ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাফল্যের চূড়ায় অদম্য ফেলিক্স

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ৯ অক্টোবর ২০১৯

সাফল্যের চূড়ায় অদম্য ফেলিক্স

এ্যালিসন ফেলিক্স। আমেরিকার কিংবদন্তি স্প্রিন্টার। মাত্র ১০ মাস আগেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরই মধ্যে ট্র্যাকে ফিরে নিজেকে মেলে ধরেছেন দারুণভাবে। দুর্দান্ত পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে একের পর এক রেকর্ড ভাঙতে শুরু করেছেন আমেরিকান স্প্রিন্টার। কাতারের দোহায় সদ্যসমাপ্ত বিশ্ব এ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে কিংবদন্তি উসাইন বোল্টের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ ১৩ স্বর্ণপদক জয়ের মালিকও ফেলিক্স। প্রমীলা এ্যাথলেটদের অনেকেই মনে করেন, মা হয়ে যাওয়া মানেই নিজের স্বপ্ন-সম্ভাবনার সমাপ্তি! সেইসব মহিলা এ্যাথলেটদের জন্য এখন অনুপ্রেরণার নামও এ্যালিসন ফেলিক্স। গত মাসে শুরু হয়েছিল বিশ্ব এ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের। রবিবার পর্দা নামল তার। টুর্নামেন্টের শেষ দিনেও শিরোনামে এ্যালিসন ফেলিক্সের নাম। কাতারের দোহার এই টুর্নামেন্টেই যে এদিন ক্যারিয়ারের ১৩তম স্বর্ণপদক জয়ের রেকর্ড গড়েন তিনি। মহিলাদের ৪গুনিতক ৪০০মিটার রিলেতে যুক্তরাষ্ট্রকে স্বর্ণপদক উপহার দিয়ে নিজেকেও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন এ্যালিসন ফেলিক্স। এর আগে গত সপ্তাহে ৪গুনিতক ৪০০মিটার মিশ্র রিলেতে এবারের আসরের প্রথম স্বর্ণপদক জয়ের স্বাদ পান এই তারকা স্প্রিন্টার। আর তাতেই নতুন এক ইতিহাস গড়েন তিনি। ছাড়িয়ে যান ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের জীবন্ত কিংবদন্তি উসাইন বোল্টকে। সেই ইভেন্টে দল হিসেবেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বরেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জয় করে। আর নিজে ব্যক্তিগতভাবে দুই ইতিহাস গড়েন এ্যালিসন ফেলিক্স। একমাত্র এ্যাথলেট (নারী কিংবা পুরুষ) হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১২টি স্বর্ণপদক জেতার রেকর্ড গড়েন তিনি। অনেকেরই ধারণা এ্যাথলেটিকসের ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে উসাইন বোল্টই শেষ কথা? জ্যামাইকার সাবেক এ গতিমানব স্প্রিন্টে যত দ্রুত হোক না কেন প্রশ্নবোধক চিহৃটি রাখতেই হচ্ছে। সেটি যুক্তরাষ্ট্রের তারকা নারী এ্যাথলেট এ্যালিসন ফেলিক্সের জন্যই। ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের ইতিহাসে অন্যতম সফল এই স্প্রিন্টার যে বোল্টের অবিশ্বাস এক রেরকর্ডকেই ছাড়িয়ে গেছেন। দোহায় বিশ্ব এ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে শুরুর প্রথম সপ্তাহেই নারী-পুরুষ মিশ্র ৪০০ মিটার রিলে দৌড়ে সোনা জেতেন ফেলিক্স। আর তাতেই এ্যাথলেটিকস বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে সবচেয়ে বেশি সোনা জয়ের রেকর্ড গড়েন তিনি। অলিম্পিকে আটবার সোনাজয়ী বোল্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে জিতেছিলেন ১১টি সোনার পদক। মোট পদকসংখ্যা বিচারেও বোল্টকে পেছনে ফেললেন ফেলিক্স। বোল্টের (১৪) চেয়ে চারটি পদক বেশি জিতেছেন ফেলিক্স (১৮)। স্প্রিন্টের ১০০ ও ২০০ মিটার এবং ৪০০ মিটার রিলে দৌড়ে বোল্ট বিশ্ব রেকর্ড ধারি। গতির বিচারে ফেলিক্সের সঙ্গে বোল্টের তুলনা চলে না। তবে ফেলিক্সের এবারের সাফল্য অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে তার নিকট