ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবন রক্ষা করা সবার দায়িত্ব ॥ সুলতানা কামাল

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৬ অক্টোবর ২০১৯

 সুন্দরবন রক্ষা করা সবার দায়িত্ব ॥ সুলতানা কামাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুন্দরবনকে রক্ষা না করতে পারাটা হবে আমাদের জন্য বড় ব্যর্থতা। এই বনকে রক্ষা করা সবার নৈতিক, সাংবিধানিক ও নাগরিক দায়িত্ব। ভারতের এনটিপিসি কোম্পানি নিজ দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ তারা সেই ধ্বংসাত্মক প্রকল্প এদেশে করে সুন্দরবন ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। ভারত বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করে সুযোগ-সুবিধা নেবে, আর বাংলাদেশের ওপর দূষণ ও দুর্ভোগ চাপিয়ে দিয়ে যাবে; এটা মেনে নেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছে সুন্দরবন জাতীয় রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা ডিআরইউ সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। ইউনেস্কোর ৪৩তম সভার সকল সুপারিশ বাস্তবায়ন, সুন্দরবনের পাশে রামপালসহ সকল শিল্প নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ ও সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা সম্পন্ন করার দাবিতে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে সকল সুযোগ-সুবিধা যেত পশ্চিম পাকিস্তানে আর শোষণ হতো পূর্ব পাকিস্তান, যত ক্ষতিকর প্রকল্প হতো পূর্ব পাকিস্তানে। তেমনিভাবে বাংলাদেশে যত ক্ষতিকর প্রকল্প তা যৌথভাবে করছে ভারত। সেটা করতে যে পণ্য ব্যবহৃত হবে তা হতে হবে ভারতীয়। এবং সমস্ত সুযোগ-সুবিধাও নিয়ে যাবে ভারত। তিনি বলেন, রামপালের প্রকল্প নির্মাতা ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি তাদের নিজ দেশে সব কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প স্থগিত করেছে। তার বদলে তারা গুজরাটে বিশ্বের বৃহত্তম সৌরশক্তি পার্ক স্থাপনের জন্য ২৫ হাজার কোটি রুপী বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকটি রাজ্যের কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র অর্ধদিবস বন্ধ রাখার কথাও জানিয়েছে। অথচ ওই একই প্রতিষ্ঠান প্রবল গণআপত্তির মুখেও বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুত তৈরিতে পিছপা হচ্ছে না। এটি নিঃসন্দেহে একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন ডবল স্ট্যান্ডার্ড আচরণ। অনুষ্ঠানে বক্ততায় সংগঠনের সদস্য সচিব ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, আগামী ৪৪তম সভায় ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের কাজে সন্তুষ্ট না হলে সামনের বছরই আবার ‘সুন্দরবন বিপদাপন্ন ঐতিহ্য’ তালিকায় চলে যেতে পারে। যা হবে আমাদের এই বন, জনগণ ও দেশের জন্য অযোগ্যতা, ব্যর্থতা, দুঃখজনক, লজ্জাকর ও অপমানজনক একটি বিষয়। জাতি হিসেবে এটাকে কোনভাবেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। রামপাল ও অন্যান্য কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের প্রবল বিষাক্ত কার্বনভিত্তিক ধোঁয়া ও তরল বর্জ্য বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে চলমান জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখবে। বিশ্ব ১২ বছর আগে যে দূষণ হয়েছিল তার ফলে এখন পৃথিবী এত উত্তপ্ত হয়েছে। জাতিস্ংেঘর মহাসচিব সম্প্রতি বিশ্বের বর্তমান অবস্থাকে ‘জলবায়ু জনিত জরুরী অবস্থা’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। আরও একযুগ পরে এর পরিস্থিতি হবে ভয়ঙ্কর ও পরিবর্তনের অযোগ্য। রামপালের মতো কয়লা প্রকল্পসমূহই এর জন্য দায়ী হবে। অতএব রামপালসহ সব কয়লা প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, এটি দায়িত্ব।
×