ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবরার হত্যায় জড়িত দশ ছাত্র পাঁচদিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ৯ অক্টোবর ২০১৯

আবরার হত্যায় জড়িত দশ ছাত্র পাঁচদিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গ্রেফতারকৃত দশ ছাত্রকে পাঁচদিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়টির আরও নয় ছাত্র জড়িত। তারা পলাতক। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্র্শীদের দেয়া তথ্য ও তদন্তে হত্যাকা-ে মোট উনিশ ছাত্রের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের প্রায় সবাই ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার নেতাকর্মী। ইতোমধ্যেই ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা এগারো জনকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে। ফাহাদ হত্যা মামলাটির তদন্তভার চকবাজার মডেল থানা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ৬ অক্টোবর রাত তিনটার দিকে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির কাছ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ছাত্র ও হলের শিক্ষকরা। তাকে দ্রুত ঢাকা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। সোমবার ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ফাহাদকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হত্যাকা- সর্ম্পকে ধারণা পায় পুলিশ। সোমবার দুপুরেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান মোঃ সোহেল মাহমুদ জানান, ফাহাদকে বাঁশ বা স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা পেইনের (ব্যথা) কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আবরারের পিতা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে উনিশ ছাত্রকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সোমবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাকা-ে জড়িত দশ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা সবাই ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার নেতা। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল (২৪)। তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ১৩তম ব্যাচের ছাত্র। সহ-সভাপতি মুহতামিম ফুয়াদ। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৪তম ব্যাচের ছাত্র। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার। বুয়েটের ১৫তম ব্যাচের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ। ১৬তম ব্যাচের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাতুল ইসলাম জিওন। নেভাল আর্কিটেকচার মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গ্রন্থনা ও গবেষণা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্না। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ছাত্রলীগ কর্মী মুনতামির আল জেমি, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মোজাহিদুর রহমান ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এবং মেহেদী হাছান রবিন, মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃতদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে চকবাজার থানা পুলিশ। আদালতে তাদের প্রত্যেককেই দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী প্রত্যেককে পাঁচদিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জানা গেছে, আবরার শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর রুমে থাকতেন। তাকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করলে তিনি মারা যান। আরও ৩ জন গ্রেফতার ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মনিরুজ্জামান মনির (২১) ও আকাশ হোসেন (২১)। হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ। ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঝিগাতলা থেকে রাফাতকে, ডেমরা থেকে মনিরকে ও সন্ধ্যা ৬টায় গাজীপুরের বাইপাল থেকে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। রাফাত বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী। মনির বুয়েটের পানিসম্পদ বিভাগের ১৬তম ব্যাচের এবং আকাশ একই ব্যাচের সিই বিভাগের ছাত্র। এ হত্যাকা-ের ঘটনায় সোমবার আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার রাতেই ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
×