ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিকদের একাংশের দাবি

ধর্মঘটে অটোরিক্সা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১০ অক্টোবর ২০১৯

ধর্মঘটে অটোরিক্সা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ভাড়া বাড়ানোসহ নয় দফা দাবিতে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকা তিন দিনের ধর্মঘটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে অটোরিক্সা শ্রমিকদের একটি অংশ। বিরোধী সংগঠকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া ও জমা না মানার অভিযোগের মধ্যেই সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ধর্মঘট এই শিল্পকে মূলত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে থাকা তিনটি সংগঠনের কোনটিই বৈধ নয়। মূলত এই ব্যবসা অন্যদের হাতে তুলে দিতেই অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট সেক্টরের অনেক নেতা। ধর্মঘট আহ্বানকারীদের অনেক দাবি অযৌক্তিক দাবি করে ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন বলেন, অটোরিক্সার জন্য সরকারীভাবে ১০ সদস্যের ভাড়া নির্ধারণী কমিটি রয়েছে। তারা সরকারের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক কোন দাবি না জানিয়ে সংগ্রাম পরিষদ ঘোষণার দিনই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। যা মোটেই গঠনতান্ত্রিক নিয়মের মধ্যে পড়ে না। আগামী ১৫-১৭ অক্টোবর আহুত ধর্মঘট অটোরিক্সা শ্রমিকদের একটি বড় অংশ সমর্থন করে না দাবি করে তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা বলছে অটোরিক্সায় প্রথম দুই কিলোমিটার ৮০ টাকা ও পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিবহন শ্রমিকদের লেলিয়ে দিচ্ছে। সংগ্রাম পরিষদের তিনটি সংগঠনের কোনটিই বৈধ নয় দাবি করে খোকন বলেন, এখন উবারে ভাড়া অনেক কম। যাত্রীরা কেন এত বেশি টাকা দেবে অটোরিক্সায়। তাছাড়া সরকারই বা কেন এত বেশি ভাড়ার যুক্তি মেনে নেবে। তিনি বলেন, দাবি আদায়ের জন্য নয় মূলত পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্য থেকেই ধর্মঘটের আহ্বান করা হয়েছে। গত বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর পরপরই কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। পরিষদের সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, আগামী ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর লাগাতার ৭২ ঘণ্টা তাদের এই ধর্মঘট চলবে। অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিকদের পাঁচটি সংগঠন নিয়ে গঠিত এ পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ বরকত উল্লাহ ভুলু ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে নয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ঢাকা মহানগরীসহ ঢাকা জেলা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জে অবৈধ অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করতে হবে। প্রাইভেট’ অটোরিক্সার বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ, সুনির্দিষ্ট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করে ‘নো পার্কিং’ মামলা ও ডাম্পিং করা যাবে না, এসএস স্টিলের গ্রিল বাম্পার রং করার নামে মামলা এবং ভিডিও/গায়েবি মামলাসহ অন্যায়ভাবে কোন মামলা বা রেকারিং না করা, রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের অনুমোদনবিহীন সকল মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে, রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের চালকদের নির্দিষ্ট পোশাক, পেশাদারি লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং প্রতি কিলোমিটার ভাড়া নির্ধারণ ও সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সিলিং সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়ি চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট রংয়ের স্টিকার লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের অনুমোদনপ্রাপ্ত গাড়ির তালিকা ট্রাফিক পুলিশের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চার বার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চালকের ব্যয় বৃদ্ধি হওয়ায় ভাড়ার মিটারে প্রথম দুই কিলোমিটার ৮০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ৩০ টাকা এবং ওয়েটিং চার্জ প্রতি মিনিট চার টাকা এবং মালিকের দৈনিক জমা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করতে হবে। চালক মিটারের ভাড়া বৃদ্ধি ও মালিকের দৈনিক জমা বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত মিটার ও জমা সংক্রান্ত কোন মামলা করা যাবে না। সরকারের নির্ধারিত দৈনিক জমার নিয়ম বাস্তবায়ন করা এবং ‘অন্যায়ভাবে চালিত’ শিফটিং প্রথা বাতিল করতে হবে। শুধু সরকার নির্ধারিত ফির বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া বা নবায়ন করতে হবে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষা/রি-টেস্টিংয়ের নিয়ম বাতিল করে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ ও উৎকোচ নেয়া বন্ধ করতে হবে। গাড়ি চোর, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারী, চালক হত্যা বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অটোরিক্সাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা, গ্রাহক সেবায় বিআরটিএ কর্তৃক গড়িমসি ও গ্রাহক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এসব দাবিতে ৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সংগ্রাম পরিষদ।
×