অতীত বিচারে। সন্তান জন্মদান নিয়ে শারীরিক জটিলতার জন্য ১৩ মাস ট্র্যাকের বাইরে ছিলেন ৩৩ বছর বয়সী এ স্প্রিন্টার। ট্র্যাকে ফিরেছেন গত জুলাইয়ে। মাঝের সময়টা নেন নিজেকে নতুনভাবে প্রস্তুত করার চ্যালেঞ্জ হিসেবে। সেই চ্যালেঞ্জে দারুণ সফল ফেলিক্স। দোহায় নিজের মেয়ে ক্যামরিনের সামনে অনন্য কীর্তি গড়তে পেরে দারুণ খুশি ফেলিক্স। বোল্ডের রেকর্ড ভাঙ্গার পরই তিনি বলেন, ‘মেয়ের সামনে পারফর্ম করতে পারা আমার কাছে বিশেষ কিছু। বিশ্বজয়ের সমান। পাগলাটে একটা বছর কাটছে আমার।’ দোহায় ১৩তম স্বর্ণপদক জয়ের ফলে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ফেলিক্সের মোট পদক জয়ের সংখ্যা এখন ২৭টি। এর মধ্যে রয়েছে অলিম্পিকে ছয় সোনার পদকও। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও অলিম্পিক মিলিয়ে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে ফেলিক্সের পদকসংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। অথচ, এই দোহাতে যে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন গত ক্রিসমাসের সময়ও তা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ফেলিক্স। এ প্রসঙ্গে ফেলিক্স বলেন, ‘গত ক্রিসমাসে আমি যখন হাসপাতালে ছিলাম সেই সময়ে বিশ্বাসই করতে পারিনি যে আমি দোহার এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারব। আর পদক জয়ের ব্যাপার তো অনেক দূরের কথা।’ কাতারের দোহার এই আসর নিয়ে অনেক শঙ্কা-সংশয় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গেই সমাপ্তি ঘটল টুর্নামেন্টের ১৭তম সংস্করণের। তবে এবার বাজিমাত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রেকর্ড ১৪টি স্বর্ণপদক জিতেছে আমেরিকান এ্যাথলেটরা। রবিবার শেষ দিনেও তিনটি স্বর্ণপদক জিতেছে আমেরিকা। কাতারের দোহায় টুর্নামেন্টের শেষ দিনেও দাপট দেখানোর ফলে পদক জয়ের তালিকায়ও শীর্ষে থেকে প্রতিযোগিতা শেষ করেছে তারা। ১৪টি স্বর্ণপদকসহ এবার তাদের মোট পদকসংখ্যা ২৯টি। যার ধারে কাছেও নেই কেউ। গত এক যুগের মধ্যে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে এটাই তাদের সেরা ফলাফল। আগামী বছর জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হবে ক্রীড়ার মহাযজ্ঞ অলিম্পিক। তার আগে এই টুর্নামেন্টের অসাধারণ সাফল্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে আমেরিকান এ্যাথলেটদের মধ্যে। ৫ স্বর্ণসহ মোট ১১ পদক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে প্রতিযোগিতা শেষ করেছে কেনিয়া। জ্যামাইকার অবস্থান তিনে। ৩টি স্বর্ণসহ তাদের মোটপদক সংখ্যা ১২টি। টেবিলের চার ও পাঁচ নম্বরে রয়েছে যথাক্রমে চীন এবং ইথিওপিয়া। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি গ্রেট ব্রিটেনের এ্যাথলেটরা। যে কারণে খুব ভাল সাফল্য নেই দেশটির এ্যাথলেটদের নামের পাশে। পদক জয়ের তালিকাতেও গ্রেট ব্রিটেনের দৈনদশা। কাতারের দোহার ১০ দিনের এই টুর্নামেন্টে এবার মাত্র দুটি স্বর্ণপদক জিতেছে গ্রেট ব্রিটেন। ২০০ মিটারে স্বর্ণপদক জিতে এবার ইতিহাস গড়েছেন দিনা-এ্যাশার স্মিথ। আরেকটি স্বর্ণ ক্যাটারিনা জনসন-থম্পসনের। হেপ্টাথলনে ব্রিটিশদের হয়ে দ্বিতীয় স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। ১০০ মিটারে রৌপ্য জিতেন দিনা এ্যাশার স্মিথ। এছাড়া ৪ গুনিতক ১০০ মিটারে দুটি রৌপ্যসহ তাদের মোট পদকসংখ্যা ছয়টি। গত ১৪ বছরের ইতিহাসে এটাই তাদের বাজে পারফর্মেন্স। ২০০৫ সালে হেলসিঙ্কিতে মাত্র তিনটি পদক জিতেছিলেন গ্রেট ব্রিটেনের এ্যাথলেটরা।
×