ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিমা বিসর্জনে মাধ্যমে বিদায় নিল দুর্গা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ অক্টোবর ২০১৯

প্রতিমা বিসর্জনে মাধ্যমে বিদায় নিল দুর্গা

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যাচ্ছেন দেবী। এক বছর পর আবার তার ভক্তদের মাঝে পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা থেকে রাজধানীতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিজয়া শোভাযাত্রা শেষে বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাটের ওয়াইজ বিনা স্মৃতি স্নান ঘাটসহ (কেন্দ্রীয় বিসর্জন নিয়ন্ত্রণ ঘাট) নদীটির তীরে অন্যান্য এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দয়া হচ্ছে। দুপুর দেড়টার দিকে ওয়াইজ ঘাটে প্রথম প্রতিমা বিসর্জন দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আসে ধানমন্ডি পূজা উদযাপন কমিটিসহ বেশ কয়েকটি কমিটি। এদিকে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের দশমীতে আজ মঙ্গলবার মণ্ডপে মণ্ডপে দশমীর বিহীত পূজার মধ্য দিয়ে ঘটে সমাপ্তি। অতঃপর দেবীর বিসর্জন আর ‘শান্তিজল’ গ্রহণ। গত শুক্রবার বোধনে অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবীর আগমন ঘটে মর্ত্যে। হিন্দু বিশ্বাসে- টানা পাঁচদিন মৃন্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে ফিরে যাচ্ছেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে। আর ‘শান্তিজল’ গ্রহণে শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ধান-দূর্বার দিব্যি, ফের এসো মা/মা তুমি আবার এসো- ভক্তদের এমন আকুতিতে বিদায় নিচ্ছেন দেবী। আজ সকাল থেকেই বিহিত পূজার পর ভক্তের কায়মনো প্রার্থনা আর ঢাক-উলুধ্বনি-শঙ্খনিনাদে হিন্দু রমণীদের পরম আকাঙ্ক্ষিত সিঁদুর খেলায় মুখর হয়ে ওঠে মন্দিরগুলো। একদিকে বিদায়ের সুর। অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবার ওয়াজ ঘাটে ৯৭ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে। আর এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে ৪৮৩টি বেশি। রাজধানীতে ২৩৬টিসহ ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ২৭১টি মণ্ডপে পূজা হয়। উদযাপন পরিষদ জানায়, আজ দুপুর একটা থেকে রাত দশটার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম শেষ করার কথা রয়েছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, মধ্যরাত পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলে। এদিকে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, বনানী, তাঁতী বাজার, শাঁখারী বাজার, স্বামীবাগসহ বিভিন্ন মণ্ডপে চলে বিষাদে-আনন্দে শেষ বিদায় উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সকল অপশক্তির বিনাশ হয়। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানো হিন্দু নারীদের উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। বিকেল তিনটার পর ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় মন্দির থেকে বিজয়ার শোভাযাত্রা শুরু হয়ে জগন্নাথ হল, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, পুলিশ হেড কোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, গুলিস্তান, নবাবপুর, রায় সাহেব বাজার হয়ে সদরঘাটের ওয়াইজঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেয়। প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার পর ভক্তকুল শেষবারের মতো ধূপ-ধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়। নদীপাড়ে ধর্মীয় রীতি মেনে অপরাজিতা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শেষে ‘বল দুর্গা মায় কি, জয়’ ধ্বনিতে প্রতিমা পানিতে ফেলে গ্রহণ করা হয় ‘শান্তিজল’। অনেকে ঘরে আনেন সেই ‘শান্তিজল’। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় জানান, এবারের পূজা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।
×