ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের অবস্থা বেশি প্রকট ॥ আইএমএফ প্রধান

বিশ্ব অর্থনীতিতে ধীরগতি

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১১ অক্টোবর ২০১৯

বিশ্ব অর্থনীতিতে ধীরগতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতীয় অর্থনীতির গতি যতটা নিম্নমুখী ভাবা গিয়েছিল, প্রকৃত অবস্থা কি তার চেয়েও খারাপ? সেই ইঙ্গিতই মিলল ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিক অর্থভা-ারের নয়া ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিভার কথায়। বিশ্ব অর্থনীতিতে ধীরগতির প্রভাব ভারতে ‘বেশি প্রকট’ বলে মন্তব্য করলেন আইএমএফ প্রধান। শুধু তাই নয়, ভারতের মতো দেশে এই মন্দা যে আরও বেশ কিছুদিন চলবে, তারও পূর্বাভাস দিয়েছেন জর্জিভা। দু’দিন আগেই স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার বলেছিলেন, মন্দার ধাক্কা কাটিয়ে ভারত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। উৎসবের মরশুম পড়তেই অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। কিন্তু এসবিআই চেয়ারম্যানের সেই তত্ত্ব কার্যত খারিজ করে সদ্য দায়িত্ব নেয়া আইএমএফ প্রধান বললেন, মন্দার প্রভাব আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। বিশ্বের ৯০ শতাংশ দেশেই ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার আরও নিম্নমুখী হবে। ভারতে সেই হার হবে আরও বেশি নিম্নগতির। ক্রিস্টিন ল্যাগার্দের উত্তরসূরি হিসেবে দু’মাস আগেই দায়িত্ব নিয়েছেন ক্রিস্টালিনা জর্জিভা। কিন্তু জর্জিভা এমন একটা সময়ে দায়িত্ব নিয়েছেন, যখন বিশ্ব অর্থনীতি সঙ্কটের মুখে। তাই আইএমএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে তার প্রথম ভাষণেও উঠে এসেছে সেই শঙ্কার বার্তাই। জর্জিভা বলেন, ‘দু’বছর আগেও বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা সুসংহত বৃদ্ধি ছিল। বিশ্বের ৭৫ শতাংশ দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল উর্ধমুখী। কিন্তু এখন অর্থনীতি সমান তালে নিম্নমুখী। ২০১৯ সালের মধ্যেই বিশ্বের ৯০ শতাংশ দেশে বৃদ্ধির হার কমবে।’ গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার একটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন আন্তর্জাতিক অর্থভা-ারের প্রধান। বলেন, ‘আমেরিকা, জার্মানিতে বেকারত্ব ঐতিহাসিকভাবে বেড়েছে। এমনকি, আমেরিকা-জাপান, ইউরো জোনের মতো মজবুত অর্থনীতির দেশেও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের গতি মন্থর। আবার ভারত, ব্রাজিলের মতো বৃহত্তম উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে এই মন্দা আরও প্রকট হবে।’ এই প্রভাব গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হতে পারে এবং তার ফলও সুদূর প্রসারী হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জর্জিভা। গত ছ’বছরের তুলনায় ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার সবচেয়ে কমে নেমে এসেছে ৫ শতাংশে। এই পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ৬.৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.১ শতাংশ করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থভা-ারের হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে সেই হার নেমে যেতে পারে ০.৩ শতাংশে। কারণ আইএমএফ-এর মতে ‘যা আশা করা গিয়েছিল, তার চেয়েও দুর্বল’ ভারতের অর্থনীতি। অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও মন্দার প্রভাব পড়েছে। তার সঙ্গে আমেরিকা-চীন, ইরান-আমেরিকা, ভারত-মার্কিন শুল্ক যুদ্ধও তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে। সেই উদ্বেগও ধরা পড়েছে আইএমএফ প্রধানের বক্তব্যে। বর্তমানে ‘স্থিতাবস্থা’ বলে মন্তব্য করেছেন জর্জিভা। একইসঙ্গে বলেন, এই যুদ্ধে ‘সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে’। তাই সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন আইএমএফ প্রধান। ভারতে যে বৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে, তা অবশ্য সরকারী পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। শেষবার প্রকাশিত ত্রৈমাসিকের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৫ শতাংশে। বেশ কিছুদিন ধরেই তা লাগাতার নিম্নমুখী। চাহিদায় ভাটা। খরা লগ্নিতে। নতুন কাজের সুযোগ সেভাবে তৈরি হওয়া তো দূর, বরং শুধু গাড়ি শিল্পেই কাজ খুইয়েছেন কয়েক লক্ষ কর্মী। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, গাড়ি থেকে বিস্কুট সব পণ্যের বিক্রিই তলানিতে। এমনকি যে উৎসবের মরসুমে নিজেদের সারাবছরের বিক্রিবাটার প্রায় ৭০ শতাংশ সেরে ফেলে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্য সংস্থা, সেই ‘সেরা সময়েও’ চাহিদা চাঙ্গা হওয়ার তেমন লক্ষণ নেই। বেকারত্বের কামড় বাড়ছে। তুলনায় অনেক কম বেতনের চাকরি পেতেও মরিয়া হয়ে আবেদন করছেন এমবিএ, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ার, মাস্টার্স ডিগ্রীধারীরা। কিন্তু এতসব কিছুর পরেও অর্থনীতির হাল যে সুবিধার নয়, খোলাখুলিভাবে যেন তা স্বীকার করতে চাইছে না কেন্দ্র। এমনিতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হালে একের পর এক ঘোষণা করেছে দিল্লী। কর ছাঁটাইয়ের বিপুল সুবিধা দিয়েছে কর্পোরেটকে। কমানো হয়েছে বিভিন্ন পণ্য-পরিষেবায় জিএসটির হার। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর পরেও অর্থনীতির হাল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তা ঠিক আছে বলেই দাবি করে চলেছে কেন্দ্র। কখনও গাড়ি বিক্রি মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ হিসেবে নতুন প্রজন্মের এ্যাপ-ক্যাব প্রীতিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আবার কখনও শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার দাবি করে বসেছেন, আসলে কাজের অভাব নেই দেশে। কিন্তু এই সবকিছুর পরেও আইএমএফ কর্ণধারের তুলে ধরা ছবিতে বেশ বিবর্ণই দেখাচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। সূত্র: আনন্দবাজার
×