ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, বিদ্যুত নেই ॥ চলছে সেবা

প্রকাশিত: ০৭:১১, ৭ অক্টোবর ২০১৯

ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, বিদ্যুত  নেই ॥ চলছে সেবা

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৬ অক্টোবর ॥ সখীপুর উপজেলায় ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের একটিতেও বিদ্যুত সংযোগ নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। চারটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নানা সঙ্কটের কারণে মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার গ্রামে পর্যায়ে দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য সারাদেশে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৩৭টি স্থানে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে ৫০৪ বর্গফুটের ছোট আকারে ভবন নির্মাণ করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল প্রকল্প বাতিল করে দেয়। ফলে গ্রামপর্যায়ের ওইসব ভবন পাঁচ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। ২০০৮ সালে পুনয়ায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ওই প্রকল্প চালু করে। বিগত ২০০১ সালে প্রতিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য একজন করে সিএইচসিপি নিয়োগ দেয়। একজন সিএইচসিপি প্রতিদিন (শুক্রবার বাদে) গড়ে ৫০ থেকে ৬০ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ২৭ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করে। গর্ভবতী মহিলাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য প্রতিটি ক্লিনিকে একজন স্বাস্থ্য সহকারী সপ্তাহে তিন দিন ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী তিন দিন ক্লিনিকের সিএইচসিপিকে সহায়তা করে। কাকড়াজান ইউনিয়নের খুংগারচালা কমিউনিটি ক্লিনিকের গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকের চারপাশের দেয়াল ফেটে গেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে মরিচা ধরা রড বেরিয়ে আছে। বিদ্যুত না থাকায় ভেতরে দিনের বেলায়ও অন্ধকার। ক্লিনিকের সিএইচসিপি ইব্রাহিম আল মামুন বলেন, ভূমিকম্প হলে নিশ্চিত এ ভবন ধসে যাবে। খুংগারচালা দক্ষিণপাড়া এলাকার রোগী রোজিনা আক্তার শরীরে জ্বর নিয়ে ক্লিনিকে এসেছেন। তিনি বলেন, এখানে আইলে ডর লাগে। মুনে অয় কোনসুম জানি ছাদ ভাইঙ্গা পড়ে। খুংগারচালার ক্লিনিকের মতো আরও ১০টি ক্লিনিককে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এগুলো হচ্ছে- লাঙুলিয়া, আটিয়াপাড়া, করটিয়াপাড়া, কালিয়ান বড়বাইদপাড়া, ইছাদিঘী, চাকদহ, খালিয়ার বাইদ, কৈয়ামধু ও কামালিয়া চালা। উপজেলা সিএইচসিপি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহানন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৫টিতে সংস্কার চলছে। ৪টি ক্লিনিকের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় ওই ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম ভাড়া ভবনে চলছে। বাকি ২৮টি ভবনই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি ক্লিনিক অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসে ভয়ে ভয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যায় না। ঝুঁকি এড়াতে ওই ১১টি ভবন ছেড়ে নিজেদের পকেটের টাকায় ভাড়া করে ক্লিনিক চালানোর চিন্তাভাবনা চলছে। সরকারের কাছে তাদের অনুরোধ এসব ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন বরাদ্দ দেয়া হোক। উপজেলার আটিয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আবু হানিফ বলেন, তার ক্লিনিকের দেয়ালগুলো ফেটে গেছে। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়। আকাশে মেঘ দেখলে অথবা ঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিলে তারা ক্লিনিক ছেড়ে পাশের বাড়িতে বা কখনও বাজারে গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রতিমাবংকী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি জেসমিন আক্তার বলেন, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করায় ক্লিনিকের অদূরে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ক্লিনিক চালাতে হচ্ছে। তবে ভাড়া নিজেদের বেতনের টাকা দিয়ে পরিশোধ করা হচ্ছে। আড়াইপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ও সাধারণ সম্পাদক আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ৩৭টি ক্লিনিকেই বিদ্যুত সংযোগ নেই। প্রতিদিন ওই ক্লিনিকে বসে তাদের তথ্য পাঠানো হয়। বিদ্যুত না থাকায় ল্যাপটপ চলে না। প্রচ- গরমে কাজ করতে হয়। সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, উপজেলার কোন কমিউনিটি ক্লিনিকে বিদ্যুত সংযোগ নেই। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুত সংযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে ও নতুন ভবনের বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে প্রতি মাসে চিঠি দিয়ে জানানো হচ্ছে।
×