ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক

কক্সবাজারে পুলিশকে লক্ষ্য করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলি

প্রকাশিত: ১০:৪০, ৯ অক্টোবর ২০১৯

কক্সবাজারে পুলিশকে লক্ষ্য করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা এবার পুলিশের ওপর গুলি চালিয়েছে। সশস্ত্র রোহিঙ্গা ডাকাতদের ধরতে একদল পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ের পাশে গেলে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তবে পুলিশের কেউ হতাহত হয়নি। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় টেকনাফ শালবন ক্যাম্পের পাহাড়ের পাদদেশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। টেকনাফ নয়াপাড়া শালবন পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুনির জানান, রোহিঙ্গা ডাকাত জাকির ও সেলিম গ্রুপের কয়েক সদস্য একস্থানে বসে মিটিং করছে খবর পেয়ে পুুলিশের একটি দল সেখানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পুলিশদলকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে জাকির ও সেলিম গ্রুপের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। একটি সূত্র জানিয়েছে, রাতে জাকির গ্রুপের গুলিতে সেলিম গ্রুপের প্রধান সেলিম নিহত হয়েছে। তার লাশ পাহাড়ে গুম করে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা মীমাংসার জন্য বৈঠকে বসেছিল। রোহিঙ্গারা ওই দু’গ্রুপকে আলইয়াকিন ও আরএসও হিসেবে চিনে। আলইয়াকিনের শীর্ষ সমন্বয়ক আবদুল হাকিম, মৌলবি শফিক, আরএসও জঙ্গীদের মধ্যে মৌলবি ইদ্রিস, আয়াছ, হাফেজ হাসিম, হাফেজ জাবের, মৌলবি ইয়াছিন, আবদুর রহিম ওই দুই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকাগুলোতে ডাকাত দলের তথা রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সন্ত্রাসী কর্মকা- দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দুপুরে ডাকাত দলের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে সাধারণ মানুষগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্প পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মনির জানান, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি জায়গায় শীর্ষ ডাকাত জাকির ও সেলিম গ্রুপের সদস্যরা সোমবার গভীর রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় নিজ দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির ও সেলিমের সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলি সংঘটিত হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানকার লোকজন জানায়, শীর্ষ ডাকাত মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে হত্যা করে লাশ পাহাড়ে গুম করা হয়েছে। তবে লাশ না পওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। গুরুত্বসহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানান, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা জঙ্গীদের কয়েক সদস্য হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- সংঘটিত করে যাচ্ছে। ক্যাম্পে সক্রিয় ডাকাত দলের সদস্যরা হচ্ছে যথাক্রমে, জাকির, সেলিম, কামাল, আমান উল্লাহ, মোহাম্মদ হামিদ, হামিদ মাঝি, খায়রুল আমিন, মাহমুদুল হাসান, হামিদ, নেছার, সাইফুল ওরফে ডিবি সাইফুল, রাজ্জাক, বুলু ওরফে বুইল্যা, রফিক, মাহনুর ওরফে ছোট নুর। তাদের মূল নেতা হিসেবে রয়েছে শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম। ইদানীং ডাকাতদের মধ্যে ব্যক্তিগত কোন্দল বেড়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় অসহায় রোহিঙ্গারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা একাধিক মাঝি জানায়, ডাকাত দলের সদস্যরা মঙ্গলবার দিনে-দুপুরে সাধারণ মানুষ ও পুলিশকে ভয় দেখানোর জন্য পাহাড়ের ভেতর থেকে প্রায় ৩০-৪০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছে। গত রাতেও ডাকাত দলের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন ডাকাত মারা গেছে বলে ক্যাম্পে এলাকায় খবরটি ছড়িয়ে পড়েছে। টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করতে আসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, জাদিমুড়ায় ২৬-২৭ নম্বর ক্যাম্প ২টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বেশ কয়েকবার এই ক্যাম্পগুলোতে অভিযান চালাতে গিয়ে অনেকবার ডাকাত দলের হামলার মুখে পড়েছেন তারা। অভিযানের সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে ডাকাত ও সন্ত্রাসী দলের সক্রিয় সদস্যরা। র‌্যাব-১৫ সিপিসি-১ টেকনাফ ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ লে. মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকায় গোলাগুলির খবর পেয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী হোক আর ডাকাত হোক কাউকে কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত করতে দেব না। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে ডাকাত গ্রুপসহ অন্য যেসব অপরাধচক্র সক্রিয় রয়েছে, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। বেশ কয়েক ডাকাত বিভিন্ন সময় গ্রেফতারও করা হয়েছে। ডাকাত দলের অন্য সদস্যদেরও শীঘ্রই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
×