ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেষ রক্ষা করতে পারবেন কি নেতানিয়াহু

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৯ অক্টোবর ২০১৯

 শেষ রক্ষা করতে পারবেন কি নেতানিয়াহু

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেহানিয়াহুর দল লিকুড পার্টি ১৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গানজের দল ব্লু এ্যান্ড হোয়াইট পার্টির চেয়ে দুটি আসন কম পেয়েছে। তার পরও নেতানিয়াহুকেই নয়া সরকার গঠন করতে প্রথম সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং এ জন্য তাকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে ২৮ দিন। ঐক্য সরকার গঠনে ব্লু এ্যান্ড হোয়াইট পার্টি ও লিকুড পার্টির মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট রিউ ভেন রিভলিন নেতানিয়াহুকে সরকার গঠনের ম্যান্ডেট দেন। নেতানিয়াহুর জন্য এটা সাময়িক বিজয় হলেও সরকার গঠনের কাজটা অসম্ভব হযে দাঁড়াতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুস্পষ্ট পথ ছাড়াই তাকে এখন যেনতেনভাবে একটা কোয়ালিশন গঠনের চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টা তিনি নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এই সংক্রান্ত শুনানি আগামী ২-৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ অবস্থায় এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হচ্ছে যে ইসরাইল শীঘ্রই আরেক নির্বাচনের দিকে ধাবিত হতে পারে, যা হবে এপ্রিলের পর থেকে তৃতীয় নির্বাচন। সরকার গঠনের ম্যান্ডেট পেয়ে নেতানিয়াহু আবারও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গানজকে তার সঙ্গে ঐক্য সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু গানজ সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তার দল যেহেতু সর্বাধিক আসন পেয়েছে তাই ঐক্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী তারই হওয়া উচিত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে তার অধীনে কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। ১৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ১২০ আসনের পার্লামেন্টের ৩৩টি আসনে ব্লু এ্যান্ড হোয়াইট পার্টি এবং ৩১টি আসনে লিকুদ পার্টি জয়ী হয়। সরকার গঠনের জন্য দরকার ৬১টি আসন। ইসরাইল বেইতেইনু পার্টি ও অন্য ছোট ছোট দলের সমর্থনের দরকার হবে সরকার গঠনের জন্য। নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্টকে বোঝাতে পেরেছেন যে, সরকার গঠন করার মতো সমর্থন তার পক্ষে আছে। অন্তত গানজের চেয়ে বেশি আছে। তাই তাকেই ম্যান্ডেট দেয়া হয়েছে। ব্লু এ্যান্ড হোয়াইট নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টিকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিল যে তাকে বাদ দিয়ে গানজের নেতৃত্বে ঐক্য সরকার যেন গঠন করা হয়। কিন্তু আলোচনায় ফল দেয়নি। প্রেসিডেন্ট রিভলিনও গানজ ও নেতানিয়াহু উভয়কে মিলে ঐক্য সরকার গঠন করতে বলেছিলেন। তাতেও কাজ হয়নি। গানজ মনে মনে চেয়েছেন নেতানিয়াহুকেই যেন প্রথম সরকার গঠন করার সুযোগ দেয়া হয়। কারণ তিনি নিশ্চিত যে নেতানিয়াহু ব্যর্থ হবেন। ব্লু এ্যান্ড হোয়াইট পার্টিও মনে করে যে তিনি ব্যর্থ হবেন এবং তখন গানজকে সরকার গঠন করতে বলা হবে। ইসরাইলী-আরব পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রস্তাব দিয়েছেন যে, সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান গানজকে প্রধানমন্ত্রী করা হোক। আরব দেশগুলোর জোট হিসেবে পরিচিত জয়েন্ট লিস্ট বলেছে যে, তারা ক্ষমতা থেকে নেতানিয়াহুর অপসারণ চায়। ১৯৯২ সালের পর থেকে এই প্রথম কোন আরব রাজনৈতিক গোষ্ঠী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য কারোর নাম অনুমোদন করল। জয়েন্ট লিস্টের নেতা আইমান ওদেহ বলেন, তার জোটের অগ্রাধিকারমূলক দায়িত্ব হলো নেতানিয়াহুকে আর একটি মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে না দেয়া। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নির্বাচনে জয়েন্ট লিস্ট ১৩টি আসন পেয়েছে। গানজ যদি এই ১৩ জন সদস্যের সকলের সমর্থন লাভ করেন তার পরও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ৬১টি আসন পাওয়া থেকে তিনি সামান্য পিছিয়ে থাকবেন। এদিকে ইসরাইলে সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে এই আশঙ্কা থেকে মিসরের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একটি দল ইসরাইলে গোপন সফরে গিয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের ধারণা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসরাইল ও গাজা ভূখ-ের হামাসের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে। জেরুজালেমে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী থাকলে পুরোদস্তুর যুদ্ধ বেধে যাওয়া রোধ করা ইসরাইলের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×