মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইমপিচমেন্টের মতো কোন অপরাধ করেছেন কিনা, তা তদন্তে প্রতিনিধি পরিষদের কমিটিগুলোকে সহযোগিতা করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাট নেতাদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তারা অভিশংসন তদন্তকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘সাংবিধানিকভাবে অবৈধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। বিবিসি ও সিএনএন।
সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টারের কথিত দুর্নীতি তদন্তে চাপ দিতে ট্রাম্প ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা আটকে দিয়েছিলেন কিনা, ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদের তিনটি কমিটি তা খতিয়ে দেখছে। আগামী বছর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বাইডেন অনেকখানি এগিয়ে আছেন বলে বেশ কয়েকটি জনমত জরিপে দেখা গেছে। সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যেই ট্রাম্প ২৫ জুলাইয়ের ফোনালাপে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে বাইডেন ও হান্টারের দুর্নীতি তদন্তে চাপ দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই ফোনালাপের কয়েকদিন আগেই তিনি ইউক্রেনে ৪০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা আটকে দেন। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তে চাপ দেয়ার মাধ্যমে ট্রাম্প একটি বাইরের দেশকে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছেন। ট্রাম্প জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপে বাইডেন ও তার ছেলের দুর্নীতি তদন্ত নিয়ে কথা বলার কথা স্বীকার করলেও অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রতিনিধি পরিষদের কমিটিগুলো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। তারা এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার সাক্ষ্যও নিয়েছে। মঙ্গলবার অভিশংসন নিয়ে তদন্ত করা একটি কমিটির কাছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত গর্ডন সন্ডল্যান্ডের সাক্ষ্য দেয়ার কথা থাকলেও হোয়াইট হাউস তা আটকে দেয়। কয়েক ঘণ্টা পর হোয়াইট হাউসের কাউন্সেল প্যাট সিপোলোনে শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা, প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি এবং কংগ্রেসের তিনটি কমিটির ডেমোক্র্যাট চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো ৮ পৃষ্ঠার চিঠিতে অভিশংসন তদন্তে সহযোগিতা করা হবে না বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান।
চিঠিতে কংগ্রেসে কোন ধরনের ভোট ছাড়াই এ ধরনের তদন্তে আপত্তি জানানো হয়। ডেমোক্র্যাটরা ২০১৬ সালের নির্বাচনের ফল বদলে দেয়ার চেষ্টা করেছিল অভিযোগ করে সিপোলোনে অভিশংসন তদন্তকে ‘সাংবিধানিকভাবে অবৈধ’ অ্যাখ্যা দেন। এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন আপনাদের দলীয় এবং অসাংবিধানিক তদন্তে অংশ নিতে পারে না,’ চিঠিতে বলেছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের এ চিঠিতে অভিশংসন তদন্তকে ‘ভুলভাবে উপস্থাপন’ করা হয়েছে মন্তব্য করে প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলেও আইনের উর্ধে নন। মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আপনি আইনের উর্ধে নন। আপনাকেও জবাবদিহি করতে হবে, বলেছেন তিনি। এদিকে রয়টার্স ও জরিপ সংস্থা ইপসসের এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই ট্রাম্পকে ইমপিচমেন্টে সর্বশক্তি নিয়োগে আগ্রহের কথা বলেছেন।
এ পদক্ষেপ যদি ২০২০ সালের নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় তাতেও আপত্তি নেই তাদের। জরিপে নিজেদের ডেমোক্র্যাট দাবি করা ৭৯ শতাংশ ইমপিচমেন্ট চাইলেও রিপাবলিকানদের মধ্যে এ চাওয়া মাত্র ১২ শতাংশের। দুই দলের কোনটিরই সমর্থক নন, জরিপে অংশ নেয়া এদের মধ্যে প্রতি তিনজনে একজন এর পক্ষে বলে জানা গেছে। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে অভিশংসন করতে গিয়ে কংগ্রেস যদি জনকল্যাণমূলক আইনের পেছনে সময় কম দেয় তাতেও সমস্যা নেই। চলতি সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবার হওয়া এ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে মোট ৪৫ শতাংশের সমর্থন দেখা গেছে। অভিশংসনের বিপক্ষে অবস্থান ৩৯ শতাংশের। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে রয়টার্স এবং ইপসসের করা জরিপে অভিশংসনের বিপক্ষে মত ছিল ৪১ শতাংশের আর পক্ষের ৬সমর্থন ছিল এবারের মতোই।
