ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সম্রাট হাসপাতালে চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ৯ অক্টোবর ২০১৯

সম্রাট হাসপাতালে চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করে সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ১৩ বছর আগে সম্রাটের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল। আজ (বুধবার) সম্রাটকে হাসপাতালে রাখা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্রাটকে মাদক ও অস্ত্র মামলায় দশ দিন করে বিশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। আজ বুধবার রিমান্ডের শুনানি হওয়ার কথা। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সম্রাটের সহযোগী আরমানেরও মাদক মামলায় দশ দিনের রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আফজালুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সম্রাটের অবস্থা ভাল। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে। বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। জরুরীভিত্তিতে করা পরীক্ষার রিপোর্ট ভাল। শুধু তাই নয়, যে কারও চিকিৎসায়ই অবহেলা করা হয় না। বুধবার মেডিক্যাল বোর্ড মিটিংয়ে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সম্রাট দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে বুকে ব্যথা উঠলে তাকে দ্রুত কারাগার থেকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। গত ৬ অক্টোবর ভোর পাঁচটার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রাম থেকে সহযোগী আরমানসহ সম্রাটকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। সেদিন দুপুরেই সম্রাটকে নিয়ে তার কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারের অফিসে অভিযান চালানো হয়। অফিস থেকে একটি পিস্তল, বিপুল বিদেশী মদ, বুলেট, ম্যাগজিন ও দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া জব্দ করা হয়। পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদ- দিয়ে জেলহাজতে পাঠান র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। এদিকে সোমবার রাতে সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। বুধবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা। ঢাকা মহানগর হাকিম ইয়াসমিন আরা সম্রাটের উপস্থিতিতে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন ও রিমান্ড শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন। অন্যদিকে রমনা থানায় দায়ের মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত আরমানের উপস্থিতিতে তাকে গ্রেফতার দেখানোর ও রিমান্ড শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করে। প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেলে র‌্যাব-১ এর উপসহকারী পরিচালক আবদুল খালেক বাদী হয়ে রমনা মডেল থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দুটি দায়ের করেন। সম্রাট দুই মামলায় আসামি হলেও আরমানকে শুধু মাদক মামলায় আসামি করা হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ‘ক্যাসিনোবিরোধী’ সাঁড়াশি অভিযানে মতিঝিলের ইয়ংমেন্স ক্লাবে জুয়া খেলা অবস্থায় ১৪০ নারী-পুরুষ গ্রেফতার হয়। ক্লাবটিতে ক্যাসিনো চালানোর দায়ে সেদিনই গুলশানের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় আরেক ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। পরদিন কলাবাগান ক্লাব থেকে গ্রেফতার হয় কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ। দু’দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতন থেকে গ্রেফতার করা হয় ‘ঠিকাদার কিং’ জি এম শামীমকে। এরপর বিদেশ পালানোর সময় বিমান থেকে গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো চালানোর মাস্টারমাইন্ড সেলিম প্রধানকে। তারা রিমান্ডে ক্যাসিনোর নেপথ্যের মূল কারিগর হিসেবে সম্রাটকেই দায়ী করেন। আটকদের দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক অনেকের সম্পদের বিষয়ে তথ্য মেলে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্রাট ও তার পরিবারের অন্য সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। নানা কানেকশনে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমানসহ মোট ১২ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেকের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িতরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, এজন্য ছবিসহ বিশেষ নির্দেশ পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর থেকেই সম্রাটকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সর্বশেষ সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব সূত্র জানা গেছে, দেশে ক্যাসিনো জুয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে খালেদ মাহমুদ, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি ফিরোজ, জি কে শামীম, সেলিম প্রধান, মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সম্রাটের সহযোগী আরমানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে। তাদের টিএফআই সেলে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে। কারণ এরা পৃথক পৃথক জিজ্ঞাসাবাদে একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। তথ্যে গরমিল হচ্ছে। এজন্য তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডির মানিলন্ডারিং মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আটকদের অর্থ পাচারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
×