ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণাঢ্য উৎসবে সার্বজনীন রূপ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

প্রকাশিত: ১০:০৯, ৭ অক্টোবর ২০১৯

বর্ণাঢ্য উৎসবে সার্বজনীন রূপ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

জনকণ্ঠ ফিচার॥ দুর্গা পূজায়, হ্যাঁ, ধর্ম আছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নানা আচার পালন করতে হয়। কিন্তু উৎসব সবার। প্রতিবারের মতো এবারও অসাম্প্রদায়িক উৎসবে মেতেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকায় দুর্গোৎসবের সার্বজনীন রূপ দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যরাও এখন চমৎকার সেজে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, সন্ধ্যার আগে কাজ থেকে মুক্ত করে নিচ্ছেন নিজেকে। তার পর এই মন্ডপে ওই মন্ডপে ঘুরে বেড়ানো। কোন মন্ডপে কেমন প্রতিমা গড়া হলো, কৌতূহলী চোখে দেখা। সব ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণের কারণেই মন্ডপে গায়ে গা লাগা ভিড়। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। ভিড়ের মধ্যেই চলছে ছবি তোলা। নাড়ু খাওয়া। গ্রামীণ ঐতিহ্যের মেলা থেকে কপালের লাল টিপ কিংবা চিনির বাতাসা কিনে বাড়ি ফিরছেন যারা, তাদের ধর্মীয় পরিচয় কেউ আর জানতে চাইছেন না। বরং অসাম্প্রদায়িক বাঙালী চেতনার জয়গান করা হচ্ছে সর্বত্র। এবার রাজধানীর ২৩৬ মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংখ্যায় মোটেও কম নয়। এরপরও কোন মন্ডপ খালি পড়ে নেই। বরং উপস্থিতি দেখে মনে হারিয়ে যাওয়ার ভয় হয়। সব ধর্ম বর্ণের মানুষ উৎসবে যোগ দিয়েছেন। অষ্টমীর দিন বনানী পূজা মন্ডপে গিয়ে দেখা গেল অসংখ্য দর্শনার্থী। বাইরে ও ভেতরে সমান আসা যাওয়া। সকলের চোখে মুখে উৎসবের আমেজ। এখানে কথা হচ্ছিল জুবায়ের, হিমেল ও সাবরিনার সঙ্গে। তিনবন্ধু মিলে প্রতিমা দেখতে এসেছিলেন। কথা বলতে বলতেই চোখ গেল সাবরিনার পরে আসা শাড়িটির দিকে। সিল্কের শাড়িতে পূজার মোটিফ ব্যবহার করে চমৎকার ডিজাইন করা হয়েছে। তরুণী জানালেন, সনাতন ধর্মাবলম্বী এক বান্ধবী তাকে এই শাড়ি উপহার দিয়েছে। নতুন শাড়ি পরে প্রতিমা দেখতে বের হয়েছেন তিনি। জুবায়ের মজা করে বলছিলেন, ছেলে হওয়ায় শাড়িটা আর পাওয়া হলো না। তবে পূজা উপলক্ষে একটি করে টিশার্ট আমরা পেয়েছি। কলাবাগান মাঠে আয়োজিত দুর্গোৎসবেও উপচে পড়া ভিড়। এখানে স্ত্রী ও একমাত্র শিশু সন্তানসহ প্রতিমা দেখতে এসেছিলেন এ্যাডভোকেট সোহরাব আহমদ। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সময় আমরা বন্ধুরা মিলে গ্রামের মন্ডপে গিয়েছি। ঢাকের শব্দ কানে এলে আর স্থির থাকতে পারতাম না। কী হচ্ছে দেখার জন্য ছুটে যেতাম। এখন এসেছি সন্তানের জন্য। ও আসা যাওয়ার পথে আলোক সজ্জা দেখে মুগ্ধ। ভেতরে এসে মুগ্ধতা আরও বেড়ে গেছে। এদিকে, পূজা প্রতিমা দেখার পাশাপাশি মেলায় ঘুরে কেনাকাটা করছেন অনেকে। পুলিশী বাধা সত্ত্বেও বিভিন্ন মন্ডপের আশপাশের রাস্তায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের মেলা বসেছে। ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার পথে বিচ্ছিন্ন কিছু দোকান চোখে পড়ে। এসব দোকানে পূজার নানা সামগ্রী। কাসা পিতল শিল্পের নিদর্শন। নাড়িকেলের নাড়ু, মোয়া, বাতাসার মতো বাঙালী ঐতিহ্যের খাবারও সাজিয়ে রেখেছেন অস্থায়ী দোকানিরা। একটি দোকান থেকে মুড়ি মুড়কি কিনে ফিরছিলেন আশরাফুল ইসলাম। বললেন, দুই মেয়ে নিয়ে ঢাকেশ্বরীতে প্রতিমা দেখতে এসেছিলাম। যাওয়ার সময় মনে হলো, বাসায় ওর মায়ের জন্য কিছু নিয়ে যাই। তাই মুড়ি মুড়কি কেনা। তিনি বলেন, বাঙালী সব সময়ই উৎসবপ্রিয়। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সুযোগ খুঁজে বটে, ওরা বেশি সময় দাপট দেখাতে পারে না।
×