ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জালিয়াতি ফাঁস ॥ আসল নকল দুই আসামিই এখন শ্রীঘরে

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১০ অক্টোবর ২০১৯

জালিয়াতি ফাঁস ॥ আসল নকল দুই আসামিই এখন শ্রীঘরে

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ টাকার বিনিময়ে আদালতে হাজিরা ও জেল খাটার জন্য লোক ভাড়া করেও শেষ রক্ষা হয়নি মূল আসামি ব্যবসায়ী ভূমিদস্যু রহমত আলী ম-লের। ঘটনা জানাজানি হলে মূল আসামিসহ ভাড়া করা আসামিকেও যেতে হয়েছে জেলহাজতে। চাঞ্চল্যকর এই জালিয়াতির ঘটনা ময়মনসিংহ বন আদালতের। রায় ঘোষণার পর মামলার প্রধান আসামিকে বাইরে অবাধে ঘুরতে দেখে হতবাক। এলাকাবাসী আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের নজরে আনলে জানাজানি হয় জালিয়াতির এই কাহিনী। আদালত সূত্র জানায়, ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি মৌজায় সরকারী বনের জায়গা জবরদখল করে গত ২০১৫ সালের ২১ নবেম্বর সকালে স্থানীয় ব্যবসায়ী রহমত আলী ম-লের নির্দেশে তারা মিয়া ইট দিয়ে পাকা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছিলেন। এ সময় বনবিভাগের টহলদল ঘটনাস্থল থেকে তারা মিয়াকে আটক করলেও পালিয়ে যান রহমত আলী ম-ল। এই ঘটনায় বন বিভাগের স্থানীয় বিট কর্মকর্তা এসএম সাইদুর রহমান বাদী হয়ে ময়মনসিংহের বন আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার সিংগারদীঘি গ্রামের মৃত ছফির উদ্দিনের পুত্র তারা মিয়া ও ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত হযরত আলী ম-লের পুত্র রহমত আলী ম-লের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এ সময় পরিচয় গোপন করে হবিরবাড়ি গ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র জনৈক শামীম মিয়া টাকার বিনিময়ে মূল আসামি রহমত আলী ম-ল সেজে আদালতে আত্মসমর্পণ করে রাষ্ট্রপক্ষের অজান্তে জামিন নেয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে চলতি সালের গত ১৭ জুন আসামির অনুপস্থিতিতে ময়মনসিংহ বন আদালতের বিচারক ড. মোঃ রাশেদ হোসাইন এক আদেশে তারা মিয়া ও রহমত আলী ম-লকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদ- দেন। রায় ঘোষণার পর রহমত আলী ম-ল সেজে ফের শামীম মিয়া জেলা দায়রা জজ আদালতে আপীলের জন্য আত্মসমর্পণপূর্বক ময়মনসিংহের বন আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ময়মনসিংহের জেলা দায়রা জজ আদালতে শামীম মিয়া আপীল আবেদন ও জামিন প্রার্থনা করলে এ বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করে এবং শামীম মিয়ার তথ্য যাচাইয়ে নির্দেশ দেয়। এদিকে রায় ঘোষণার পর রহমত আলী ম-লকে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখে হতবাক এলাকাবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বন আদালতের সরকারী কৌঁসুলি কফিল উদ্দিন মাহমুদকে জানায়। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আইনজীবী জালিয়াতির ঘটনাটি জেলা দায়রা জজ আদালতের নজরে আনেন। ময়মনসিংহ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদুল ইসলাম জানান, চলতি সালের ১৫ জুলাই রহমত আলী ম-লের পরিচয়ে শামীম মিয়া আইনজীবীর মাধ্যমে জেলা দায়রা জজ আদালতে আপীল আবেদন ও জামিনের প্রার্থনা করলে আদালত আবেদনকারীর পরিচয় যাচাইয়ে পুলিশকে নির্দেশ দেয়। এর এক সপ্তাহের মধ্যে রহমত আলী ম-ল আদালতে আত্মসমর্পণ করতে এলে আদালত তাকেও জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। জালিয়াতির এই ঘটনায় গত ২৪ জুলাই ভুয়া রহমত আলী ম-লের আইনজীবী এ্যাডভোকেট আব্দুল গফুর তার ওকালতনামা প্রত্যাহার করেছেন। তবে এর আগে ময়মনসিংহের বন আদালতে ভুয়া রহমত আলী ম-লের পক্ষে ওকালতনামা দেন এ্যাডভোকেট সজল।
×