ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার কাজ শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৭ অক্টোবর ২০১৯

  হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার কাজ শুরু হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে যে কোন সময় ভাঙ্গা ও অপসারণের কাজ শুরু হচ্ছে রাজধানীর হাতিরঝিলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন। বিশাল এ ভবনটি কোন প্রকার বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে নয় সরাসরি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই যথাসম্ভব দ্রুতই ভাঙ্গা হবে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। একই সঙ্গে কয়েক ধাপে সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যেই ভবনটি সম্পূর্ণ ভাঙ্গা হবে বলে জানান তিনি। গত ১৬ এপ্রিল বহুল আলোচিত বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙ্গা ও মালামাল অপসারণের জন্য নিলাম দরপত্র আহ্বান করে রাজউক। এর প্রায় ৭ মাসের মাথায় সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হলো। রাজউক সূত্র জানায়, ভবনটি ভাঙ্গার কাজ শুরুর পরবর্তী সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে দুটি বেজমেন্টসহ ১৫ তলা ভবনটির সকল কাজ শেষ করতে দরপত্রের নিলাম পাওয়া সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালাম এ্যান্ড ব্রাদার্সকে ভাঙ্গার কাজ শুরুর অনুমতি (কার্যাদেশ) প্রদান করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর আগে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অতি দ্রুতই কাজ শুরু করতে অনুমতি প্রদান করে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। ভবনটি ভাঙ্গার কাজ সঠিকভাবে তদারকি করতে রাজউক কর্তৃক একটি বিশেষ টিম ও ঠিকাদার কর্তৃক একটি পৃথক টিম গঠন করবে। টিম দুটি যে কোন প্রকার সমস্যা দেখলে যৌথভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার যে কোন সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভবনটি ভাঙ্গার সময় যাতে কোন প্রকার শব্দ দূষণ, বালি দূষণ বা কোন প্রকার নিরাপত্তাহীনতার সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেজন্য বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েক ধাপে সময় নিয়ে ভবনটির বিভিন্ন অংশের ভাঙ্গার কাজ করা হবে তা নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে নিলামে পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর আগে বিশাল এ ভবনটি ধাপে ধাপে মোট ১১ মাসে সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে ভবনটি ভাঙ্গা সম্ভব বলে রাজউকের কাছে সময় চায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর প্রেক্ষিতে রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আবেদিত বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই শেষে বিবেচনাপূর্বক নির্ধারিত ৬ মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভবনটি ভাঙ্গার সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাজউক ঠিকাদারকে চিঠি প্রদান করে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রাজউক সূত্র জানায়, ৬ অক্টোবর হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্পের রাজউক অংশের পরিচালক কর্তৃক ভাঙ্গার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালাম এ্যান্ড ব্রাদার্স সবাবপুর রোড ঠিকানায় কার্যাদেশের চিঠি প্রদান করে। এতে বলা হয়, দুটি বেজমেন্টসহ ১৫ তলা বিশিষ্ট বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গা ও মালামাল অপসারণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি ৭০ লক্ষ্য টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় নিলাম মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে শর্ত স্বাপেক্ষে রাজউক চেয়ারম্যান অনুমোদন করেন। চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা হয়, চিঠি প্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে চুক্তিপত্র করতে রাজউকে দাখিল করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। একই সঙ্গে ভবন ভাঙ্গার কাজ চলাকালীন সর্বক্ষণিক কাজ তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দাখিল করতে হবে। এতে কারা কিভাবে মনিটরিংয়ের কাজ করবেন তার বিস্তারিত উল্লেখ করা থাকবে। চিঠি প্রাপ্তির পর সাত দিনের মধ্যেই নিলামের দর অনুযায়ী সকল অর্থ ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। রাজউক সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১১ মাসে কিভাবে ভবনটি ভাঙ্গা হবে তার একটি দিনভিত্তিক বর্ণনা প্রদান করে মন্ত্রণালয়কে চিঠি প্রদান করে। এতে ভবন সংলগ্ন প্রবেশপথ বা বেইলি ব্রিজ ভেঙ্গে ভারি যানবাহন প্রবেশের জন্য রাস্তা নির্মাণ করতে এবং ভবনের বাইরে যন্ত্রপাতি ও যানবাহনের পার্কিং-এর মাটি ভরাট কাজের জন্য ১৫ দিন সময় চান। এছাড়া বাইরের গ্লাস ফিটিংস অভ্যন্তরীণ পানি বিদ্যুত গ্যাস বাথরুম ফিটিংস পার্টিশন ও ডেকোরেশন অপসারণ করতে একমাস সময় চায়। মূল ভবনটি ভাঙ্গতে ওপরের তলা থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোর পর্যন্ত যাবতীয় ভাঙ্গা ও অপসারণে ৮ মাস সময় চায় এছাড়া বেজমেন্ট ও ভূ-গর্ভস্থ ট্যাঙ্ক ইত্যাদি ভাঙ্গা ও অপসারণে ৪৫ দিন সময় চায় সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে রাজউক কর্তৃপক্ষ তা ৬ মাসে নামিয়ে আনে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণ পূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে রাজধানীর হাতিরঝিলের ওপর স্থাপিত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনটি সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে ভাঙ্গা ও মালামাল অপসারণের কাজ শুরু করা হচ্ছে। ভবনটি কোন প্রকার বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে নয় সরাসরি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই ভাঙ্গা হবে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভবন ভাঙ্গার জন্য ৬ অক্টোবর ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদান করেছে। এজন্য ভবন ভাঙ্গার নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কোন পদ্ধতিকে দুটি বেজমেন্টসহ মোট ১৫ তলার এ বিশাল ভবনটি ভাঙ্গা হবে তার পৃথক পৃথক পরিকল্পনা জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঠিকাদার অতি দ্রুততার সঙ্গে ভবনটি ভাঙ্গার বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা রাজউককে প্রদান করবেন।
×