনি বলেন, অপরাধী যেই হোক রেহাই পাবে না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান। গত রবিবার রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলা থেকে বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাসহ ১৪ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বুয়েটে আপনারা নৃশংস হত্যাকা- দেখেছেন। এটা কারও কাম্য নয়। কেন এ হত্যাকা-, কী উদ্দেশ্য ছিল সবকিছু এখন তদন্ত করা হচ্ছে। আপনারা ইতোমধ্যে শুনেছেন যারা এ হত্যাকা-ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল কিংবা যারা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে, আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করেছি। আমরা ১৪ জনকে ইতোমধ্যে ধরেছি। তারপর আরও যদি কেউ জড়িত থাকে সবাইকে আমরা ধরব। মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অত্যন্ত শক্ত ভাষায় কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যারা এই দুষ্কৃতকারী, যারা এ ধরনের কা-কারখানা ঘটায়, সেটার সঙ্গে রাজনৈতিক কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমরা সে বিষয়ে কঠিন ও কঠোর। তিনি পাশাপাশি এ কথাও বলেছেন, কোন ইনফরমেশন (তথ্য) কিংবা কোন কিছু থাকে কিংবা নাও থাকে তাহলে প্রত্যেকটি ছাত্রাবাস যেন তল্লাশির আওতায় নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা অবশ্যই সব সামনে নিয়ে কাজ করছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশ যথাসময়ে তাদের (আবরার হত্যাকারী) আটক করতে সক্ষম হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে হল থেকে তারা বের হতে পারেনি, এর আগেই তারা ধরা পড়েছে। আসাদুজ্জামান খান বলেন, আশা করি শীঘ্রই, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ মামলার পূর্ণাঙ্গ চার্জশীট প্রদান করতে পারব। আমাদের পুলিশ সেই কাজটি করছে। চার্জশীট যাতে নিখুঁত হয়, সবকিছু যাতে নির্ভুল হয়; সেজন্য পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছে। আশা করি একটা নিখুঁত চার্জশীট দিয়ে বিচারের কাজটি দ্রুততার সঙ্গে শেষ হয়, আমরা সেই কাজটি সহজতর করব। আমরা সেটাই করছি। সমালোচনার মুখে বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহাকে আজ আটক করা হয়েছে, কিন্তু তার নামে মামলা হয়নি- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যতটুকু শুনেছি, অমিত সাহাকে ঠিক সেই মুহূর্তে পায়নি, তখন সে ছিল না। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে বলেছিল পূজার ছুটিতে বাইরে গেছে। যাই হোক, যেভাবে হোক, তাকেও ধরা হয়েছে। মামলায় আবরারের বাবা কিছু নাম দিয়েছিলেন, সেই নামের বাইরেও কিন্তু পুলিশ যাদের সম্পৃক্ততা পাচ্ছে তাদের ধরছে। অমিত সাহা কিংবা যে কেউ হোক আমাদের কাছে ফ্যাক্টর নয়, আমাদের কাছে ফ্যাক্টর সে অপরাধী কিনা, সে অপরাধী হলেই আমরা ধরছি। কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে তল্লাশি চালানো হবে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নেব। কোথায় কিভাবে করব? আমাদের আরও কিছু ফর্মালিটিজ (আনুষ্ঠানিকতা) পালন করতে হয়, সেটা আপনারা জানেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এটা করব। আমরা কলেজগুলোর ছাত্রাবাসেও এটা (তল্লাশি) করব। টর্চার সেল অনেক ক্লাবে আছে, সেগুলোতেও তল্লাশি হবে কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেখুন টর্চার সেল একটা ক্লাবে ছিল, সেখানে টেন্ডারবাজির একটা ব্যাপার-স্যাপার ছিল। হলগুলো তো ছাত্ররা থাকে। সেখানে টর্চার সেল কতখানি ছিল, কতখানি আছে, কতখানি না আছে সেগুলো আমরা সবই দেখব। র‌্যাগিং কালচার আইন করে বন্ধ করার কোন চিন্তা-ভাবনা করছেন কিনা- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, খুব বেশি রকমভাবে এ কালচারটা রয়েছে বুয়েটে, জাহাঙ্গীরনগর ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভাবে নেই। যারা ছাত্র নেতৃত্ব দেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তাদেরও চিন্তা করার সময় হয়েছে। তারা এই কালচার থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসবেন, আমার মনে হয় তাদেরও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত এ মুহূর্তে। শুদ্ধি অভিযান চলবে কিনা, একটি ইস্যুর কারণে আরেকটা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, না না, ঢাকা পড়েনি। বুধবার প্রধানমন্ত্রী খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এরপর আর আমার কিছু বলার নেই। আমি শুধু এইটুকু বলব, আমি সবসময় বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা তা করছি। তৃতীয়বারের মতো তিনি রাষ্ট্রভার পালন করছেন, এখন তিনি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। টেকসই শান্তি ও উন্নয়ন ধরে রাখার জন্য সুশাসন একদম অপরিহার্য। আমরা এটা প্রতিষ্ঠিত করব। আমরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, শুদ্ধি অভিযান সবসময়ই হয়। ইদানিং যারা মাত্রার বাইরে চলে গেছে প্রধানমন্ত্রী তাদের ব্যাপারে এ্যাকশন নিচ্ছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা করব। শুদ্ধি অভিযান বলুন, টেন্ডারবাজদের নিয়ন্ত্রণ বলুন, যা কিছু প্রয়োজন হয়- কোনটাই বাদ দিচ্ছি না।
×