ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রফতানির তালিকায় পাট পাতার ‘চা’

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৬ অক্টোবর ২০১৯

 রফতানির তালিকায়  পাট পাতার ‘চা’

সোনালি আঁশ খ্যাত পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট পাট বাংলাদেশের মাটিতে-ই জন্মে। এক সময়ে এটি ছিল পৃথিবীর একমাত্র অর্থকরী ফসল। নানামুখী কূটকৌশলে তা হারাতে বসেছিল। যড়যন্ত্রের নীলনকশায় বাংলার পাট দিয়ে লাভবান হচ্ছিল অন্যদেশ। কিন্তু সরকারের নানামুখী উদ্যোগে তা আবার ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে। পাট পাতা শাক হিসেবে খাবার প্রচলন বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এই পাট পাতা থেকে ‘চা’, অর্থাৎ এক ধরনের পানীয় উৎপাদন শুরু হয়েছে। সোনালি আঁশের জন্য খ্যাত পাটের বহুমুখী ব্যবহার এক দশক আগেও ছিল অকল্পনীয়। পাট এখন শাড়ি, পোশাক, ব্যাগসহ নানাবিধ পণ্য তৈরির উপকরণ হিসেবে বেশ সমাদৃত। বাঙালীর খাদ্য তালিকায়ও রয়েছে পাটশাক। এই শাক দু’ধরনের হয়, মিঠা ও তিতা। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যে নালিতাশাক বা পাটশাকেরও বর্ণনা মেলে। বাংলার শহর-গ্রাম, চায়ের দোকান, ফুটপাথ থেকে শুরু করে অফিস আদালত পাটের এমন গৌরবময় কথামালার শেষ নেই। তবে আলোচনায় শরীরে ক্লান্তি না আসলেও গলায় খুশখুশি ঠিক-ই শুরু“হয়। তখন এক কাপ চা বড় জরুরী হয়ে পড়ে আলোচকদের। ভয় নেই, যেহেতু পাট নিয়ে আলোচনা; গলা ঠিক রাখতে পাটেই পাবেন তার সমাধান। নিজ দেশের গবেষণায় তৈরি হওয়া পাটের চায়ে-ই পাবেন গলা খুশখুশি বন্ধের মতো পূর্ণ চায়ের তৃপ্তি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাট পাতা থেকে এই অরগানিক চা বা পানীয় উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তীতে ঢাকায় গুয়ার্ছি এ্যাকুয়া এ্যাগ্রো টেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান পাটের পাতা দিয়ে তৈরি অরগানিক চা জার্মানিতে রফতানি শুরু করে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইসমাইল হোসেন খানকে পাট পাতা থেকে চা তৈরি প্রকল্পের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে পাট পাতার ‘সবুজ চা’ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এ চায়ে ভেষজ গুণ থাকায় বিদেশে চাহিদা আছে। এর মধ্যেই ২০০ কেজি পাটের চা জার্মানিতে রফতানি করা হয়েছে। আরও ৩ হাজার কেজি রফতানির আদেশ পাওয়া গেছে। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, রক্তচাপ, কোলেস্টরল, লিভার সুরক্ষা ও জীবাণু সংক্রমণ রোধে পাটের চা বেশ কার্যকরী। এ চা ডায়বেটিক রোগীর রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে ও রোগীর বার্ধক্যজনিত অন্ধত্ব ও অন্যসব জটিল রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। পাটের চায়ে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা মানবদেহের দুর্বল কোষে ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে দেয়া না। এতে ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া রাসায়নিক বিষক্রিয়ার কারণে লিভার ড্যামেজ ও এবং জন্ডিস প্রতিরোধে সক্ষম এই চা। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধ করতে বয়োবৃদ্ধদের সাহায্য করে। এছাড়া আলসার ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কার্যকর পাটের চা। পাট থেকে চা পাতার তৈরি প্রণালীও খুব সহজ। পাট গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করতে হবে। পরে সে পাতা সূর্যের আলোতে শুকোতে সাইজ মতো গুঁড়া করে নিতে হবে। এরপর মধু বা চিনি দিয়ে এ চা পান করা যাবে। আবার এগুলো ছাড়াও পান করা যাবে। পাট শাকের সব ভেষজ গুণাগুণও পাট পাতা থেকে তৈরি হওয়া চায়েও থাকবে।
×