ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুই কোম্পানিকে ভারতে এলপিজি রফতানির অনুমতি

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১০ অক্টোবর ২০১৯

দুই কোম্পানিকে ভারতে এলপিজি রফতানির অনুমতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেক্সিমকো ও ওমেরা গ্রুপ তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে রফতানি করবে। বছরে এই এলপিজি রফতানির পরিমাণ হবে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এজন্য বেক্সিমকো ও ওমেরার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল)। মূলত এই তিন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ত্রিপুরাসহ ভারতের সাত রাজ্যে রান্নার জ্বলানি সঙ্কট দূর করতে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, এই উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের কোন সম্পৃক্ততা নেই। এখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের দুটি কোম্পানি ভারতে এলপিজি বিক্রির অনুমোদন নিয়েছে। আমরাও আমাদের অনাপত্তির ছাড়পত্র দিয়েছি। তিনি বলেন, এর ফলে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে আমরা বিভিন্ন রকমের কর পাব। বিষয়গুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেখভাল করছে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে এখন দেশে মোট এলপিজির চাহিদা রয়েছে সাত লাখ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে দেশের সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে এলপিজি সরবরাহ ক্ষমতা রয়েছে এক মিলিয়ন টন। অর্থাৎ সক্ষমতা থাকার পরও তিন লাখ টন এলপিজি চাহিদা না থাকার কারণে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের এলপিজি প্লান্টগুলো পূর্ণ চাহিদায় উৎপাদন না করতে পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশে এই এলপিজি বিক্রি করা সম্ভব হলে উদ্যোক্তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। জানতে চাইলে ওমেরা এলপিজির পরিচালক আজম জে চৌধুরী বলেন, আমরা আমাদের এখনের যে প্লান্ট রয়েছে সেখান থেকেই বছরে ১৫ হাজার মেট্রিক টন এলপিজি ভারতে রফতানি করব। বোতলজাত করা হবে ভারতেই। এর সঙ্গে সরকারের কোন সম্পৃক্ততা নেই। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এলপিজি রফতানির জন্য সমঝোতা স্মারকটি সই হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এখন চাহিদার অতিরিক্ত এলপিজি উৎপাদন করতে পারি। ভারতের আইওসিএল এই উদ্যোগে বেসরকারী দুটি কোম্পানির সঙ্গে রয়েছে জানিয়ে বলেন, এলপিজি বোতলজাত করা হবে ভারতেই এখান থেকে আমরা শুধু বড় ট্রাকে করে ভারতে এলপিজি পাঠানোর কাজটি করব। সম্প্রতি ভারত সফরে বাংলাদেশ থেকে তরল গ্যাস ভরতে রফতানির জন্য চুক্তি হয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে যেহেতু চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে তাই ভারতের সাত রাজ্যে এলপিজি রফতানির অনুমোদন চেয়ে অনেক কোম্পানি আবেদন করছে। তবে প্রাথমিকভাবে দুটি কোম্পানিকে রফতানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ১০ লাখ টন এলপিজি সরবরাহের ক্ষমতার বিপরীতে ভারতে রফতানি করা হবে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। শতকরা হিসেবে যার পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র এক দশমিক ৫ ভাগ। জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, যেহেতু বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে খুব সহজ নয় সেজন্য এ খাতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন ১৮টি কোম্পানি রয়েছে যারা দেশে এলপিজি সরবরাহ করছে। আর বাইরে সরকার আরও ৩৮টি কোম্পানিকে এলপিজি সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে। সকলে এলপিজি সরবরাহ শুরু হলে এ খাতে সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এলপিজি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস। মূলত তেল খনির উপজাত থেকে এলপিজি উৎপাদন হয়। দেশের উদ্যোক্তরা প্রপেন এবং বিউটেন আমদানি করে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে এলপিজি সরবরাহ করে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য ছাড়াও নেপাল এবং ভুটানে এলপিজির বাজার ধরতে পারে বাংলাদেশ। বলা হচ্ছে সড়কপথে নেপাল এবং ভুটানকে এলপিজি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়বে। ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এলপিজি সরবরাহ করতে গেলে প্রায় এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সেখানে বাংলাদেশ থেকে এলপিজি নিলে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে নিলেই চলবে। এতে করে পরিবহন খরচ বাবদ বিপুল পরিমাণ সাশ্রয় হবে। যাতে কম দামে গ্রাহকের কাছে এলপিজি সরবরাহ করতে পারবে দেশটি। উল্লেখ্য, কেবলমাত্র পরিবহন জটিলতার কারণে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম থেকে তেল পরিবহনের বদলে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে বছরে ১০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করছে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি চাহিদা মেটার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পরিবহন ব্যয়ও বেঁচে যাচ্ছে।
×