ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইরানের পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে জাওয়াদ জারিফ

পরমাণু চুক্তি বাতিলের সুযোগ নেই

প্রকাশিত: ১১:৫২, ৮ অক্টোবর ২০১৯

পরমাণু চুক্তি বাতিলের সুযোগ নেই

ইউরোপের যেসব দেশ তেহরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে তাদের পক্ষে আইনগতভাবে চুক্তি ত্যাগের কোন সুযোগ নেই। এমনটাই দাবি করেছেন ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ। রবিবার দেশটির পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে এসব মন্তব্য করেন তিনি। ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইউরোপীয় তিন দেশ- ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি পরমাণু সমঝোতায় দেয়া নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ সমঝোতা লঙ্ঘনও করেছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সমঝোতাটি ত্যাগ করার মাধ্যমে এটিকে নগ্নভাবে অসম্মান করেছে। যে কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোও কোন কোন ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের পদাঙ্ক পর্যন্ত অনুসরণ করেছে।’ জাওয়াদ জারিফ আরও বলেন, ‘২০১৫ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে ইরানের পরমাণু সমঝোতা একটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়। যে কারণে প্রস্তাবটি মেনে চলতে সবাই বাধ্য। কাজেই বিষয়টি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’ যদিও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তেল রফতানিতে এরই মধ্যে সম্ভাব্য সব পদ্ধতি ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন ইরানী জ্বালানিমন্ত্রী বিজন জাঙ্গানেহ। তিনি বলেন, ‘নিজ দেশের অপরিশোধিত তেল রফতানিতে তেহরানের বৈধ অধিকার। তাই আমরা যে কোন প্রক্রিয়ায় এই তেল বিক্রি করব।’ এর আগে ২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচী কমানোর জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে বিশ্বের ক্ষমতাধর ছয় দেশের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছিল। যেখানে শর্ত ছিল ইরান তার পরমাণু কর্মসূচী কমিয়ে আনবে, যার বিনিময়ে তাদের ওপর আরোপিত সকল অবরোধ ক্রমশ তুলে নেয়া হবে। এতে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি। যদিও পরবর্তীতে গতবছরের ৮ মে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে একে একটি অকার্যকর চুক্তি বলে মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে তিনি তেহরানের তেল বিক্রিতে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেন; যা এখনও অব্যাহত আছে। এর আগে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি পরিবর্তন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে রাশিয়া। তাদের ওই চেষ্টায় রাশিয়া সমর্থন দেবে না জানিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই লাভরোভ বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী নিয়ে কূটনীতিতে জটিলতা তৈরি করবে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের কাছে ইউরেনিয়াম প্রকল্প সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। চুক্তিটির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত হলেও হোয়াইট হাউস চায় ইউরোপীয় স্বাক্ষরকারীরা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে স্থায়ী অবরোধ আরোপ করুক। শুক্রবার চুক্তিটি আরও ১২০ দিনের জন্য বহাল রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এটিই ‘শেষ সুযোগ’ যাতে ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্র এর ‘ভয়াবহ ত্রুটি’ সংশোধন করতে পারে। তবে ইরান বলেছে, ট্রাম্প একটি ‘সর্বসম্মত’ চুক্তিকে খাটো করে দেখার ‘দুঃসাহসী পদক্ষেপ’ নিচ্ছেন। রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই লাভরভ মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যা করার চেষ্টা করছে আমরা তা সমর্থন করব না। চুক্তিতে লেখা বিষয়ে পরিবর্তন আনা বিমূর্ত বিষয় যা ইরানের জন্য পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।’ রাশিয়ার এই শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, ইরানের সঙ্গে বিদ্যমান পরমাণু চুক্তি রক্ষায় রাশিয়া কাজ করে যাবে। এটা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। লাভরভ বলেন, ইরানের সঙ্গে ওয়াশিংটন যে আচরণ করছে তা লক্ষ্য করেছে পিয়ংইয়ং। তারাও যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে এমন চুক্তি করে পরে তাও পরিবর্তন করতে বলা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি চুক্তিটি পাশে সরিয়ে রেখে ইরানকে বলা হয়, ‘তুমি বাধ্যবাধকতা চালিয়ে যাও অথবা আমরা তোমার ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা জারি করব’, বিষয়টি উত্তর কোরিয়ার জায়গা থেকে দেখুন।’ তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কের দেশ দু’টির পরমাণু কর্মসূচীকে একই দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানান।
×