ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল বিআরটিসি ডিপোর অর্ধেক বাস অচল

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৭ অক্টোবর ২০১৯

বরিশাল বিআরটিসি ডিপোর অর্ধেক বাস অচল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির এক সময়ের সর্বাধিক লাভজনক দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বরিশাল বাস ডিপোটি দীর্ঘদিনের পুরনো লক্কড়মার্কা বাসের ভারে এখন অচল হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় সচল বাসের অভাবে এ ডিপোর অনেক লাভজনক রুটেও যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। চলমান বেশিরভাগ রুটেই দীর্ঘদিনের পুরনো ও লক্কড়মার্কা বাস যাত্রী পরিবহন করছে। সরকারী এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটির বেশিরভাগ বাসই এখন যাত্রীবান্ধব নয়। এছাড়া সামান্য বৃষ্টি কিংবা মাছের ঝুড়ি ছাদে বহন করলে বাসের ভেতরে পানি পড়তে থাকে অনবরত। তাই এসব রুটে সব সময় যারা চলাচল করেন সেসব যাত্রী পানি থেকে রক্ষা পেতে ছাতা নিয়েই বাসে ওঠেন। আর বাসের মধ্যে যাত্রীদের ছাতা মাথায় দিয়ে বসতে হয়। জানা গেছে, সম্প্রতি সংস্থার বহরে বিপুলসংখ্যক এসি/ননএসি বাস যুক্ত হলেও এ ডিপোটির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ১০টি বাস। যার মধ্যে মাত্র দুটি এসি বাস। অথচ রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটির দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এই বাস ডিপোটির বহরে থাকা প্রায় ৭০টি বাসের অর্ধেকই এখন অচল। যার আয়ু শেষ হয়েছে আরও এক দশক আগে। এসব বাসের ২৫টি আর মেরামতযোগ্য নয়। সূত্রমতে, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিআরটিসির বাস ডিপোটি ১৯৮২ সালে সামরিক সরকার বন্ধ করে দেয়ার পর ১৯৮৭ সালে পুনরায় চালু করা হয়। এ সময় পুরনো বাসই ছিল একমাত্র ভরসা। বর্তমানে শুধু বরিশাল-মাওয়া রুটের জন্য ন্যূনতম ১২টি এসি বাস প্রয়োজন। অথচ বাস আছে মাত্র দুটি। বছর পাঁচেক আগে ভারত থেকে আমদানি করা এসি বাস থেকে এই ডিপোটির জন্য ১০টি গাড়ি দেয়া হলেও তার কোনটির এসি এখন আর কাজ করছে না। সম্প্রতি ভারত থেকে আমদানি করা নন এসি টাটা বাস থেকে আটটি ও দুটি অশোক লেল্যান্ড এসি বাস বরিশাল ডিপোতে দেয়া হয়েছে। যার সবই চলছে বরিশাল-মাওয়া রুটে। অথচ ডিপোটির বাস সাগরপারের কুয়াকাটা থেকে উত্তরের রংপুর আর উত্তর-পশ্চিমের চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে। কিন্তু সংস্থার বরিশাল ডিপোর চলমান ৩৫টি বাসের বেশিরভাগই যাত্রীদের ন্যূনতম আরামদায়ক ভ্রমণের কোন সুযোগ নেই। ভালমানের বাসের অভাবে ইতোমধ্যে বরিশাল-খুলনা-যশোর-বেনাপোল, চরফ্যাশন-ভোলা-বরিশাল-যশোর এবং কুয়াকাটা-সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। সূত্রমতে, বরিশাল থেকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা রুটে যে বাসটি চলছে তার অবস্থা খুবই নাজুক। এছাড়া বরিশাল-খুলনাসহ বিভিন্ন রুটে যেসব বাস চলছে তার মানও অত্যন্ত খারাপ। অনেক বাস যান্ত্রিক গোলযোগে রাস্তায় আটকে যাচ্ছে। ভালমানের বাসের অভাবে বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনা রুটে যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এ সুযোগে সংস্থাটির খুলনা, বগুড়া ও পাবনা ডিপো থেকে বেশকিছু বাস ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। এ ডিপোটির আয় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে। নিকট অতীতেও ডিপোটির মাসিক রাজস্ব আয় ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। মাস কয়েক আগে তা এক কোটিরও নিচে নেমে গিয়েছিল। তবে গত মাসে তা এক কোটির ওপর উঠেছে। এ ডিপোতে ১৯ দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীসহ দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। যাদের পেছনে মাসিক ব্যয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। উৎসবের মাসে ব্যয় বেড়ে হয় দেড়গুণ। বিআরটিসির বরিশাল বাস ডিপোটি লাভজনক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনাসহ সুষ্ঠু যাত্রীসেবা প্রদানের লক্ষ্যে এখানে নতুন ২৪টি বাস প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিষয়টি সংস্থায় সদ্য যোগদান করা চেয়ারম্যানও অবগত রয়েছেন। বরিশাল বাস ডিপোর ম্যানেজার জানান, তিনি দেড় মাস আগে এখানে যোগ দেয়ার পর এখানের সার্বিক পরিস্থিতিসহ ভালমানের বাসের চাহিদার কথা সদর দফতরকে অবহিত করেছেন। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×