ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১ বছরে বেড়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৮ অক্টোবর ২০১৯

১ বছরে বেড়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মোবাইলের মাধ্যমে পারসন টু পারসন বা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে লেনদেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এক মাসে পারসন টু পারসন লেনদেন হয়েছে ৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকার। কিন্তু এক বছর আগেও এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে মোবাইলের মাধ্যমে পারসন টু পারসন বা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে লেনদেন হয়েছে ৮ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। আগের মাস জুলাইয়ে এই লেনদেন ছিল ৮ হাজার ১২২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ্যাকাউন্ট ও লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি সচেতনতাও বেড়েছে এখন। জনগণ এখন ব্যাংকের লাইনে না দাঁড়িয়ে ঘরে বসেই লেনদেন করতে বেশি আগ্রহী। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একজন গ্রাহক হাবিবুর রহমান জানান, দেশের সুপারশপগুলোতে এখন মোবাইলের মাধ্যমেই লেনদেন বেশি হয়। বিকাশ ও রকেটসহ অন্যান্য ব্যাংক এখন ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশব্যাক অফার দেয়। এতে কেনাকাটার পাশাপাশি সাশ্রয়ও হয় কিছু টাকা। এসব লেনদেন ব্যক্তিগত হিসেবের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। পার্সন টু পার্সন পেমেন্টস (পি২পি) হলো একটি অনলাইন প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে অন্য ব্যক্তির এ্যাকাউন্টে ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তর করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এখন প্রতিদিনই বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা। বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। গত আগস্ট শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেন ছাড়িয়েছে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুত, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিটেন্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ধরনের লেনদেন। তাই দিন দিন এর গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দেশের ব্যাংকিং সেবায় এসেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। দ্রুততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ কোটি ৩৬ লাখ। এরমধ্যে ৪ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার হিসাবই বন্ধ রয়েছে। শতাংশের হিসেবে প্রায় ৬৫ শতাংশ হিসাব নিষ্ক্রিয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে মোট ১৬টি ব্যাংক। এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫১ হাজার ১১৫ জনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৫ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৬৫ লাখ ৮৮ হাজার লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে আদান-প্রদান হয়েছে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ৭ শতাংশ কম। উত্তোলন করেছে ১২ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা, যা জুলাইয়ের তুলনায় সাড়ে ৫ শতাংশ কম। রেমিটেন্স এসেছে ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১২ হাজার ৫২৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ১২ হাজার ৩৪৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আগস্টে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৯০৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে; যা আগের মাসের তুলনায় কমেছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আগস্ট মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় রেমিটেন্স এসেছে ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; যা জুলাই মাসে ছিল ২৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে রেমিটেন্স কমেছে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এ সময়ে মার্চেন্ট পেমেন্ট (কেনাকাটার বিল) করা হয়েছে ৪০৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা; যা আগের মাসের চেয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। তবে এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ প্রায় ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর সরকারী পেমেন্ট রেকর্ড পরিমাণে ৯৭ দশমিক শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
×