ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চা উৎপাদনে বাংলাদেশের বিশ্ব রেকর্ড

প্রকাশিত: ১০:১২, ৬ অক্টোবর ২০১৯

 চা উৎপাদনে বাংলাদেশের বিশ্ব রেকর্ড

চৌধুরী নীহারেন্দু হোম, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) ॥ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং চা শিল্পে সরকারের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধনের ফলে গত বছরের চেয়ে এবার দেশে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। শুধু দেশে নয়, বিগত জুলাই মাস পর্যন্ত বিশ্বের চা উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে সবার ওপরে। তাই এ বছরের চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ মিলিয়ন কেজি। বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই) ও বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাওয়াতে মৌলভীবাজার জেলা তথা সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলো ভরে গেছে সবুজে সবুজে। দু’হাত ভরে পাতা তোলার কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। প্রায় ২৪ ঘণ্টাই চলছে চায়ের ফ্যাক্টরি। এতে সাশ্রয় হয়েছে সরকারের ফরেন কারেন্সি। আর উৎপাদন বাড়লে আবারও রফতানি হবে দেশের চা। অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. কে এম রফিকুল হক জানান, এ বছর বাংলাদেশের এই রেকর্ড উৎপাদন বিশ্বের চা উৎপাদনকারী দেশগুলোকে তাক লাগিয়েছে। এ বছর এই সময়ে আনুপাতিক হারে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রে চায়ের উৎপাদন কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর উৎপাদন আশার সঞ্চার জাগিয়েছে। অধিক চা উৎপাদনকারী দেশ শ্রীলঙ্কা জুলাই পর্যন্ত গতবছরের তুলনায় বেড়েছে মাত্র ০.৯৫%, কেনিয়া কমেছে ৮.৩৮%। গতবছরের চেয়ে চলমান বছরের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৮.৫৪% বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। নিকটতম অবস্থানে রয়েছে ভারত ৫.৭৬% আর এ উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৯০ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে তার ধারণা। এম আর খান, কেরামত নগর ও নন্দ রানী চা বাগানের মালিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মৌসুমের শুরু থেকে চায়ের উপযোগী বৃষ্টিপাত, প্রয়োজনীয় সূর্যের আলো এবং অনুকূল আবহাওয়া ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ফলে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে। এ বছর উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট অঞ্চলের ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান জি এম শিবলী জানান, এসব চায়ের দুই-তৃতীয়াংশ উৎপাদন হয় মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে। অনুকূল আবহাওয়া না থাকাসহ নানা জটিলতায় বিগত দুই বছর চায়ের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা বোর্ডের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে চলমান বছরে উৎপাদন বাড়তে থাকে। অনুকূল আবহাওয়া বজায় থাকলে গতবছরের উৎপাদন ৮২.১৩ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে এ বছর ডিসেম্বরে ৯০ মিলিয়ন কেজির লক্ষ্যমাত্রাও ক্রস করবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানান, শুধু উৎপাদন বৃদ্ধি নয় এ বছর চায়ের গুণগত মানও ভাল হচ্ছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৫৩ মিলিয়ন কেজি আর গত বছর এই সময়ে ছিল ৪২ মিলিয়ন কেজি। বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স এ্যান্ড প্লান্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জহর তরফদার জানান, উৎপাদিত এ চায়ের নিলাম এখন সরাসরি শ্রীমঙ্গলে হওয়াতে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে না। আর গুণগত মান ঠিক রেখে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা গেলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে চায়ে আসবে স্বর্ণযুগ। এদিকে চায়ের উৎপাদন ভাল হওয়ায় খুশি চা শ্রমিকরাও। শ্রমিকরা জানান, তাদের নিরিখ/ হাজরি ২৪ কেজি। কিন্তু তারা পাতা তুলছেন ৩৫ থেকে ৭০/৮০ কেজি পর্যন্ত। এতে তারা অতিরিক্ত আয় করছেন।
×